২২টি জুনিয়র হাইস্কুল পড়ুয়াশূন্য বন্ধ হতে চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানশিক্ষায় এগিয়ে থাকা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ২২টি জুনিয়র হাইস্কুল পড়ুয়াশূন্য! পাশাপাশি চলতি বছরে জেলার ৫০টির বেশি জুনিয়র হাইস্কুলে ক্লাস ফাইভে এখনও কোনও পড়ুয়া ভর্তিই হয়নি…
২২টি জুনিয়র হাইস্কুল পড়ুয়াশূন্য বন্ধ হতে চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
শিক্ষায় এগিয়ে থাকা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ২২টি জুনিয়র হাইস্কুল পড়ুয়াশূন্য! পাশাপাশি চলতি বছরে জেলার ৫০টির বেশি জুনিয়র হাইস্কুলে ক্লাস ফাইভে এখনও কোনও পড়ুয়া ভর্তিই হয়নি। ফলে পড়ুয়াশূন্য ওইসব স্কুলে এবং হাতে গোনা কয়েকজন পড়ুয়াকে নিয়ে ৫০টি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বসে বসে বেতন তুলছেন। এমনকী, ছাত্রছাত্রী না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেরা পালা করে স্কুলে আসছেন। সপ্তাহে দু’-তিনদিন করে তাঁরা হাজিরা দিয়ে দায় সারছেন। স্কুলে শিক্ষার্থী না থাকায় কোনওরকম নজরদারিও নেই। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুভাশিস মিত্র বলেন, পড়ুয়ারা কিছু সমস্যার কারণে জুনিয়র হাইস্কুলের পরিবর্তে নিকটবর্তী হাইস্কুল এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হচ্ছে। তাই এমন ঘটনা ঘটছে।
শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকর করতে গিয়ে জেলায় জেলায় প্রচুর জুনিয়র হাইস্কুল খোলা হয়েছিল। উচ্চ প্রাথমিকে (পঞ্চম থেকে অষ্টম) গ্রামীণ এলাকায় পড়ুয়াদের বাড়ি থেকে দু’কিলোমিটার এবং শহরে এক কিলোমিটারের মধ্যে জুনিয়র হাইস্কুল খোলা হয়। ২০১৪-’১৫ সাল থেকে ওইসব স্কুল চালু হয়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট জুনিয়র হাইস্কুলের সংখ্যা ৩২৬। কিন্তু, বেশিরভাগ জায়গায় দু’জন শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন। মাত্র দু’জন শিক্ষক শিক্ষিকার পক্ষে একসঙ্গে চারটি শ্রেণির ক্লাস নেওয়া সম্ভব নয়। যেকারণে পঠনপাঠনে সমস্যা হয়। পড়াশোনা ঠিকমতো না হওয়ায় অভিভাবকরা ওইসব স্কুল থেকে পড়ুয়াদের নিকটবর্তী মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি করে দিচ্ছেন।
২০১৪ সালে ময়না থানার বাকচা পঞ্চায়েতের গোড়ামহাল জুনিয়র হাইস্কুল চালু হয়। দু’জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং একজন অশিক্ষক কর্মী আছেন। গত বছর স্কুলে চারজন পড়ুয়া ছিল। ২ জানুয়ারি থেকে পড়ুয়াশূন্য ওই স্কুল। এবছর একজনও ভর্তি হয়নি। শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীরা সপ্তাহে দু’দিন পালা করে আসেন। স্কুলের টিচার ইন-চার্জ জয়দেব মাইতি বলেন, এই মুহূর্তে স্কুলে একজনও পড়ুয়া নেই। আমরা চাই, স্কুলটি চালু থাক। পড়ুয়া না এলে আমরা কী করব? পরিকাঠামোগত সমস্যা এবং পর্যাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা না থাকায় জুনিয়র হাইস্কুলগুলি মার খাচ্ছে।
শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে শিউড়ি জুনিয়র হাইস্কুল ২০২২ সাল থেকে ছাত্রশূন্য। এবছরও কেউ ভর্তি হয়নি। অথচ, দু’জন শিক্ষক বসে বসে মাইনে পাচ্ছেন। ওই ব্লকের সোয়াদিঘি জুনিয়র গার্লসে দু’জন শিক্ষিকা আছেন। কিন্তু, পড়ুয়া সংখ্যা শূন্য। এবছর থেকেই ওই জুনিয়র গার্লস ছাত্রীশূন্য হয়ে গিয়েছে। তমলুক গ্রামীণ চক্রের বিদ্যালয় পরিদর্শক অরুণাভ হাজরা বলেন, পড়ুয়া না থাকা স্কুলে ছাত্রছাত্রী আনার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। এজন্য নিকটবর্তী হাইস্কুল কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল থেকে কয়েকজন পড়ুয়াকে আনা যায় কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে। শুধু তমলুক কিংবা ময়না নয়, গোটা জেলায় এরকম অনেক জুনিয়র হাইস্কুল পড়ুয়াশূন্য হয়ে গিয়েছে। কয়েকটিতে তালা পড়েছে। আবার কয়েকটি স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যান। কিন্তু পড়ুয়া না থাকায় ক্লাস হয় না। মিড ডে মিল নেই। ক্লাস শেষের ঘণ্টার আওয়াজ নেই। স্টাফ রুমে বসে থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির জেলা সম্পাদক স্বপন ভৌমিক বলেন, জুনিয়র হাইস্কুলে পরিকাঠামো ঠিকঠাক নেই। ছাত্রছাত্রী ভর্তি না হওয়ার জন্য প্রশাসন দায়ী। পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ হলে এই সমস্যা মিটে যাবে।
No comments