কীভাবে সংকোটমোচন হনুমানজীর উপাসনা করলে বিপদমুক্তি ঘটে ও সার্বিক উন্নতিলাভ
আজ মঙ্গলবার, হনুমানজীর বার। শাস্ত্র মতে এই দিন হনুমানজীর পুজো করলে কাঙ্খিত ফল তাড়াতাড়ি লাভ করা যায়। সূর্যদেব ও কাশ্যপমুনির করুণায় বিভিন্ন শাস্ত্র পাঠ, অগ…
কীভাবে সংকোটমোচন হনুমানজীর উপাসনা করলে বিপদমুক্তি ঘটে ও সার্বিক উন্নতিলাভ
আজ মঙ্গলবার, হনুমানজীর বার। শাস্ত্র মতে এই দিন হনুমানজীর পুজো করলে কাঙ্খিত ফল তাড়াতাড়ি লাভ করা যায়। সূর্যদেব ও কাশ্যপমুনির করুণায় বিভিন্ন শাস্ত্র পাঠ, অগাধ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য লাভ করেছিলেন হনুমানজী। হনুমানের উপাসনায় জীবনে সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি নেমে আসে। কোনো ভক্ত যদি ভক্তি, নিষ্ঠা ও শ্রদ্ধার সহিত হনুমানজীর পুজো করে থাকেন তাহলে হনুমানজী প্রসন্ন হন এবং তাঁর মনের বাসনা পূর্ণ করেন। তবে হনুমানজী-কে সস্তুষ্ট করতে পুজোর সময় এই নিয়মগুলো অবশ্যই পালন করুন।
স্নান সেরে, বিশুদ্ধ চিত্তে, লাল বা কমলা রঙের পট্ট বস্ত্র পরিধান করে হনুমানজীর আরাধনা করুন। তাঁকে তুষ্ট করতে পারলে সমস্ত মনোবাসনা পূর্ণ হয়।
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সারাদিন নির্জলা উপবাস করুন। একান্ত না পারলে শুধু ডাবের জল খেতে পারেন। সূর্যাস্তের পর ফলমূল কিনলে তা হনুমানজীকে নিবেদন করা উচিত নয়। এক ছড়া (ছড়া ভাঙ্গা না হয়) কলা, তাতে যে কটাই থাক না কেন, তা কোনও মন্দিরে হনুমানজীকে নিবেদন করে, অথবা ঘরে বিগ্রহ কিংবা ফটোতে শ্রদ্ধা ও ভক্তি সহকারে নিবেদন করে প্রসাদ পাওয়া যেতে পারে। পেট ভরানোর জন্য কলাপ্রসাদ ছাড়াও অন্য যে কোনও ফল খেতে পারেন। তবে জলের পরিবর্তে অবশ্যই ডাবের জল খাবেন।
কমলা বা লাল রঙের সিঁদুর দিয়ে হনুমানজীর আরাধনা করলে তিনি তুষ্ট হন। বলা হয়, এই উপাদানে দেবতার পুজো করলে নাকি ধার দেনাও মিটে যায়। তাই কমলা বা লাল রঙের সিঁদুর দিয়ে পুজো করুন। বস্ত্রও দিতে পারেন, তবে সেটা হতে হবে লাল বা কমলা রঙের।
জেসমিন তেলের সঙ্গে সিঁদুর মিশিয়ে তা দিয়ে পবন-পুত্রের পুজো করলে তিনি তুষ্ট হন। হনুমানজীর সামনে জেসমিন তেলের প্রদীপ জ্বালানোও শুভ ৷
হনুমানজীর প্রিয় লাড্ডু দিয়ে পুজো করুন৷ তাঁর প্রসাদে লাড্ডু দিলে ভগবান প্রসন্ন হন৷ এতে গ্রহের ফেরও কেটে যায়।
সর্বশক্তিমানকে তুলসী পাতা নিবেদন করুন ৷ তিনি প্রসন্ন হবেন।
নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই মহাবীরের মূর্তি বা ফটো স্পর্শ করে প্রণাম করতে পারেন। এতে দোষের কিছু নেই।
প্রতি মঙ্গলবার স্নান করে হনুমানজীর পুজো করে হনুমান চালিশা এবং সংকটমোচন হনুমান অষ্টক পাঠ করলে মনের অন্দরে থাকা সমস্ত ভয় দূরীভূত হয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এর ফলে আপনি সমস্ত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে পারবেন।
বাধা অশান্তি গ্রহদোষ ও অশুভ আত্মার দৃষ্টি থেকে মুক্তি পেতে প্রতিটা ঘরের দরজায় (বাইরে থেকে) হনুমানজীর ছবি, দুর্ঘটনারোধে গাড়িতে (হনুমানজীর মুখ থাকবে রাস্তার দিকে), বিদ্যালাভের বাধায় ও অসম্ভব মানসিক অস্থিরতায় রুপোর অথবা মীনে জ্যোতিষার্ণব শ্রী সৌম্যজ্যোতি করা লকেট লাল কার দিয়ে গলায় (লকেট থাকবে হৃদয়ের কাছে), যে কোনও দুর্ঘটনা ও সঙ্কট থেকে রক্ষা পেতে হনুমানজির লকেট ধারণ করে হনুমানজীর পুজো করলে বিপদ কেটে যায়। তবে লকেট ব্যবহারের আগে অবশ্যই দেখে নেবেন, মহাবীরের ডান হাতে গদা আর বাম হাতে যেন পাহাড় থাকে। না হলে কোনও ফল লাভ হয় না।
নারায়ণ তথা বিষ্ণু কবচ ছাড়া একমাত্র হনুমানজীই পারেন মানুষকে সমস্ত দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা করতে।
যেখানে রামায়ণ গান অথবা পাঠ হয়, সেখানেই আলাদাভাবে একটা আসন রাখা হয়। মানুষের শ্রদ্ধাবনত বিশ্বাস, হনুমানজী অবশ্যই আসেন রামগুণকথা শুনতে। সেই জন্যই এই আসন পাতা।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে হনুমানজী দাঁড়িয়ে আছেন প্রবেশদ্বারে। জগন্নাথ মন্দিরের চারদিকে প্রবেশদ্বার আছে চারটি। পূর্বদিকে সিংহদ্বার, পশ্চিমে খাঞ্জাদ্বার, উত্তরে হস্তীদ্বার ও দক্ষিণে অশ্বদ্বার। অশ্বদ্বারে অশ্ব নেই, বাইরে জ্যোতিষার্ণব শ্রী সৌম্যজ্যোতি রয়েছে একটি হনুমানের প্রকাণ্ড মূর্তি। পবনপুত্র যোদ্ধার বেশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন জগন্নাথ মন্দিরকে সমুদ্রের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য।
মন্দিরের সিংহদ্বারের দক্ষিণ দিকে জগন্নাথের পতিতপাবন মূর্তি, এর বাম দিকে রয়েছেন সিদ্ধ হনুমান ও রাধাকৃষ্ণ।
হনুমান মন্দিরের আশপাশের জায়গা প্রেতপিশাচের প্রভাব মুক্ত থাকে। মহাবীর স্বয়ং দুর্ঘটনারোধক। তাই ভারতের বিভিন্ন তীর্থ পথে রয়েছে হনুমান মন্দির।
পঞ্চপাণ্ডবের বনবাসকালের ঘটনার প্রেক্ষিতে গন্ধমাদন পর্বতে চলার পথে ভীম এক জায়গায় দেখেন, একটি রুগ্ন বানর শুয়ে আছে পথ আটকে। তখন পথে ছেড়ে দিতে বলে একটু গর্বের সঙ্গে বলেন তিনি অমিত বলশালী।
বানর তখন তাঁর লেজটি সরিয়ে দিয়ে নিজের পথে করে এগিয়ে যেতে বলেন ভীমকে। কিন্তু ভীম তাঁর ল্যাজ কিছুতেই তুলতে পারলেন না। হনুমান তখন নিজের পরিচয় দিতে শ্রদ্ধায় ভীম পবনপুত্র এই অগ্রজ প্রণাম করেন। এ সময় হনুমান সাগর লঙ্ঘনের সময়কার মূর্তি দেখান ভীমের অনুরোধে। আলিঙ্গন করে কথা দেন কুরুক্ষেত্রে অর্জুনের রথের উপরে বসে শত্রুসৈন্য নিধন করবেন হুঙ্কার দিয়ে। সে কথা রক্ষা করে পাণ্ডবদের যুদ্ধসংকট থেকে রক্ষা ও সংকটমোচন করেছিলেন মহাবীর সংকটমোচনজী।
হনুমানজীর চরিত্র ও চারিত্রিক গুণাবলী সবচেয়ে বেশি জানা যায় রামায়ণ থেকে। শ্রীরামচন্দ্রের পরমভক্ত ছিলেন হনুমান। তাঁর প্রতি আনুগত্য, অগাধ ভক্তি, চারিত্রিক দৃঢ়তা মনুষ্যজাতির ইতিহাসে হয়ে আছে অবিস্মরণীয়।
অঞ্জনাপুত্রের ইষ্টনিষ্ঠা বিস্ময়কর। ইষ্টনিষ্ঠা শব্দের অর্থ একজনকে বা একটি লক্ষ্যবস্তুকে ধরে রাখা। কোনও কারণেই তা থেকে বিচ্যুত না হওয়া। যেমন হনুমানজি ও প্রেমিককবি গোস্বামী তুলসীদাসের রাম ছাড়া আর কিছুই ভাবার ছিল না তাঁদের।
কালীঘাটের কালী, শ্যামনগরের (মূলাজোড়) কালী দেখেও মন তাতে এতটুকুও আকর্ষিত হয়নি বামাক্ষেপা বাবার। তারাপীঠের তারা মা তাঁর একান্ত আপন, অন্তরের পরমধন। অন্য কোনও দেবদেবীই স্থান পায়নি হৃদয়মনে। একে বলা হয় ইষ্টনিষ্ঠা। মোটের উপর এক-এ নিবেদিত হওয়া।
বিভিন্ন ঈশ্বরমুখী বিক্ষিপ্ত মনের মানুষের মন একমুখী ঈশ্বর চিন্তায় আপ্লুত হয় একমাত্র মহাবীর উপাসনায়।
সূর্যদেব ও কশ্যপমুনির করুণায় বিভিন্ন শাস্ত্র পাঠ, অগাধ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য লাভ করেছিলেন হনুমানজি। এঁর উপাসনায় বিদ্যালাভের বাধা দূর হয়। কালক্রমে জ্ঞানলাভ হয় বিভিন্ন শাস্ত্র পুরাণে।
শক্তি, বিদ্যা, বিনয়, দক্ষতা, সংস্কৃতি, আনুগত্য, উপস্থিত বুদ্ধি, প্রচেষ্টায় সফলতা, ধর্মে অনুরাগ, ত্যাগ, ভক্তি, অগাধ বিশ্বাস, শরণাগতি, অনুপ্রেরণা, অন্যের মঙ্গল করার ইচ্ছা জীবনের বিনিময়ে, অফুরন্ত সাহস, উদারতা, এইসবই হনুমানজীর সহজাত ও রক্তগত গুণ। এইসবই সহজে নয়, অনায়াসে ও অতি সহজে লাভ করা যায় মহাবীরজির শরণাগত হলে, নিত্য উপাসনায়।
No comments