Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

একদল পিঁপড়া এবং একটি তরমুজ -আশিস কুমার পন্ডা

একদল পিঁপড়া এবং একটি তরমুজ -আশিস কুমার পন্ডা
এক সময় এক জঙ্গলের মাঝখানে এক বিশাল স্নানের গামলা (বাথটাব) ফেলে দেওয়া হয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যে গামলাটি ছোট ছোট পোকামাকড়ের জন্য এক উপযুক্ত বাড়িতে পরিণত হল। তবে তারা একটি বিষয়ে সতর্ক…

 






একদল পিঁপড়া এবং একটি তরমুজ -আশিস কুমার পন্ডা


এক সময় এক জঙ্গলের মাঝখানে এক বিশাল স্নানের গামলা (বাথটাব) ফেলে দেওয়া হয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যে গামলাটি ছোট ছোট পোকামাকড়ের জন্য এক উপযুক্ত বাড়িতে পরিণত হল। তবে তারা একটি বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে শিখেছিলো যে গামলার জল নিকাশের গর্তটি যেন সবসময় পরিষ্কার থাকে। তা না হলে, বৃষ্টির জল গামলাতে জমা হয়ে তাদের সবাইকে ডুবিয়ে দিতে পারে। দলের সবচেয়ে শক্তিশালী গুবরে পোকাগুলিকে গামলার জল নিকাশের গর্তটির উপর নজর রাখার দায়িত্বে রাখা হল যাতে এটি কখনও অবরুদ্ধ না হয়।

এতো সাবধানতা সত্বেও, একদিন বিপর্যয় ঘটে গেল। এক বিশাল পাকা তরমুজ গামলার জল নিকাশের গর্তটির উপর এসে পড়ল। তরমুজটি এত বড় ছিল যে গামলার সমস্ত গুবরে পোকা একসঙ্গে চেষ্টা করে এটিকে একচুলও সরাতে পারলো না! তারপরে সমস্ত শক্তিশালী পোকামাকড় তাদের পেশীর শক্তি দিয়ে চেষ্টা করলো এবং সমস্ত বুদ্ধিমান পোকা তাদের বুদ্ধি খাটালো, কিন্তু কোন কিছুই কাজ করলো না। তরমুজটি পাহাড়ের মতো নিজের যায়গায় বসে রইলো। সবচেয়ে দূরদর্শী কীটপতঙ্গগুলি বাথটাব থেকে বেরিয়ে গিয়ে অন্য কোথাও বাসা বাঁধার পরিকল্পনা করতে শুরু করলো। গামলার পাশেই ছিল এক বিশাল পিঁপড়ার ঢিপি। সেখানকার এক ছোট পিঁপড়া খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হলো। চরম বিশৃঙ্খলা এবং দুঃখের মধ্যে, সাহস করে সে গুবরে পোকাদের জানালো, যদি তারা অনুমতি করে, সে তরমুজটিকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে। সমস্ত গুবরে পোকা ছোট পিঁপড়ার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে লাগল এবং বললো, “হাতী ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল! তোমার এই ছোট শরীরে, এই কাজ করা একেবারেই অসম্ভব!"

গুবরে পোকাদের হাসি আর থামে না! ছোট্ট পিঁপড়াকে নিয়ে তারা নানারকম মজা করে চললো। অনেক কষ্টে তাদের চুপ করিয়ে এক বৃদ্ধ পোকা, ছোট পিঁপড়াকে বললো যে সে চাইলে তরমুজটি নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে এবং তা যত তাড়াতাড়ি হয় ততই ভাল। পিঁপড়াটি শীঘ্রই ফিরে আসার এবং দিন শেষ হওয়ার আগে কাজ শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে গেল। ছোট পিঁপড়াটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেল বটে, তবুও অনেক পোকামাকড় পিঁপড়াটিকে বিশ্বাস করতে পারলো না। তারা তল্পিতল্পা বেঁধে  গামলা থেকে পালাতে শুরু করলো।

কিন্তু পিঁপড়াটি কিন্তু মোটেও ঠাট্টা করছিল না! দিনের শেষে, সে হাজার হাজার পিঁপড়াকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এল। পিঁপড়ারা ভালো করেই জানত যে তারা নিজেদের বাহুবলে আস্ত তরমুজটিকে বয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। তাই, তারা অন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করে এসেছিল এবং একসঙ্গে সেইভাবে কাজ শুরু করে দিল। হাজার হাজার পিঁপড়া, হাজার হাজার বিন্দুতে তরমুজকে একযোগে আক্রমণ করলো। প্রতিটি পিঁপড়া তরমুজের একটি ছোট টুকরো কেটে নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিল। তারা চলে যেতেই অপেক্ষারত আরও হাজার হাজার পিঁপড়া এগিয়ে এসে তরমুজে কামড় দিল। এইভাবে চলতে লাগলো। এক উত্সাহী ফড়িং পুরো পর্বটি দেখছিল এবং একটি পিঁপড়াকে বললো, "এইভাবে তোমরা কিছুই করতে পারবে না। তোমাদের কামড় দেওয়ার আগে তরমুজটা যেমন ছিল, এখনও ঠিক তেমনই আছে!”

"হুম, তুমি কি এ ব্যাপারে নিশ্চিত?" পিঁপড়াটি এমন মজা করে জবাব দিল যেন এমন কাজ সে আগে কখনও করেনি। উত্তরের অপেক্ষা না করে, সে তার কাজে লেগে পড়লো।

যাইহোক, এক এক ছোট টুকরোর অবশ্যই কোন গুরুত্ব ছিল। পিঁপড়ার দল অক্লান্ত পরিশ্রম করে চললো এবং বিশাল তরমুজ ধীরে ধীরে টুকরো টুকরো হয়ে অদৃশ্য হতে শুরু করলো। পরের দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই, বিশালাকার তরমুজের চিহ্নমাত্র রইলো না। পিঁপড়ার দল তরমুজের মিষ্টি রস খেয়ে তাদের কৃতিত্ব উদযাপন করলো। একসময়কার তরমুজের অপ্রতিরোধ্য দর্পকে চূর্ণ করে একদল ছোট পিঁপড়া আনন্দ ভাগ করে নিল।

পিঁপড়া এবং তরমুজের এই গল্প শুধু এক গল্প নয়; এটি দলগত কাজ ও  সংকল্পের মাধ্যমে, অল্প অল্প করে, টুকরো টুকরো করে, ধাপে ধাপে এক কঠিন লক্ষ্য অর্জন করার একটি শিক্ষা।

বড় লক্ষ্যগুলি আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই সঙ্গে, তারা অনেক মানসিক চাপ তৈরি করে এবং প্রথম দর্শনে, তাদের বাস্তবায়িত করা অসম্ভব বলে মনে হতে পারে। এই কারণেই বড় লক্ষ্যগুলিকে ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করে ফেললে প্রক্রিয়াটা অনেক সহজ হয়ে যায়। তবে  প্রতিটি ছোট ছোট লক্ষ্যকে হতে হবে সুনির্দিষ্ট (Specific), পরিমাপযোগ্য (Measurable), অর্জনযোগ্য (Achievable), প্রাসঙ্গিক (Relevant) এবং সময়বদ্ধ (Time-bound); এক কথায় SMART লক্ষ্য। এরপর শুধু একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়া। এটা অনেকটা, পুরো খাবারকে এক এক গ্রাস করে খাওয়ার মত। ছোট ছোট লক্ষ্য তৈরির বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে যা আমাদের প্রেরণা, স্বচ্ছতা, উৎপাদনশীলতা, সময় ব্যবস্থাপনা এবং আত্মসম্মান উন্নত করতে সাহায্য করে।

প্রতিবারই যখন তুমি এক একটি ছোট লক্ষ্য অর্জন করবে, তা সে যত ছোটই হোক না কেন, তুমি নিজেকে নিয়ে গর্বিত অনুভব করবে এবং তোমার মধ্যে এক ইতিবাচক ছন্দের সঞ্চার হবে যা তোমাকে আরও বড় লক্ষ্য অর্জনের জন্যে কাজ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করবে। শেষ পর্যন্ত, তুমি বা তোমার দল কম পরিমাণ কাজ করে, সহজে এক বড় লক্ষ্য অর্জন করে ফেলবে।

সবশেষে, ছোট ছোট লক্ষ্যগুলি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য এক একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। তোমার ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনের সাফল্য কেবলমাত্র ছোট ছোট লক্ষ্যের সুচারু অনুশীলনের উপর নির্ভরশীল। তোমার লক্ষ্যে স্থির ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাক এবং মনে রেখো যে প্রতিটি ছোট ছোট অগ্রগতি, তোমাকে বড় লক্ষ্যের কাছে একটু একটু করে পৌঁছে দেবে।

No comments