কাঁথির খুদে গায়ক অতনু মান্না রিয়েলিটি শোতে চ্যাম্পিয়ন হলেন
একবার একটি গানের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কাশ্মীর গিয়েছিলেন মান্না দে। তখন ভূস্বর্গে প্রবল ঠান্ডা। গলা ধরে আসছে আসমুদ্র হিমাচল কাঁপানো শিল্পীর। মঞ্চে উঠে ঠিকঠাক সুর বসাতে …
কাঁথির খুদে গায়ক অতনু মান্না রিয়েলিটি শোতে চ্যাম্পিয়ন হলেন
একবার একটি গানের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কাশ্মীর গিয়েছিলেন মান্না দে। তখন ভূস্বর্গে প্রবল ঠান্ডা। গলা ধরে আসছে আসমুদ্র হিমাচল কাঁপানো শিল্পীর। মঞ্চে উঠে ঠিকঠাক সুর বসাতে পারছিলেন না কোনও গানেই। স্বাভাবিকভাবেই বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাঁকে। তখন দর্শকাসন থেকে এক কাশ্মীরি যুবক নিজের মাথার টুপিটা খুলে পরিয়ে দেন মান্নাবাবুকে। সেই সঙ্গে আশ্বস্ত করেন এই বলে—‘দাদা, টুপিটা পরে নিন। মাথাটা গরম থাকবে। আর ঠান্ডা লাগবে না।’ সেই টুপি পরে কাশ্মীরবাসীকে সুপারহিট সব গান উপহার দিলেন মান্না দে।
কাঁথির খুদে অতনু মিশ্রকে অবিকল একটি মান্না-টুপি পরিয়ে দিয়েছিলেন নব্বই দশকের বলিউড স্টার জ্যাকি শ্রফ। সালটা ২০২৩। অতনু সম্ভবত ক্লাস ফাইভের ছাত্র। মুম্বইয়ের একটি রিয়ালিটি শো’তে মান্না দের গান গেয়ে রানার্স আপ হয়েছিল সে। সেই আনন্দে তার মাথায় টুপিটি পরিয়ে আদর করেছিলেন জ্যাকি। আর তখন থেকেই তামাম দেশ অতনুকে ডাকতে শুরু করে—‘ছোট্ট মান্না দে’ বলে।
সেই অতনু এখন সপ্তমের ছাত্র। ২০২৩ সালের চ্যাম্পিয়ন না হওয়ার আক্ষেপ কড়ায়-গণ্ডায় পুষিয়ে নিল রবিবার, কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। একটি বিনোদন চ্যানেলের সারেগামাপার রিয়ালিটি শো (২০২৪-২৫)-এর চূড়ান্ত পর্বে জুনিয়রদের মধ্যে সেরা হল অতনু। গ্র্যান্ড ফাইনালে সিনিয়র ও জুনিয়র বিভাগে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ১০ জন করে। জুনিয়র বিভাগে মান্না দে’র সেই বিখ্যাত গান ‘ফুল গেঁদুয়া না মারো’ গেয়ে সেরার শিরোপা ছিনিয়ে আনে অতুন। বিচারকমণ্ডলীর বিচারে সে চ্যাম্পিয়ন। এহেন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার নিজের শহর কাঁথি। আগামী ৯ মার্চ কাঁথিতে একটি র্যালির মধ্য দিয়ে অতনুকে একাধিক সংস্থার তরফে সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
শহরের শেরপুর এলাকায় বাড়ি অতনুর। পড়াশোনা করে কন্টাই মডেল ইন্সটিটিউশন। বাবা তপনকুমার মিশ্র বালিঘাই ফকিরদাস হাইস্কুলের বায়োলজির শিক্ষক। মা অসীমা মিশ্রপণ্ডা কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের নার্স। দিদি অতনুকা মিশ্র পোস্টঅফিসের কর্মী। দিদির গানের শিক্ষকের কাছেই অতনুর সারেগামা শেখা। দিদির সঙ্গেই নিয়ম করে রেওয়াজে বসত সে। পরে ছেলের গলা, প্রতিভা ও উৎসাহ দেখে মা-বাবা কলকাতার সঙ্গীত অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করেন। অতনুর সাফল্যে গর্বিত তপনবাবু। সোমবার তিনি বলছিলেন, ‘গানের প্রতি ওর অমোঘ টান আর অদম্য সাধনা আজ এই জায়গায় এনে দিয়েছে। জীবনে ও আরও বড় হোক। ঈশ্বরের কাছে এই কামনা করি।’
অতনুর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খবর জানাজানি হতেই তার বাড়িতে ভিড় করেন পড়শি থেকে স্বজনরা। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বহু প্রবীণ মানুষ। অতনু সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে জানিয়েছে, অবশেষে আমি চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এটা শুধু আমার একার জয় নয়। এটা আমার পরিবার-পরিজন, গানের স্যার, ম্যাডাম, জি বাংলার সকলের। আমার গান যাঁরা ভালোবাসেন, আমাকে সাপোর্ট করেন, তাদের সকলের জয়। আমাকে সারাজীবন এভাবেই ভালোবাসা দেবেন, যাতে আমি লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি।’
No comments