রাজ্যে প্রথম এলএনজি টার্মিনাল হলদিয়ায়, বিনিয়োগ ২৬০ কোটি টাকা, আগ্রহী শিল্প সংস্থা
হলদিয়া ভাসমান লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল গড়ে উঠছে হলদিয়া বন্দরে। শনিবার হলদিয়ার শালুকখালিতে নতুন এলএনজি টার্মিনালের শিলান্যাস হয়ে…
রাজ্যে প্রথম এলএনজি টার্মিনাল হলদিয়ায়, বিনিয়োগ ২৬০ কোটি টাকা, আগ্রহী শিল্প সংস্থা
হলদিয়া ভাসমান লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল গড়ে উঠছে হলদিয়া বন্দরে। শনিবার হলদিয়ার শালুকখালিতে নতুন এলএনজি টার্মিনালের শিলান্যাস হয়েছে। ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে শালুকখালি সংলগ্ন হুগলি নদীর বুকে ওই প্রকল্প গড়বে দিল্লির একটি বেসরকারি সংস্থা। এদিন গুজরাটের ভাবনগর বন্দরে অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ওই প্রকল্পের ভার্চুয়াল শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, জল ও ডাঙা জমি মিলিয়ে ২৫একর এলাকা জুড়ে গড়ে উঠবে এলএনজি টার্মিনালের ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট। এজন্য আলাদা করে জমি অধিগ্রহণের দরকার নেই। বন্দরের নিজস্ব জমি ও নদীর বুকে ভাসমান প্রকল্প তৈরি হবে। হলদিয়া বন্দর তথা পূর্ব ভারতে প্রথম এধরনের প্রকল্প গড়ে উঠতে চলেছে। বিদেশ থেকে জাহাজে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস অর্থাৎ এলএনজি এনে তা হলদিয়া সহ রাজ্যের বিভিন্ন শিল্প সংস্থাকে সরবরাহ করা হবে। শিল্পে 'ক্লিনার ফুয়েল' বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে এলএনজি ব্যবহৃত হবে। ন্যাশনাল গ্যাস গ্রিডের মাধ্যমে শিল্পকে সরবরাহ করা হবে ওই গ্যাস। শালুকখালির ওই জমিতে প্রায় ১৫ বছর আগে
হলদিয়া বন্দরের ডক-টু প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছিল। তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা হলদিয়ার হাতিবেড়িয়া থেকে ঘটা করে শিলান্যাস করেছিলেন। দেড় দশক ধরে টালবাহানার পর কয়েকমাস আগে ওই প্রকল্প বাতিল হয়েছে। ফের সেই জমিতে নয়া প্রকল্পের শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী। আগের প্রকল্পের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এদিন অনুষ্ঠানের সময়ই বন্দর আধিকারিকদের একাংশ নয়া প্রকল্প নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শালুকখালিতে বন্দরের ডক-টু প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য শিলান্যাস হয়েছিল। হলদিয়া পুরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডে শালুকখালিতে বন্দরের ১৬৩ একর জমি রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি সংস্থার কনসোর্টিয়াম যৌথভাবে ২০১২ সালে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে বিকল্প বন্দর ডক-টু প্রকল্প গড়তে এগয়। চারটি জেটি গড়তে ১৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি হয় এবং কেন্দ্রের অনুমোদন মেলে। ওই প্রকল্প বাতিল হয় বছর পাঁচেক পর। ফের আর একটি সংস্থা এগিয়ে আসে ছোট আকারে ওই প্রকল্প গড়তে। সেই বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেও পিপিপি মডেলে বন্দরের চুক্তি হয়। ২৭৩ কোটি টাকা খরচে প্রকল্প গড়ার জন্য ৭-৮ বছর ধরে টানাপোড়েন চলে। কিন্তু ডক-টু প্রকল্পের একটি ইটও গত ১৫ বছরে গাঁথা হয়নি।
ওই সংস্থাকে সম্প্রতি বন্দর কর্তৃপক্ষ খারিজ করেছে। এরপরই নতুন প্রকল্প গড়তে দ্রুত টেন্ডার ডেকে কার্যত জাহাজ মন্ত্রক শিলান্যাসের নির্দেশ দেওয়া হয়। বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) প্রবীনকুমার দাস বলেন, বন্দরে প্রথম এধরনের ভাসমান টার্মিনাল প্রকল্প গড়ে উঠছে। ২৬০কোটি টাকার প্রকল্প ২০২৭ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। প্রকল্প গড়ে উঠলে পূর্ব ভারতে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। দুর্গাপুর থেকে হলদিয়া পর্যন্ত গেইল যে ন্যাশনাল গ্যাস গ্রিড তৈরি করছে, টার্মিনালের মাধ্যমে আনা গ্যাস সেখানে পাঠানো হবে। এনভিনিয়র পেট্রডাইন লিমিটেড ও আমেরিকার অ্যাকসিলারেট গ্লোবাল অপারেশনস যৌথভাবে টার্মিনাল গড়ছে। ইনভিনিয়র এনার্জির চেয়ারম্যান মনীষ মহেশ্বরী এদিন হলদিয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, বন্দরে নাব্যতা সমস্যা রয়েছে ঠিকই, তবে শালুকখালিতে গভীরতা ৯মিটার রয়েছে। ফলে জাহাজ আসতে অসুবিধে হবে না। জার্মান সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করে বিনিয়োগ করছি। প্রথমে দেড় মিলিয়ন টন এলএনজি হ্যান্ডেলিং হবে বছরে। পরে তা বেড়ে ৩মিলিয়ন টন করা হবে। এদিন দুপুর গড়িয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল শিলান্যাসের আগেই শালুকখালির অনুষ্ঠান স্থল ছেড়ে ফিরে আসেন বন্দরের সিংহভাগ আধিকারিক ও কর্মীরা। এদিন শিলান্যাসে সাংসদ ও বিধায়ককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কেউই আসেনি। তবে নতুন প্রকল্পে কাজ পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয় যুবকরা। এদিন নতুন প্রকল্পের খবর পেয়ে স্থানীয়রা উৎসাহ নিয়ে ভিড় করেন অনুষ্ঠানে।
No comments