তমলুক কোর্টে গ্রেফতার চিটফান্ড সংস্থার কর্তা!তমলুক শহরে চিটফান্ড সংস্থার অফিস খুলে ৪০ কোটি টাকা প্রতারণা মামলায় জামিন নিতে এসে পুলিশের হাতে ধরা পড়ল একটি চিট ফান্ড সংস্থার কর্ণধার দীপঙ্কর মাইতি। তার বাড়ি পাঁশকুড়া থানার আটবেড়িয়া গ্…
তমলুক কোর্টে গ্রেফতার চিটফান্ড সংস্থার কর্তা!
তমলুক শহরে চিটফান্ড সংস্থার অফিস খুলে ৪০ কোটি টাকা প্রতারণা মামলায় জামিন নিতে এসে পুলিশের হাতে ধরা পড়ল একটি চিট ফান্ড সংস্থার কর্ণধার দীপঙ্কর মাইতি। তার বাড়ি পাঁশকুড়া থানার আটবেড়িয়া গ্রামে। নিজের চিটফান্ড সংস্থাকে সেবি অনুমোদিত এবং অশোকস্তম্ভ লাগানো বেশকিছু ভুয়ো নথি দেখিয়ে প্রতারণার জাল বিছিয়েছিল অভিযুক্ত। তমলুক শহরে পুরাতন ডিএম অফিসের পিছনে বিল্ডিংয়ে ঘরভাড়া নিয়ে ২০২২ সালে অফিস খুলেছিল দীপঙ্কর। মাসে চার শতাংশ সুদ ছাড়াও মুনাফা ভাগ করে দেওয়ার টোপ দিয়ে প্রায় আড়াই হাজার লোকের কাছ থেকে ৪০ কোটি টাকা তোলা হয়েছিল। এপর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ৪০টির বেশি অভিযোগ তমলুক ও পাঁশকুড়া থানায় জমা পড়েছে। সেসব মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ছিল। তারপরও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পদক্ষেপ নেয়নি বলে প্রতারিত আমানতকারী ও এজেন্টদের দাবি। শুক্রবার অভিযুক্ত দীপঙ্কর একজন আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে পুজো অবকাশকালীন তমলুক আদালতে জামিনের আবেদন জানাতে এসেছিল। আগাম খবর পেয়ে অপেক্ষায় ছিলেন প্রতারিত আমানতকারী ও এজেন্টরাও। দীপঙ্কর গাড়ি থেকে নামতেই তাকে ঘিরে ফেলে প্রতারিতরা। তারপর পাঁশকুড়া থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। শনিবার ধৃতকে আদালতে পেশ করে পুলিশ। তার চারদিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেন বিচারক।
দীপঙ্কর ওই চিটফান্ড সংস্থার ডিরেক্টর ছিল। তারমতো আরও কয়েকজন ডিরেক্টর থাকলেও মূলত দীপঙ্কর ও তার স্ত্রী ওই চক্রের কিংপিন বলে প্রতারিতদের দাবি। ২০২২ সালের ১ এপ্রিল পুরানো ডিএম অফিস সংলগ্ন দিলীপকুমার ঘোষের বাড়ি মাসিক ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়ায় নিয়ে চিটফান্ড সংস্থার অফিস খোলে দীপঙ্কর। মাসিক চার শতাংশ সুদ ছাডাও মুনাফার টাকা ভাগ দেওয়ার টোপ দেওয়া হতো। তার সংস্থা সেবি অনুমোদিত বলেও ধাপ্পা দিয়েছিল দীপঙ্কর। তার রিসার্চ টিম আছে এবং সেই টিম ওই সংস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরন্তর কাজ করে চলেছে বলেও মানুষকে গল্প শুনিয়ে প্রভাবিত করা হয়েছিল।
এভাবেই তমলুক শহরের স্টিমারঘাট এলাকার ক্যানসার আক্রান্ত ঊর্মিলা বেরা ১৭ লক্ষ টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছেন। আজ ঊর্মিলাদেবী নিজের ওষুধ কেনার টাকা পাচ্ছেন না। হলদিয়ার বড়বড়িয়া এলাকার শঙ্কর মাইতি ওই সংস্থায় টাকা রেখেছিলেন। এছাড়া অন্যদের থেকেও বিপুল টাকা সংগ্রহ করে রাখার পর প্রতারিত হয়ে মানসিক অবসাদে আত্মঘাতী হন। একইভাবে ওই সংস্থায় টাকা রেখে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় হলদিয়ার বাড়বাজিতপুরের নন্দলাল মাইতি এবং তমলুক শহরের আইনজীবী প্রফুল্ল বেরার। তাঁরা প্রত্যেকেই ওই সংস্থায় লক্ষ লক্ষ টাকা রেখে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।
নিজের বাড়ি ভাড়ায় দেওয়া ছাড়াও দিলীপবাবু ওই সংস্থায় ৪৬ লক্ষ টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছেন। হলদিয়ার তাপস দীক্ষিত জমি কেনাবেচার কারবার করেন। লোকজনের কথায় বিশ্বাস করে ওই সংস্থার ১৪ লক্ষ টাকা সর্বস্বান্ত। আজ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছেলের পড়াশোনা বন্ধ। নিজের একটি নতুন চার চাকার গাড়ি ছিল। সেটিও বাধ্য হয়ে বেচে দিয়েছেন।
শনিবার ধৃতকে তমলুক আদালতে পেশ করার সময় ঊর্মিলাদেবী, দিলীপবাবু, তাপসবাবু সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি সত্ত্বেও পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেনি। অনেকের লিখিত অভিযোগ পুলিশ গ্রহণ করেনি। প্রায় ৪০ কোটি টাকা প্রতারণা হলেও অভিযুক্তকে ধরার বিষয়ে পুলিশের হেলদোল ছিল না। শেষমেশ তমলুক আদালত চত্বর থেকে তাকে ধরে পুলিশ।
No comments