হলদিয়াতে ভবঘুরেদের আবাসনে গেটের সামনে তৃণমূলের নেতার দোকান
হলদিয়ায় সরকারি জমি ও পুরসভার ভবঘুরে আবাসের গেট দখল করে খাবার দোকান তৈরির অভিযোগ উঠেছে খোদ তৃণমূলের ওয়ার্ড সভাপতির বিরুদ্ধে। আবাসের মূল গেট আটকে দিয়ে রমরমিয়ে চলছে ওই দোকান…
হলদিয়াতে ভবঘুরেদের আবাসনে গেটের সামনে তৃণমূলের নেতার দোকান
হলদিয়ায় সরকারি জমি ও পুরসভার ভবঘুরে আবাসের গেট দখল করে খাবার দোকান তৈরির অভিযোগ উঠেছে খোদ তৃণমূলের ওয়ার্ড সভাপতির বিরুদ্ধে। আবাসের মূল গেট আটকে দিয়ে রমরমিয়ে চলছে ওই দোকান কাম রেস্তরাঁ। হলদিয়ার বালুঘাটা সংলগ্ন বনবিষ্ণুপুরে বি সি রায় হাসপাতালের উল্টোদিকে রাস্তার পাশে ওই দোকান ঘিরে রীতিমতো বিতর্ক তৈরি হয়েছে। গেটের দু’পাশে টিন দিয়ে তৈরি হয়েছে দোকান। গেটের সামনে স্পেশাল চেয়ার টেবিল পাতা থাকে আরাম করে খানাপিনার জন্য। পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের ওয়ার্ড সভাপতি কার্তিক মিস্ত্রির ওই রেস্তরাঁয় ব্রেকফাস্ট থেকে দিন রাতের খাবার সবই মেলে। মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া থেকে হাসপাতালের কর্মী, রোগীর পরিবারের লোকজনই মূলত খদ্দের। খোদ শাসকদলের ওয়ার্ড সভাপতি ব্যবসা করছেন, তাই ভয়ে রা কাড়েননি স্থানীয়রা। অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর পুরসভার আধিকারিকদের ওই দোকান সরানোর নির্দেশেও কাজ হয়নি। প্রায় দু’সপ্তাহ আগে পুর কর্তৃপক্ষ ওই নির্দেশ দেয়। উল্টে ওই ওয়ার্ড সভাপতি নবান্নে অভিযোগ করেছেন বলে দাবি পুর কর্তৃপক্ষের।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৮ বছর আগে হলদিয়ার ভবঘুরেদের জন্য বালুঘাটার বনবিষ্ণুপুরে ১৫ ডেসিমল জমিতে চারতলা আবাসন গড়ে ওঠে। ওই আবাসনের নাম দেওয়া হয় মাতঙ্গিনী আবাসন। প্রকল্পে খরচ হয় ১ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা। ৫০ বেডের ওই আবাস চালু হওয়ার পর একটি এজেন্সিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। হঠাৎ স্থানীয়রা দেখেন, ভবঘুরে আবাসের গেট দখল করে গজিয়ে উঠেছে তৃণমূল নেতার দোকান। শাসকদলের নেতা হওয়ায় কেউ ঘাঁটাতেও সাহস করেননি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর পুরসভা নড়চড়ে বসলেও ওই নেতা কার্যত পাত্তাই দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
পুরসভার এক কর্মী বলেন, ওই দোকানদার তৃণমূল নেতা হওয়ায় নবান্নে অভিযোগ করে পাল্টা চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ওয়ার্ড সভাপতি কার্তিক মিস্ত্রির সাফাই, উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবক হয়ে ব্যবসার পথ বেছে নিয়ে কোনও অন্যায় করেননি তিনি। তিনি বলেন, ভবঘুরে আবাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় তিন বছর আগে। আমি গেট বন্ধ করিনি। বন্ধ গেটের সামনে ব্যবসা করছি। সরকারি জায়গা জেনেই বসেছি। পুরসভা উঠতে বললেই দোকান সরিয়ে নেব। কিন্তু পুরসভা তো নির্দেশের পর কেন সরাননি, তার জবাব তিনি দিতে পারেননি।
ওই তৃণমূল নেতা বলেন, পুরসভার প্রকল্প পুনরায় চালু হোক সবাই চায়। কিন্তু আমি এমএ বিএড পাশের পর টেট উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাইনি। এরপর টিউশন করতাম, করোনার কারণে তাও বন্ধ হয়েছে। বাধ্য হয়ে সংসার চালাতে গত জানুয়ারি মাসে খাবার দোকান শুরু করেছি। তৃণমূল নেতার ওই সাফাই মানতে রাজি নয় পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভার ফিনান্স অফিসার দুলাল সরকার বলেন, হলদিয়ায় সরকারি জমি দখল করে কয়েক হাজার দোকান রয়েছে। হকারদের কারও স্থায়ী, কারও অস্থায়ী কাঠামো রয়েছে। সেগুলি নথিভুক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু কার্তিক মিস্ত্রি যেভাবে সরকারি আবাসের গেট দখল করে দোকান করেছেন, তা দেখে সবাই তাজ্জব হয়ে গেছি। ওঁকে সরানোর নির্দেশের পরও কথা শোনেননি। হলদিয়ার পুর প্রশাসক তথা এসডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ওই দোকান সরানোর নির্দেশ দ্রুত কার্যকরী করতে পুরসভার বিশেষ টিমকে শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছি।
No comments