Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

একজন কেমিষ্ট এবং একজন কফি বিক্রেতা- আশিস কুমার পন্ডা

একজন কেমিষ্ট এবং একজন কফি বিক্রেতা-আশিস কুমার পন্ডা

শনিবারের সকাল থেকেই শহরের এক কফির দোকানে সেদিন ব্যস্ততার শেষ নেই। দোকানের মালিক তার কর্মচারীদের নিয়ে সারাদিন ধরে যত্ন সহকারে গ্রাহকদের সেবা করে চলেছেন। বিকাল হতে না হতেই তিনি একে…

 




একজন কেমিষ্ট এবং একজন কফি বিক্রেতা-

আশিস কুমার পন্ডা


 


শনিবারের সকাল থেকেই শহরের এক কফির দোকানে সেদিন ব্যস্ততার শেষ নেই। দোকানের মালিক তার কর্মচারীদের নিয়ে সারাদিন ধরে যত্ন সহকারে গ্রাহকদের সেবা করে চলেছেন। বিকাল হতে না হতেই তিনি একেবারে  ক্লান্ত হয়ে পড়লেন এবং তার মাথা টিপটিপ করতে লাগলো। ঘড়ির কাঁটা এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে, তার মাথাব্যথাও বেড়ে চললো। রাত ন’টার পরে, গ্রাহকদের ভীড় কিছুটা কমলো বটে, কিন্তু তার মাথাব্যথা একেবারে অসহ্য হয়ে উঠলো। কর্মীদের কিছুক্ষণের জন্য দোকান সামলাতে বলে তিনি দোকান থেকে বেরিয়ে এসে খোলা হাওয়ায় কিছুক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন। কিন্তু মাথাব্যাথা কমার কোন লক্ষণ দেখা গেল না। অগত্যা রাস্তা পার হয়ে তিনি পরিচিত এক ফার্মেসিতে গিয়ে এক ব্যথানাশক বড়ি কিনে গিলে ফেললেন। এবার তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন, আর কিছুক্ষণের মধ্যে নিশ্চয়ই তার মাথাব্যথা সেরে যাবে! ফার্মেসি থেকে বেরিয়ে আসার সময়, তিনি সেলসগার্লকে উদ্দেশ্যহীনভাবে জিজ্ঞাসা করলেন, "আজ কেমিষ্ট কোথায়? তাকে  আজ কাউন্টারে দেখছি না!" মহিলা উত্তর দিলেন, "স্যার, তার খুব মাথাব্যথা হচ্ছিল, তাই একটু আগে তিনি আপনার কফির দোকানে যাওয়ার জন্যে বেরিয়ে গেলেন। তিনি বলেছিলেন, এক কাপ গরম কফি খেলে তার মাথাব্যথা সেরে যাবে।" কফির দোকানের মালিক হতবাক হয়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলেন। তার পরিচিত ধ্যানধারণার সম্পূর্ণ বিপরীতে এই ঘটনা তাকে বেশ অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিল। তিনি  কপাল কুঁচকে, বিড়বিড় করে বললেন, “ওহ, বুঝতে পারছি,” এবং তারপর নিঃশব্দে পিছন ফিরে হাঁটতে শুরু করলেন। তার চোখেমুখে গভীর চিন্তার ছাপ ফুটে উঠলো। এক কঠিন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে করতে তিনি তার দোকানে ফিরে গেলেন।  


এই গল্পের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কেমিষ্ট এবং কফির দোকানের মালিক- দুজনেই অতিরিক্ত কাজ এবং উত্তেজনার কারণে মাথাব্যথার শিকার হয়েছিলেন, যা তাদের কাজের পরিবেশে সচরাচর হয়েই থাকে। কিন্তু, মজার ব্যাপার হল, তাদের দুজনেরই হাতের কাছে মাথাব্যথা সারানোর উপায় ছিল; ওষুধের দোকানে কেমিস্টের পরিচিত অনেক রকমের পেনকিলার মজুদ ছিল এবং কফির দোকানের মালিকের কাছে হাতের কাছেই ছিল গরম কফি, যা হলো মাথাব্যথা সারানোর এক সুপরিচিত উপায়। কিন্তু, তা সত্বেও, তারা দুজনেই বাইরের সমাধানের উপর বিশ্বাস করেছিলেন। কেমিষ্ট গরম কফির  উপর ভরসা করলেন এবং কফির দোকানের মালিক ওষুধ খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।


এক নজরে, এই মানসিকতা অদ্ভুত মনে হতে পারে; মাথার যন্ত্রনা সারানোর জন্যে কেমিষ্ট কেন তার দোকানের ওষুধ ব্যবহার করলেন না, এবং কফির দোকানের মালিক কেন গরম কফি পান করলেন না? কিন্তু, একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবেন, আমরাও প্রায়ই ঠিক এইভাবেই আচরণ করে থাকি! যখন আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় জ্ঞান, সম্পদ এবং সরঞ্জাম মজুদ থাকে, তখনও বিভিন্ন কারণে আমরা বাইরের সমাধান খুঁজে বেড়াই। এর কারণ হলো:


•                 আমরা সম্ভবত নিজেদের বিশ্বাস করি না, তাই অন্যদের মতামতকে প্রাধান্য দিই।


•                 আমরা প্রায়ই অন্যদের অনুমোদনের দিকে তাকিয়ে থাকি, যা আমাদের ভরসা যোগায়।


•                 সমাজ আমাদের ছোটবেলা থেকে বাইরে থেকে উত্তর খুঁজে নিতে  শেখায়; তা স্কুল, মিডিয়া বা আমাদের আত্মীয় পরিজনদের মাধ্যমে হতে পারে!


•                 আমরা এতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি কারণ আমাদের কম প্রচেষ্টা করতে হয় এবং জবাবদিহি করতে হয় না।


দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের অনেকেই নিজেদের ভিতর লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনা এবং সম্পদ সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন নই। আমাদের অভ্যাস, মানসিক গঠন এবং বিভ্রান্তির কারণে, আমরা প্রায়ই নিজেদের শক্তিকে অবহেলা করি। সমস্যার সমাধান সবসময় যতটা দূরে বা জটিল মনে হয়, বাস্তবে তা নয়। আসল কথা হলো, বাইরের সমাধান খোঁজার আগে একটু থেমে এদিক ওদিক দেখে নেওয়া উচিত—সম্ভবত সমাধানের উপাদান আমাদের ভিতরে বা আমাদের চারপাশের সহজ জিনিসগুলির মধ্যে লুকিয়ে আছে!

No comments