Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

দারিয়াপুরের এই মন্দিরটি “কপালকুণ্ডলা মন্দির

দারিয়াপুরের এই মন্দিরটি “কপালকুণ্ডলা মন্দির
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের নাম শুনলেই ভেসে ওঠে এক রহস্যঘন উপকূল, কাঁথির দারিয়াপুর। ইতিহাস আর সাহিত্য যেন এখানে একাকার। এই দারিয়াপুরেই…

 


দারিয়াপুরের এই মন্দিরটি “কপালকুণ্ডলা মন্দির


সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের নাম শুনলেই ভেসে ওঠে এক রহস্যঘন উপকূল, কাঁথির দারিয়াপুর। ইতিহাস আর সাহিত্য যেন এখানে একাকার। এই দারিয়াপুরেই আজও দাঁড়িয়ে আছে সেই বিখ্যাত কপালকুণ্ডলা মন্দির, যা পেয়েছে রাজ্য সরকারের হেরিটেজ তকমা। রসুলপুর নদীর পাড়ে অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে উপন্যাসের পটভূমি, বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতি এবং কাঁথির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। 

দারিয়াপুরে আজও স্থানীয়দের মুখে মুখে শোনা যায় কপালকুণ্ডলার গল্প। জরাজীর্ণ মূল মন্দিরের পাশে এলাকাবাসী আরও একটি ছোট কপালকুণ্ডলা মন্দির তৈরি করেছেন। যদিও মূল মন্দিরে বর্তমানে কোনও বিগ্রহ নেই, তবুও কালিপুজোর দিন ধূপধুনার গন্ধে ভরে উঠৈ পরিবেশ। এবছর পুজোর সময় স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে মন্দিরটিকে রঙিন আলোয় সাজিয়ে তোলা হবে। 

"পথিক, তুমি পথ হারাইছ? আইস।" — এই সংলাপ দিয়েই শুরু হয়েছিল বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়। বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলা উপন্যাসে নবকুমার নামের এক তরুণ এক রহস্যময়ী কণ্ঠে চমকে উঠেছিল। সেই কণ্ঠ ছিল কাপালিক পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলার। কাপালিকের বলির হাত থেকে নবকুমারকে রক্ষা করতে নিজের জীবন বিপন্ন করে তাকে মুক্তি দেয় কপালকুণ্ডলা। এই কাহিনির পটভূমিই কাঁথির দারিয়াপুর, যেখানে বঙ্কিমচন্দ্র বাস্তব অভিজ্ঞতার ছোঁয়া পেয়েছিলেন।

১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কাঁথির ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে দায়িত্ব নেন। সেই সময় কাঁথির প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল নেগুয়া অঞ্চলে। মাত্র নয় মাসের জন্য তিনি এখানে ছিলেন। এলাকাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, রহস্যময় নদীপাড় আর তন্ত্রসাধনার কাহিনি তাঁর মনে গভীর দাগ কাটে। এখানেই জন্ম নেয় কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের ভাবনা।

উপন্যাসে কাপালিক ছিলেন এক তান্ত্রিক, যিনি বালিয়াড়ির উপরে তন্ত্রসাধনা করতেন। সাধনার সিদ্ধিলাভের জন্য নবকুমারকে বলি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কপালকুণ্ডলা সেই বলির খড়্গ দিয়েই নবকুমারের বাঁধন কেটে দেয় এবং তাকে পালিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দেয়। বঙ্কিমচন্দ্রের এই কাহিনি শুধু প্রেম বা তন্ত্র নয়, মানবতার জয়গানও বটে।

উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৮৬৬ সালে, এবং এরপর থেকেই দারিয়াপুরের এই মন্দিরটি “কপালকুণ্ডলা মন্দির” নামে পরিচিতি পায়। তন্ত্রসাধনার জন্য আগে এখানে কোনও মন্দির ছিল না, কিন্তু সাহিত্যকীর্তির কারণে স্থানটি পেয়েছে ঐতিহাসিক ও রাজ্য সরকারের মর্যাদা।

আজও রসুলপুর নদীর হাওয়ায় ভেসে আসে কপালকুণ্ডলার স্মৃতি। বঙ্কিমচন্দ্রের কলমে অমর হয়ে থাকা এই কাহিনি কাঁথির দারিয়াপুরকে করে তুলেছে এক সাহিত্যিক তীর্থক্ষেত্র, যেখানে প্রতিটি ইট-পাথরের গায়ে মিশে আছে ইতিহাস, প্রেম আর উপন্যাসের গন্ধ।

No comments