পূর্ব মেদিনীপুরে বন্যায় কৃষিতে ক্ষতি ১৭৮ কোটি টাকা, রিপোর্ট পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতিতে মোট ১৭৮ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। জেলা কৃষিদপ্তরের উপ অধিকর্তা (প্রশাসন) এমনই রিপোর্ট দিয়েছেন জেলাশাসককে। সেই রিপোর্ট নবান্নে…
পূর্ব মেদিনীপুরে বন্যায় কৃষিতে ক্ষতি ১৭৮ কোটি টাকা, রিপোর্ট
পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতিতে মোট ১৭৮ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। জেলা কৃষিদপ্তরের উপ অধিকর্তা (প্রশাসন) এমনই রিপোর্ট দিয়েছেন জেলাশাসককে। সেই রিপোর্ট নবান্নে পৌঁছে যাবে। মোট ১৬ হাজার হেক্টর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত। তারমধ্যে শুধুমাত্র ১১ হাজার ৯০০ হেক্টর আমন জমি। এছাড়াও ফুল, পান ও অন্যান্য ফসল রয়েছে। মোট ক্ষতিগ্রস্ত চাষির সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। কৃষিদপ্তর মোট ৩৯৩টি মৌজাকে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে জেলাশাসকের কাছে সুপারিশ করেছে। নিয়ম অনুযায়ী জেলাশাসক ক্ষতিগ্রস্ত মৌজা নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন। ওই বিজ্ঞপ্তি জারি হলেই সংশ্লিষ্ট মৌজার সকল চাষি বিমা বাবদ ক্ষতিপূরণ পাবেন। এসডিআরএফ (স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফান্ড) থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কিনা এখনও জানা যায়নি।
সোমবার সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া সন্ধ্যায় তমলুকে জেলাশাসকের অফিসে আসেন। বন্যা পরিস্থিতিতে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে মিটিং হয়। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের কীভাবে সাহায্য করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়। মানসবাবু বলেন, এই বন্যায় দুই মেদিনীপুরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সর্বাধিক। দুপুরে ঘাটালে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় পূর্ব মেদিনীপুরের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করেছি। মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছেন।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, রামনগর-১, পটাশপুর-১ ও ২ এবং এগরা-১ প্রভৃতি ব্লক এলাকায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধুমাত্র পাঁশকুড়া ব্লকে ২৫ হাজার চাষি ক্ষতিগ্রস্ত বলে কৃষিদপ্তরের রিপোর্ট। এছাড়াও ২৫০ হেক্টর জমির ফুলচাষ ক্ষতিগ্রস্ত। পুজোর মুখে পাঁশকুড়া ও কোলাঘাট ব্লকে ফুলচাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে এবার পুজোয় ফুলের দাম চড়া হবে বলে অনুমান। পান চাষেও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এখনও পাঁশকুড়া ও কোলাঘাটে ন’টি ত্রাণ শিবিরে পাঁচশোর বেশি দুর্গত আছেন। এছাড়াও কংসাবতী এবং ক্ষীরাই নদীবাঁধ এবং উঁচু রাস্তার উপর অনেকেই ত্রিপল খাঁটিয়ে রয়েছেন।
কোলাঘাট ব্লকের সাপুয়া, কুমোরচক, বাগিচা, জফুলি, ভোগপুর সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ধানজমির উপর প্রায় দু’ সপ্তাহ ধরে কোমর সমান জল। সাপুয়া গ্রামের বিষ্ণুপদ বেরা বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছিলাম। তার সব শেষ। এভাবে একটানা ১৫ দিন জল জমে থাকবে ভাবতে পারিনি। একটানা ১০ বছর সোয়াদিঘি খাল সংস্কার হয়নি। তাই পাঁশকুড়া ও কোলাঘাটের বিস্তীর্ণ এলাকায় এখনও প্লাবিত। আমরা এই যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি চাইছি।
পাঁশকুড়া ব্লকের গোবিন্দনগর, ঘোষপুর, রঘুনাথবাড়ি, চৈতন্যপুর-১ ও ২, প্রতাপপুর-১ ও২ সহ ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় চাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এবারের বন্যায় গোবিন্দনগরের সবকটি মৌজা প্লাবিত হয়। ওই ব্লকে মোট ২৫ হাজার চাষি ক্ষতিগ্রস্ত বলে কৃষিদপ্তর প্রশাসনকে রিপোর্ট দিয়েছে। পাঁশকুড়া ব্লকের মাইসোরা, কেশাপাট, ঘোষপুর, পাঁশকুড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ফুলচাষে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাঁশকুড়া পুরসভায়ও ফুলচাষ ক্ষতিগ্রস্ত। রামনগর-১, পটাশপুর-১ ও ২ এবং এগরা-১ ব্লকেও কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জেলায় রিপোর্ট এসেছে। ধান, সব্জি, পান প্রভৃতি চাষে ক্ষতি হয়েছে।
No comments