ভীষ্ম পঞ্চক ব্রত হিন্দু ধর্মে কার্তিক মাসকে বিশেষ মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মাসে লক্ষ্মী পূজা থেকে শুরু করে দামোদর ব্রত পালন করা হয় এবং আরও অন্যান্য ব্রত পালনের পাশাপাশি ভীষ্ম পঞ্চক ব্রতর কথাও বলা হয়েছে। গরুড় পুরান অনুস…
ভীষ্ম পঞ্চক ব্রত হিন্দু ধর্মে কার্তিক মাসকে বিশেষ মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মাসে লক্ষ্মী পূজা থেকে শুরু করে দামোদর ব্রত পালন করা হয় এবং আরও অন্যান্য ব্রত পালনের পাশাপাশি ভীষ্ম পঞ্চক ব্রতর কথাও বলা হয়েছে। গরুড় পুরান অনুসারে এই ব্রতর কথা উল্লেখ রয়েছে, একাদশীর দিন থেকে শুরু হয় এই ব্রত পালন।
কাহিনী অনুসারে আমরা সকলেই কম বেশি জানি যে ভীষ্ম যখন শর শয্যায় ছিলেন তখন তিনি বাসুদেবের (শ্রীকৃষ্ণ) কাছে প্রার্থনা করে এই ব্রত পালন করেছিলেন। শর শয্যাতেই রাজধর্ম, মোক্ষ ধর্ম, দান ধর্ম, কীর্তন করেন তিনি। আর ভীষ্ম এর সেই কীর্তন শুনেছিলেন পাণ্ডবরা। এমনকি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণও সেই কথা শুনেছিলেন।
ভীষ্ম পঞ্চক ব্রত পালন:
কার্তিক মাসে এই ব্রত পালন করলে সব ভক্তদের মনের ইচ্ছা পূরণ হয়। যাঁর যতটুকু সাধ্য রয়েছে সেই সাধ্য অনুসারে আরাধনা করলে শ্রীকৃষ্ণ খুব খুশি হয়ে থাকেন। এই কার্তিক মাসে যে কারণে মন্দিরে অথবা তুলসী তলায় সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালানোর কথা বলা হয় সেটার মূল উদ্দেশ্য হলো এই ব্রত পালন করার একটি অংশ।
এছাড়াও বলা হয় যে এই কার্তিক মাসে মাছ, মাংস, কলমি শাক, বরবটি, শিম, বেগুন, পটল, এই ধরনের সবজি এবং খাবার ইত্যাদি বর্জন করতে বলা হয়েছে যা খুবই শুভ ফলদায়ী।
তবে এর পরিবর্তে নিরামিষ খাবার এর মধ্যে রয়েছে আতপ চালের ভাত, ঘি, আলু, গোলমরিচ, পাকা পেঁপে, কাঁচকলা, বেতোশাক, মুগ ডাল, লাল আলু অথবা রাঙা আলু এই সমস্ত খাবার গুলি আপনি অনায়াসেই খেতে পারেন। এর পাশাপাশি পাঁচ দিন বাড়িতে কৃষ্ণ অথবা গোপাল বা বিষ্ণুর আরাধনা করুন ভক্তি ভরে। বিভিন্ন ধরনের ফল, মিষ্টি আর নারকেল নাড়ু দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের পূজা করুন, যেকোনো একদিন সিন্নি প্রসাদও দিতে পারেন।
ভীষ্ম পঞ্চক ব্রত পালন করার নিয়ম:
যদি উপবাসে থাকতে পারেন তাহলে তো খুবই ভালো এছাড়া যাঁদের বাড়িতে গোপাল রয়েছে তাঁরা একদিন গোপালের প্রিয় পদ রান্না করে নৈবেদ্য অথবা ভোগ হিসেবে নিবেদন করুন। যাঁদের আর্থিক অবস্থা খুবই ভালো রয়েছে তাঁরা যদি বস্ত্র দান করতে পারেন সে ক্ষেত্রে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়।
এই ব্রততে কিন্তু স্পষ্ট করে বলা হয়েছে সারাদিন উপবাসের কোন প্রয়োজন নেই। উপবাস করলে আপনি একটা সময় পরে গিয়ে কিছু খেতে পারেন। দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে না থেকে আপনি কিছু ফল আহার করে এই পূজা ভক্তি ভরে করতে পারবেন। সেই সঙ্গে পাঁচ দিন ঘি এর প্রদীপ জ্বালানোর কথাও বলা হয়েছে। সম্ভব হলে প্রতিদিন একটি করে পদ্মফুল শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করতে পারেন।
এছাড়াও এই শুভ মাসে এবং এই ব্রত পালনের মধ্যে গবাদি পশুকে খাওয়ানোর কথা বলেছেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। এমনকি ভীষ্মপঞ্চক ব্রততেও বলা হয়েছে কোন গবাদি পশুর মুখে এই মাসে এক টুকরো খাবার তুলে দেওয়ার জন্য, এর ফলে সমস্ত পাপ মুছে গিয়ে পূণ্য অর্জন হয়, মনের ইচ্ছা পূরণ হয়, তাছাড়া কার্তিক মাসের সংক্রান্তিতে হয় গরুর বিশেষ পূজা। বিশ্বাস করা হয় যে, এই সময় শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং গোয়ালঘর দেখতে আসেন, তাই গোয়াল ঘর গুলোকে সুন্দর করে সাজিয়ে গরুর পূজা করা হয়।
ভীষ্ম পঞ্চক ব্রত পালনের কিছু বিধি নিষেধ:
এই ব্রত পালনে যে সমস্ত ফলে প্রচুর বীজ রয়েছে যেমন ধরুন পিয়ারা, ডালিম, পেঁপে, শশা, এগুলি বর্জন করা উচিত। আলু, কাঁচকলা বা মিষ্টি আলু সেদ্ধ করে গ্রহণ করা যেতে পারে। স্বাদের জন্য সৈন্ধব লবণ ব্যবহার করতে পারেন। কাজুবাদাম, কিসমিস ও খেজুর গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে এই স্তরের ব্রত পালন করতে দুধ এবং দুগ্ধজাত কোন দ্রব্য গ্রহণ করা উচিত নয়। নারকেল ও নারকেলের জল গ্রহণ করা যেতে পারে।
তবে যাই হোক না কেন অধিকাংশ ভক্তগণ পূর্ণিমা থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত একাদশী ব্রত পালন করেন তাই ভীষ্ম পঞ্চক ব্রতর হবিষ্য তে মুগ ডাল অনুমোদিত হবে না। সকল প্রকার তেল কিন্তু পরিত্যাজ্য। যে খাবারগুলি খেতে পারেন সেগুলি নিচে দেওয়া হল:-
ঘি,
আতপ চাল,
সৈন্ধব লবণ,
পাকা কলা,
কাল শাক,
গম,
বার্লি।
যে খাবারগুলির কথা উল্লেখ রয়েছে:
আম,
কাঁঠাল,
নাবালী ফল,
কেয়া ব্যতীত সকল মূল,
পিপলি,হরিতকী,আমলকি,নারঙ্গ,ইক্ষু দ্রব্য (গুড় ছাড়া),ননীপূর্ণ গরুর দুধ।
যে দ্রব্য গুলি কার্তিক মাসে এই ব্রত পালন করার ক্ষেত্রে বর্জন করতে বলা হয়েছে:
মুগ ডাল,তিলের তেল,বেতো শাক,সাত্ত্বিক শাক,মূলো,জিরা,তেঁতুল।
এক্ষেত্রে একই কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, যে সমস্ত ভক্তরা এই ব্রত পালন করছেন তাঁদের কে প্রতিদিন গঙ্গা অথবা যে কোন পবিত্র নদী বা হ্রদে স্নান করতে হবে। যদি আপনার কাছাকাছি কোন পবিত্র নদী অথবা পুকুর না থাকে এবং যদি “গঙ্গা গঙ্গা গঙ্গা” এই মন্ত্র উচ্চারণ করতে পারেন তাহলে তাঁরা এই পবিত্র নদীতে স্নান করার সুফল লাভ করতে পারবেন যেকোনো পবিত্র নদী ও সরোবর অথবা হ্রদ বা সমুদ্রে স্নান করে। তাছাড়া ঠাকুর ঘরে থাকা গঙ্গাজলের কয়েক ফোঁটা স্নানের জলে মিশিয়েও আপনি ঘরেতেই এই পূণ্য স্নান করতে পারবেন।
৫ দিন ভগবানের আরাধনা:
প্রথম দিন ভগবানের চcরণে অবশ্যই পদ্মফুল অর্পণ করতে হবে।
দ্বিতীয় দিন শ্রী শ্রী বিগ্রহের উরুতে বেল পাতা অর্পণ করতে হবে।
তৃতীয় দিন ভগবানের নাভি দেশে গন্ধ দ্রব্য অর্পণ করতে হবে।
চতুর্থ দিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাঁধে জবা ফুল করতে হবে এবং
পঞ্চম দিনে ঈশ্বরের মাথায় মালতি ফুল নিবেদন করতে হবে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, যদি কখনো দুটি তিথি একত্রে পড়ে যায় তাহলে ঐদিন দুই দিনের উদ্দিষ্ট ফুল গুলো একই দিনে ঈশ্বরের নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট জায়গায় নিবেদন করতে পারেন। যদি আপনার কাছে এই সমস্ত সবগুলি ফুল না থেকে থাকে তবে ভগবানের নির্ধারিত স্থানে নির্ধারিত ফুলগুলি আপনি মনে মনে কল্পনাও করে ভক্তি ও নিষ্ঠা ভরে নিবেদন করতে পারেন, এতেই ঈশ্বর সন্তুষ্ট হবেন।
No comments