৫৫ তম বর্ষে হাজরা মোড় মৈত্রী ভূমি তাদের এবারের পূজোর থিম কুরুক্ষেত্র
হলদিয়ার হাজরামোড় মৈত্রীভূমি’র শারদোৎসবের মণ্ডপ জুড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ‘কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গন’। কুরুক্ষেত্র এখানে কোনও নির্দিষ্ট প্রাচীন স্থান নাম নয়, সমগ্র ভারত…
৫৫ তম বর্ষে হাজরা মোড় মৈত্রী ভূমি তাদের এবারের পূজোর থিম কুরুক্ষেত্র
হলদিয়ার হাজরামোড় মৈত্রীভূমি’র শারদোৎসবের মণ্ডপ জুড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ‘কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গন’। কুরুক্ষেত্র এখানে কোনও নির্দিষ্ট প্রাচীন স্থান নাম নয়, সমগ্র ভারতভূমির প্রতীক। মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যু্দ্ধের সারমর্ম শিল্পীর দৃষ্টিভঙ্গীতে এখানে নতুন রূপ পেয়েছে। পাঁচ হাজার বছর আগের পৌরাণিক কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সারবস্তু ‘ধর্মের জয়, অধর্মের পরাজয়’ আজও প্রাসঙ্গিক। এখানে ধর্মের অর্থ সত্যের উদ্ঘাটন, স্বাধীনতা। হাজার হাজার বছর ধরে ভারত উপমহাদেশ বহু সাম্রাজ্য, শাসকের উত্থান-পতন প্রত্যক্ষ করেছে। রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়েছে। মুক্তির লক্ষ্যে লড়াই আন্দোলনে নেমেছে সাধারণ মানুষ। তাদের প্রাণের বিনিময়ে এসেছে আজকের স্বাধীনতা। এ যেন যুগে যুগে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধেরই রূপান্তর। হাজরামোড় মৈত্রীভূমি পুজো কমিটি এবছর উৎসবের থিমের নামকরণ করেছে ‘কুরুক্ষেত্র যুগে যুগে’। এই বিষয় ভাবনার মাধ্যমে এবার তারা বার্তা দিয়েছে, ক্ষমতার আস্ফালন নয়, সত্যের প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠাই মানবজীবনের লক্ষ্য।
আধুনিক শিল্পনৈপুণ্য ও আলোর যাদুবাস্তবতায় মণ্ডপে প্রতীকীভাবে কুরুক্ষেত্রের লড়াইয়ের সারমর্ম ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী বিশ্বরঞ্জন রাজ। লোহা, প্রিন্ট পেন্টিং, প্লাইডউ দিয়ে তৈরি হয়েছে মৈত্রীভূমির মণ্ডপ। মূল মণ্ডপটি একটি প্রাচীন ভাঙা মন্দির ও রাজবাড়ির আদলে তৈরি। মন্দিরে বাংলার গৌড় শৈলী ব্যবহার করা হয়েছে। তার চারপাশে বিশাল স্তম্ভযুক্ত প্রাচীন দালানকোঠা বাড়ির ধ্বংসাবশেষ। চারপাশে ভাঙা গাণ্ডীব ধনুকের টুকরো, রথের ভাঙা চাকা, ছড়ানো দাবা ও পাশাখেলার ঘুঁটি, ছোট ছোট বাড়ির মাঝখানে বর্শাগুলি পোঁতা রয়েছে। মণ্ডপজুড়ে যুদ্ধের আবহ। মণ্ডপের মধ্যে ২৫টি চিত্রশিল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে মহাভারতের সারাংশ। সেই মণ্ডপের মাথায় আবার বিশাল একটি চেয়ার। শিল্পী বিশ্বরঞ্জন রাজ বলেন, প্রতীকী কুরুক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে মণ্ডপে। উপরের চেয়ার আসলে ক্ষমতার প্রতীক। কিন্তু লড়াইয়ের শেষে ক্ষমতা ধরাশায়ী হয়, সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের এই চক্রই প্রতীকীভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এখানে কুরুক্ষেত্র রণাঙ্গণে মা দুর্গা সত্য ও মুক্তির প্রতীক। উৎসব প্রাঙ্গণে হাজার হাজার মানুষ মিলিত হয়ে মুক্তি ও আনন্দের স্বাদ খুঁজে নেবে।
এবার ৫৫তম বর্ষে মৈত্রীভূমির মণ্ডপ দর্শনার্থীদের চমকে দেবে আশা করছে পুজো কমিটি। সোমবার চতুর্থীর সন্ধ্যায় পুজোর উদ্বোধন করেন চণ্ডীপুর রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী বিনিশ্চয়ানন্দজি মহারাজ। এছাড়াও ছিলেন মহিষাদল ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ব্রহ্মচারী গৌতম মহারাজ ও বিশিষ্ট মানুষজন। মৈত্রীভূমির সম্পাদক আশিস হাজরা বলেন, এবছর পুজোর বাজেট ৪২ লক্ষ টাকা। পুজোয় পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিনই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে। ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায় নটরাজ ডান্স অ্যাকাডেমির ‘নবজাগরণে চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্য অনুষ্ঠিত হবে। সপ্তমীতে রয়েছে সঙ্গীতশিল্পী দুই বোন ‘তানি-মুনি’র গান। অষ্টমীতে একটি ডান্স অ্যাকাডেমির নৃত্যানুষ্ঠান, নবমীতে সঙ্গীত সুধা অনুষ্ঠানে গাইবেন কাঞ্চনময় ভট্টাচার্য ও ঐশ্বর্যা সাহা। দশমীতে সঙ্গীত ধামাকার শিল্পী ম্যাক ও অদিতি চক্রবর্তী।
No comments