নিম্নচাপজনিত বর্ষণের জেরে ফের ঘাটাল বন্যার কবলে ; সংবাদদাতা - নারায়ণ চন্দ্র নায়ক: আগামী নভেম্বর মাস থেকে মাস্টার প্ল্যানের অন্তর্গত শিলাবতী,কংসাবতী সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভিন্ন নদী ও খাল সংস্কারের দাবী।সম্প্রতিক নিম্নচাপজনিত বর্…
নিম্নচাপজনিত বর্ষণের জেরে ফের ঘাটাল বন্যার কবলে ;
সংবাদদাতা - নারায়ণ চন্দ্র নায়ক: আগামী নভেম্বর মাস থেকে মাস্টার প্ল্যানের অন্তর্গত শিলাবতী,কংসাবতী সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভিন্ন নদী ও খাল সংস্কারের দাবী।সম্প্রতিক নিম্নচাপজনিত বর্ষণ এবং সেই বর্ষণের জেরে ব্যারেজ থেকে অত্যধিক পরিমাণে জল ছাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ঘাটালের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক এক বিবৃতিতে বলেন,চলতি বছরে ঘাটালের এই বিস্তীর্ণ এলাকা ৬ বারের পর ৭ বার বন্যার কবলে পড়তে চলেছে। নারায়নবাবু কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারকেই এজন্য দায়ী করে বহু প্রতীক্ষিত মাস্টার প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত শিলাবতী,কংসাবতী নদী সহ সংশ্লিষ্ট নদী ও নিকাশী খাল সংস্কারের দাবী জানান।
এক সাক্ষাৎকারে নারায়নবাবু বলেন,অর্ধশতাব্দীরও অধিকসময় ধরে শিলাবতী,কংসাবতী,কেঠিয়া,কুবাই,তমাল,পারাং, বুড়িগাং,দোনাই ইত্যাদি নদীগুলির বিস্তীর্ন অববাহিকা অঞ্চলের দ্রুত জলনিকাশী ও বন্যা দূরীকরণের মাধ্যমে পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ১৩ টি ব্লক, ৫ টি পৌরসভার প্রায় ১৬৫০ বর্গ কিমি এলাকার কৃষি-শিল্প-বাণিজ্য-রাস্তাঘাট প্রভৃতির সুস্থায়ী ও অব্যাহত বিকাশ এবং সাধারণ জনজীবনকে সচল রাখার এক ন্যায্য দাবী নিয়ে এলাকার হাজার-হাজার ভুক্তভোগী মানুষ আন্দোলন করে আসছেন। পরবর্তীকালে স্বাধীনতার বয়স বাড়ার সাথে সাথে কি কেন্দ্র,কি রাজ্য সরকারগুলোর উদাসীনতায় আজো ওই সমস্যার সমাধান তো হয়নি, বরং তা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। নদীগুলির জলবহন করার ক্ষমতা বর্তমানে প্রায় নেই বললেই চলে। বাঁকুড়া,পুরুলিয়া,ঝাড়খন্ড প্রভৃতি এলাকার মালভূমি অঞ্চলে বৃষ্টি হলেই উল্লিখিত নদীগুলির জল ঝাঁপিয়ে দুই মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের ঘর-বাড়ী সহ রাস্তা-ঘাট,হাট-বাজার,স্কুল-কলেজ ইত্যাদি জনপদগুলিকে সাময়িক অচল করে জনজীবনকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,এই বিস্তীর্ণ এলাকার বানভাসি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা স্থায়ীভাবে নিরসন করার জন্য ১৯৭৯ সালে "ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান" ভারত সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছিল এবং ১৯৮২ সালে তা কার্যকর করার জন্য তৎকালীন রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার শীলাবতীর পাড়ে শিল্যান্যাস করে। কিন্তু ওই উদ্বোধনের পরই কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তার সমাপ্তি ঘটে,বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কোন কাজ তারা করে নি। প্রায় তিন দশক পর সেই সরকার বিদায় নেয়। কিন্তু পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয় নি। এই অবস্থায় বানভাসি মানুষজনকে নিয়ে দলমত নির্বিশেষে গঠিত "ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি" মাস্টার প্ল্যান রূপায়নের দাবীতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকারের মাস্টার প্ল্যান কার্যকরী করার ব্যাপারে অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে কোন উদ্যোগ না নিলেও রাজ্য সরকারের টনক নড়ে। তারা আন্দোলনের চাপে ঘাটালের বন্যা দূরীকরণের জন্য এ বছরের(২০২৫-২৬)বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করতে বাধ্য হয়। তারা নানা কথার ফুলঝুরি ও ঢক্কানিনাদ এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও তা দ্রুত রূপায়ণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা সরকারী দীর্ঘসূত্রিতা ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গৃহীত কর্মসূচিগুলিকে রূপায়িত না করার ফলে বন্যা দূরীকরণের প্রথম কাজই যে নদী পুনঃখনন,যার মাধ্যমে জলনিকাশ,তারা তা না করে,অন্য অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ আনুষঙ্গিক কাজে নিজেদের ও প্রশাসনকে নিয়োজিত করতে থাকে। ফলে বিস্তীর্ণ নদী অববাহিকা অঞ্চলে বিশেষ করে শিলাবতী নদী এলাকায় বাজেটে অর্থ বরাদ্দের ৭ মাস পরেও কাজ না হওয়ায় চলতি বছরে ৭ বার বন্যার কবলে পড়ল।
No comments