হলদিয়ার তেঁতুলবেড়িয়া নবদিগন্ত ক্লাবের জগদ্ধাত্রী পুজো বাস্তুহারাদের মিলন প্রাঙ্গণ
হলদিয়ার সিটি সেন্টার সংলগ্ন তেঁতুলবেড়িয়ার নবদিগন্ত ক্লাবের জগদ্ধাত্রী পুজো শুধু আনন্দ অনুষ্ঠান নয়, বাস্তুহারাদের মিলন প্রাঙ্গণ। শিকড়ের টানে উৎসব প্র…
হলদিয়ার তেঁতুলবেড়িয়া নবদিগন্ত ক্লাবের জগদ্ধাত্রী পুজো বাস্তুহারাদের মিলন প্রাঙ্গণ
হলদিয়ার সিটি সেন্টার সংলগ্ন তেঁতুলবেড়িয়ার নবদিগন্ত ক্লাবের জগদ্ধাত্রী পুজো শুধু আনন্দ অনুষ্ঠান নয়, বাস্তুহারাদের মিলন প্রাঙ্গণ। শিকড়ের টানে উৎসব প্রাঙ্গণে মিলিত হয় ছিন্নমূল পরিবারগুলি। রবিবার গোবিন্দভোগ চালের পায়েস দেবীর কাছে ভোগ নিবেদন করা হয়। সেই প্রসাদী পায়েস আজ, সোমবার পৌঁছে যাবে ভক্তদের বাড়ি। মঙ্গলবার নবদিগন্তের জগদ্ধাত্রী পুজোর অন্নভোগ পেতে দশ হাজার মানুষের মিলন মেলা হবে। ২০টি বিশাল উনুনে ভোগ রান্না হবে। উৎসব প্রাঙ্গণে এলেই পেট্রকেমের বাস্তুহারা মানুষজন স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন।
৩৬ বছর আগে ১৯৮৮সালে তৎকালীন কিশোরপুর গ্রামে নবদিগন্ত ক্লাব শুরু হয়। সেই গ্রামে এখন পেট্রকেমিক্যালস কারখানার চিমনি থেকে ধোঁয়া ওড়ে। জমি অধিগ্রহণের পর গ্রামের মানুষ ও ক্লাব সবাই উদ্বাস্তু হয়। পরে পাশের তেঁতুলবেড়িয়ায় বনজঙ্গলে ঘেরা শ্মশানভূমি, পদ্মপুকুর সংলগ্ন এলাকা হয়ে ওঠে জনসাধারণের মিলনকেন্দ্র। বাস্তুহারাদের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় নবদিগন্ত ক্লাব। প্রয়াত বিভূতিভূষণ মিদ্যা ও তাঁর পরিবারের দান করা জমিতে গড়ে ওঠে ক্লাব ও পাঠাগার। সাহায্য করেন প্রয়াত বনবিহারী প্রধান, বসন্ত মাইতি, মিলন দোলুই প্রমুখরা। ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক অশোক আচার্য বলেন, একসময় বড় করে ২৫বৈশাখ রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন হতো, সারা বছর ধরে খেলাধুলো ও নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলে। কিন্তু উৎসবের ভাবনা থেকে নবদিগন্ত ১৯৯৮সাল থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করে। ওইসময় এই তল্লাটে কোথাও জগদ্ধাত্রী পুজো হতো না। প্রথম থেকেই ধুমধাম করে পুজো শুরু হয়। হলদিয়ায় তখন নতুন নতুন শিল্প আসছে। পেট্রকেম গড়ে উঠছে চোখের সামনে। চিরঞ্জীবপুর-বৈষ্ণবচক বাজার গমগম করত। পাশে এসে দাঁড়ায় ব্যবসায়ীরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা। আজও পায়েস ভোগ ও নরনারায়ণ সেবার জন্য তেমন ভাবতে হয় না ক্লাবের সদস্যদের। এবার ২৬তম বর্ষে পুজো করেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও লেখক সুজনকুমার বালা। ওইদিন অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ সুজনবাবু, কবি আশিস মিশ্র, নাট্যকার নুটবিহারী পাত্র এবং পত্রিকা সম্পাদক ও শিক্ষক অসীমকুমার মাইতিকে ‘জগদ্ধাত্রী স্মারক সম্মাননা ২০২৪’ দিয়েছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন কাউন্সিলার সঞ্জীব পট্টনায়েক, কেনারাম বেরা, সদানন্দ গিরি, তাপিততারণ গিরি, কালীপদ বাগ, হিমাংশুশেখর মান্না প্রমুখ বিশিষ্ট মানুষজন।
শোভাযাত্রা করে দেবীমায়ের ঘটোত্তোলন হয়েছে। রবিবার বিকেল থেকে পুজো দেখতে ভিড় জমে মণ্ডপে। রাতে নবদিগন্ত ক্লাবের নিজস্ব গ্র্যান্ডকয়ার নাচ ও গান পরিবেশন করে। সোমবার পরমান্ন বিতরণ ও রাতে রিদম ডান্স ট্রুপের অনুষ্ঠান রয়েছে। মঙ্গলবার রয়েছে বিচিত্রানুষ্ঠান। সভাপতি অসিতকুমার প্রধান এবং সম্পাদক তরুণ মিদ্যা বলেন, ক্লাব কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর রক্তদান শিবির, শীতকালীন ক্যাম্প, শীতবস্ত্র বিতরণ করে। শীতকালীন শিবিরে ব্যাডমিন্টন, যোগাসন সহ নানা খেলার চর্চা চলে। তবে অর্থাভাবে পাঠাগার ও রানিচকে ফুটবল প্রশিক্ষণ কর্মশালা ধুঁকছে। ওই ফুটবল ক্যাম্পে ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কয়েকজন তরুণ ফুটবলার তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন শিল্প সংস্থার কাছে এজন্য সহায়তার আবেদন করছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
No comments