মহিষাদল বাড় অমৃতবেড়িয়া নদী ভাঙ্গন বাঁধ পরিদর্শনে গেলেন জেলাশাসক- পূর্ণেন্দু!মহিষাদলের বাড় অমৃতবেড়িয়ায় পূর্বপল্লিতে কয়েক কোটি টাকা খরচে তৈরি রূপনারায়ণের বাঁধ এক মাসের মধ্যেই ধসে গেল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বাঁধে ধীরে ধীরে ধস …
মহিষাদল বাড় অমৃতবেড়িয়া নদী ভাঙ্গন বাঁধ পরিদর্শনে গেলেন জেলাশাসক- পূর্ণেন্দু!
মহিষাদলের বাড় অমৃতবেড়িয়ায় পূর্বপল্লিতে কয়েক কোটি টাকা খরচে তৈরি রূপনারায়ণের বাঁধ এক মাসের মধ্যেই ধসে গেল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বাঁধে ধীরে ধীরে ধস নামতে শুরু করে। সন্ধ্যা নাগাদ দুই-তিন ইঞ্চি ধস নামে। সন্ধ্যার পর সেটা এক ফুট হয়। রাত ৮টা নাগাদ প্রায় পাঁচ ফুট নদীবাঁধ বসে যায়। রাত ১২টা নাগাদ ৭০ফুট নদীবাঁধ একেবারে ১০ফুট বসে যায়। ওই ঘটনায় হইচই পড়ে যায়। উদ্বিগ্ন এলাকার মানুষজন গভীর রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নদীবাঁধে ভিড় করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বিজয়া সম্মিলনি উপলক্ষ্যে তমলুক শহরেই ছিলেন। তিনি বিষয়টি জানার পর বেশ কয়েকবার সেচদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে এই পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। রাতেই ঘটনাস্থলে যান সেচ দপ্তরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত সরকার, বিডিও বরুণাশিস সরকার, ডিএসপি(ডিইবি) শান্তব্রত সরকার এবং থানার ওসি। রাতভর বাঁধ মেরামতের কাজ চলে। শুক্রবারও পুরোদমে কাজ চলে। এদিন দুপুরে ঘটনাস্থলে যান জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী, হলদিয়ার মহকুমা শাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
শুক্রবার বাড় অমৃতবেড়িয়ায় পূর্বপল্লিতে নদীবাঁধের কাজ চলাকালীন ঘটনাস্থলে ছিলেন সেচদপ্তরের ওয়েস্টার্ন সার্কেল-৩ সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার মানস চক্রবর্তী ও এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রতবাবু। রূপনারায়ণ নদে মাঝ বরাবর চড়া পড়ে গিয়েছে। অথচ, অমৃতবেড়িয়ার দিকে নদীবাঁধ বরাবর নদীর গভীরতা বাড়ছে। সম্প্রতি সেচদপ্তরের পক্ষ থেকে এডিসিপি সার্ভে চালানো হয়েছিল। নদীর কোন এলাকায় কতটা গভীরতা সেটা জানতেই এই সার্ভে হয়। তাতে দেখা গিয়েছে, নদীর মাঝ বরাবর আস্ত চড়া। অথচ, নদীবাঁধ বরাবর নয় থেকে ১০ফুট পর্যন্ত গভীরতা রয়েছে। এই তথ্য সেচ ও জল দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের চিন্তায় ফেলেছে। কারণ, আগামী দিনে নদীবাঁধ রক্ষা করাই ক্রমশ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তার উপর ঘটনাস্থল থেকে দু’কিলোমিটার দূরে দনিপুরে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের(এডিবি) আর্থিক সহায়তায় নন্দীগ্রাম জলপ্রকল্পের ইনটেক পয়েন্ট করা হচ্ছে। অর্থাৎ ওই জায়গা থেকে জল তোলা হবে। বাড় অমৃতবেড়িয়ার অদূরে ওই প্রজেক্ট চালু হলে নদীবাঁধ বরাবর জলের স্রোত আরও বাড়বে এবং তাতে নদীবাঁধ আরও সঙ্কটে পড়বে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২০২৪ সালে সেপ্টেম্বর মাসেও বাড় অমৃতবেড়িয়ায় নদীবাঁধে ভাঙন হয়েছিল। আসলে নদীবাঁধ বরাবর নদীর গভীরতা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ার কারণেই ওই এলাকায় বাঁধ বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে। নদীবাঁধ সুরক্ষার জন্য এক মাস আগে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ২১০০মিটার এলাকায় কাজ হয়েছে। নদীতে খাঁচা ফেলে কংক্রিটের কাজ হয়। কিন্তু, তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। এক মাসের মধ্যেই বাড় অমৃতবেড়িয়ার পূর্বপল্লি এলাকায় হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ল নদীবাঁধ। ধসে যাওয়া নদীবাঁধের উল্টো দিকে একটি বড় পুকুর রয়েছে। পুকুর থাকার কারণে সেখানে নদীবাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন রয়েছে। যে জায়গায় কাজ চলছে সেখানে যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে। ৫০ জনের বেশি শ্রমিক ওখানে কাজ করছেন।
শুক্রবার জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী ঘটনাস্থল থেকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা নাগাদ প্রায় ৭০ফুট নদীবাঁধ জুড়ে ধস নামে। গ্রামে জল ঢোকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। খবর পাওয়া মাত্র সেচ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার, বিডিও, ওসি সকলে ঘটনাস্থলে আসেন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু হয়। শুক্রবার সকাল থেকে কাজ চলছে। জল কমে যাওয়ার পর নদীবাঁধ স্থায়ীভাবে শক্তপোক্ত করার কাজ হবে। পাড় বরাবর নদীর গভীরতা বেশি। তাই এখানে স্রোত বেশি। গোটা বিষয়টি সেচদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা দেখছেন। সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তিনিও আসতে পারেন।

No comments