‘সারদাদেবী ও তাঁর শিক্ষা’যিনি সার দান করেন তিনিই হলেন সারদা। গাছে যেমন সার দিলে গাছ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে ও নতুন জীবনের সন্ধান পায়, তেমনি সারদা দেবীও মানুষের জীবন-তন্ত্রীতে যে সার দিয়েছিলেন, অর্থাৎ— তিনি মানুষকে যেসব মূল্যবান উপদেশ দি…
‘সারদাদেবী ও তাঁর শিক্ষা’
যিনি সার দান করেন তিনিই হলেন সারদা। গাছে যেমন সার দিলে গাছ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে ও নতুন জীবনের সন্ধান পায়, তেমনি সারদা দেবীও মানুষের জীবন-তন্ত্রীতে যে সার দিয়েছিলেন, অর্থাৎ— তিনি মানুষকে যেসব মূল্যবান উপদেশ দিয়েছিলেন, সেগুলি থেকে যেকোন মানুষের নিজের জীবনকে নতুন করে উপলব্ধি করতে শেখা সম্ভব। শ্রীরামকৃষ্ণদেব তাঁর জীবদ্দশাতেই বলেছিলেন ও চেয়েছিলেন যে, সারদা দেবী সকলকে জ্ঞান দেবেন। ধীরে ধীরে তাঁর কথাই যে একটাসময়ে সত্যি হয়েছিল, সেটা সারদা দেবীর জীবনের ইতিহাস থেকেই বুঝতে পারা যায়।
সারদা দেবী বাংলার এক অখ্যাত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি রামচন্দ্র ও শ্যামাসুন্দরীর প্রথম সন্তান ছিলেন। নিজের শৈশবে কঠোর দারিদ্র্যকে বরণ করে নিয়ে তিনি গ্রাম্য সংসারের যাবতীয় কাজকর্মের সঙ্গে ছোট ছোট ভাইবোনেদের পরম স্নেহে লালন করেছিলেন। ১২৬৫ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে মাত্র ছ’বছর বয়সী বালিকা সারদার সঙ্গে চবিবশ বছরের যুবক গদাধরের শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে সারদা দেবীর কাছে তেমনকোন পুঁথিগত বিদ্যা কিন্তু ছিল না। তৎকালীন বাংলার সামাজিক ব্যবস্থাই এর পিছনে মূল কারণ ছিল। সেযুগের মেয়েরা, বিশেষতঃ গ্রামের মেয়েরা, পাঠশালায় গিয়ে লেখাপড়া শিখবেন— এটা তখন রীতিমত কল্পনাতীত ব্যাপার ছিল। তাই সারদা দেবীর পক্ষেও পাঠশালায় যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু— নিজের মা, বাবা ও ছোট ছোট ভাইবোনেদের সংসারে থেকে স্বাভাবিক স্নেহভালবাসা ও মানবিকতাবোধর সহজাত শিক্ষা মা সারদার প্রাত্যহিক ব্যবহারিক জীবনকে মানবিকতাপূর্ণ করে তুলেছিল। আর যে মানবধর্মকে মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষা বলা হয়ে থাকে, সেই শিক্ষা শ্রীরামকৃষ্ণের সংস্পর্শে এসে পূর্ণতা লাভ করেছিল। সারদা দেবী একদা নিজের ভক্তমণ্ডলীর কাছে জানিয়েছিলেন যে, স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। প্রদীপের সলতেটি কিভাবে রাখতে হবে, বাড়ির প্রত্যেকে কে কেমন মানুষ ও কার সঙ্গে তাঁকে কি ধরণের ব্যবহার করতে হবে প্রভৃতি সংসারের যাবতীয় কাজ থেকে শুরু করে ভজন, কীর্তন, ধ্যান, সমাধি ও ব্রহ্মাজ্ঞানের কথা পর্যন্ত শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে নিজে শিক্ষা দিয়েছিলেন। অনেকে মনে করেন যে, সারদা দেবী একজন গ্রাম্য মেয়ে ছিলেন এবং গ্রাম্য সংস্কৃতির মধ্যেই তাঁর ঘোরাফেরা ছিল, সেই কারণে তাঁর মনের গঠন চালচলন সবই ঘরোয়া এবং গ্রাম্য ছিল। কিন্তু সারদা দেবী দক্ষিণেশ্বরে আসবার পরে শ্রীরামকৃষ্ণ যখন তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন—
“কি গো, তুমি কি আমায় সংসার পথে টেনে নিতে এসেছ?”
তখন তিনি তাঁকে তাৎক্ষণিক উত্তর দিয়েছিলেন—
“না, আমি তোমাকে সংসার পথে কেন টানতে যাব? তোমার ইষ্ট পথেই সাহায্য করতে এসেছি।” (শ্রীমা সারদাদেবী, স্বামী গম্ভীরানন্দ, পৃ- ৩৮)
এথেকে বোঝা যায় যে, সারদা দেবী যদি সেকালের অন্য পাঁচজন গ্রাম্য নারীর মতোই সাধারণ সংসারমুখী কোন নারী হতেন, তাহলে তাঁর মুখে এইধরণের উত্তর কিছুতেই আসা সম্ভব ছিল না। তাঁর মধ্যে সুন্দর একটি আধার ছিল, যেটা শ্রীরামকৃষ্ণের সংস্পর্শে এসে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়েছিল।
সারদা দেবীর জীবনযাত্রাকে বিশ্লেষণ করলে একজন সাধারণ মানবীর পরিবর্তে তাঁর মধ্যে দৈবীগুণ-বিভূষিতা একজন নারীকে দেখতে পাওয়া যায়। কারণ— তিনি যেমন একদিকে একজন স্নেহময়ী মা ও কর্তব্যপরায়ণা গৃহিণী ছিলেন, অন্যদিকে তেমনি কোমলহৃদয়া ও দয়াবতী ঈশ্বরবিশ্বাসী সন্ন্যাসিনী ছিলেন। এই কারণেই তিনি সমগ্র নারী জাতির কাছে আদর্শ প্রতীক হওয়ার যোগ্য— তা সেই নারী সংসারের গৃহকোণেই ব্যস্ত থাকুন বা সংসার বিমুখ ঈশ্বর নিবেদিতপ্রাণাই হোন।
শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পরে তাঁর কাজের কোন বিরাম ছিল না। তখন শাশুড়ী এবং স্বামীর সেবা করা ছাড়াও গৃহস্থালির সব কাজই তাঁকে নিজের হাতেই করতে হত। তবুও সংসারের সেবায় তাঁর মধ্যে কখনও ক্লান্তি আসেনি, সেসবের প্রতিদানের একটুও অপেক্ষা না করে তিনি সবার প্রতি নিজের সব কৰ্তব্য নিখুঁতভাবেই করে গিয়েছিলেন। সারদা দেবী তাঁর মহিলা ভক্তদের বলতেন—
“কাজই লক্ষ্মী।” (শ্রীশ্রীমা সারদামণি, মানদাশঙ্কর দাশগুপ্ত, পৃ- ৪৭২)
“কাজে দেহ-মন ভাল থাকে।” (শ্রীশ্রীমায়ের কথা, প্রথম ভাগ, পৃ- ১১)
“একদণ্ডও কাজ ছেড়ে থাকা উচিত নয়।” (শ্রীশ্রীমায়ের কথা, প্রথম ভাগ, পৃ- ২৭)
কোন এক অপরাহ্নে ব্রহ্মচারী গোপেশ দেখতে পেয়েছিলেন যে, বাড়িতে অনেক ঝি-চাকর, সেবক সেবিকা থাকা সত্ত্বেও সারদা দেবী বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ শরীরেই আটা মাখছেন। সেদিন তাঁর প্রতি সহানুভূতি সম্পন্ন হয়ে তাঁর এই কায়িক পরিশ্রমটি ব্রহ্মচারীর কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছিল, এবং তাই তিনি সারদা দেবীকে তাঁর মনের এই কথা জানাতে তিনি তাঁকে উত্তর দিয়েছিলেন—
“বাবা, কাজ করাই ভাল।”
তারপরে একটু নীরব থেকে তিনি আবার বলেছিলেন—
“আর্শীবাদ কর, যতদিন আছি, যেন কাজ করেই যেতে পারি।” (শ্রীমা সারদাদেবী, স্বামী গম্ভীরানন্দ, পৃ- ৩৬৬)
এথেকে বোঝা যায় যে, তিনি সবাইকে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, সাংসারিক কোন কাজকর্ম তুচ্ছ বা অবহেলার বস্তু নয়। বলাই বাহুল্য যে, শ্রীরামকৃষ্ণের কাছ থেকেই সারদা দেবী এই শিক্ষাটি পেয়েছিলেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন যে, নিজের জীবনই অন্যের কাছে আদর্শ হওয়া উচিত, অর্থাৎ— মুখে শুধু তত্ত্ব উপদেশ দিয়ে মানুষকে বোঝালে চলবে না, বরং নিজের দেওয়া উপদেশগুলি বাস্তবে নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। পার্থিব জীবনের প্রতি আসক্তি মানুষকে ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। তাই সারদা দেবী সবাইকে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে— ধনের প্রতি আসক্তি থাকলে ঈশ্বরকে পাওয়া সম্ভব নয়।
তিনি সরলতার প্রতিমূর্তি ছিলেন। তাঁর মুখে সর্বদা হাসি লেগে থাকত, এবং চোখে ছিল প্রসন্ন দৃষ্টি। ভোগের ও ধনের প্রতি তাঁর কোন ধরণের মোহ ছিল না। নিজের স্বামীর সঙ্গে থেকেও নিজস্ব কামনা বাসনার ঊর্ধ্বে উঠে সারদা দেবী ত্যাগের এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নারী সমাজকে এই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়ার প্রেরণা দিয়েছিলেন।
একবার সারদা দেবীর একজন বৈরাগ্যবান ভক্তের ধারণা হয়েছিল যে, সর্ববিষয়ে তাঁর মুখাপেক্ষিণী স্ত্রীই তাঁর ধর্ম জীবন যাপনের পথে প্রধান অন্তরায়। এরপরে নিজের স্ত্রীকে এবিষয়ে অনেক বুঝিয়েও যখন তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন, তখন স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করে জানতে চেয়েছিলেন যে— তিনি (তাঁর স্ত্রী) স্বামীকে চান, নাকি ঈশ্বরকে চান? তাঁর স্ত্রী ঈশ্বর পরায়ণা হলেও নিজের স্বামীকেও প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। তাই তিনি তাঁর স্বামীর প্রশ্নের তখনি কোন উত্তর দিতে পারেননি। এরপরে সেই নারী সারদা দেবীর উপদেশ নেওয়ার জন্য তাঁর কাছে গিয়েছিলেন। তখন তাঁর কাছ থেকে সেই ঘটনার আনুপূর্বিক বৃত্তান্ত শুনে সারদা দেবী তাঁকে বলেছিলেন—
“তোমার বলা উচিত ছিল, আমি ভগবানকে চাই না, আমি তোমাকেই চাই।” (শ্রীশ্রীমা সারদাদেবী, ব্রহ্মচারী অক্ষয়চৈতন্য, পৃ- ১৯২)
দাম্পত্য জীবনের সুখ শান্তির জীয়নকাঠিটি হচ্ছে একে অপরের মধ্যে আত্মবিলুপ্তি। সারদা দেবী তাঁর ভক্তদের কাছে একথাই বিভিন্নভাবে বলে গিয়েছিলেন।
সংসারের মায়া বন্ধনের বাইরে থেকে ঈশ্বর ভজনা করে শান্তি পাওয়া এককথা, আর সংসারের মধ্যে জড়িয়ে থেকে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করা আরেক কথা। সারদা দেবী উপদেশ দিয়েছিলেন যে, সংসারে যে যেমন আছেন তেমনি থাকুন, তবে তাঁরা যেন কোন মায়ার বন্ধনে নিজেদের অযথা আবদ্ধ না রাখেন, তাহলে দুঃখ কষ্ট বাড়বে বৈ কমবে না। একবার একজন নিঃসন্তান বিধবা তাঁর অতৃপ্ত মাতৃহৃদয়ের স্নেহ বা কামনাবশতঃ একটি শিশুকে লালন পালন করবার ইচ্ছা নিয়ে সেবিষয়ে সারদা দেবীর উপদেশ পাওয়ার আশায় তাঁর কাছে হাজির হলে তিনি তখন তাঁকে বলেছিলেন—
“দেখ না, আমি রাধুকে নিয়ে কত মায়ায় ভুগছি।” (শ্রীমা সারদাদেবী, স্বামী গম্ভীরানন্দ, পৃ- ২২৭)
এরপরে তিনি সেই বিধবা মেয়েটিকে সংসারের চাওয়া পাওয়ার, দুঃখ দ্বন্দ্বের মধ্যে ঢুকতে নিষেধ করেছিলেন।
সারদা দেবী বলতেন—
“সহ্যের সমান গুণ নেই।” (মাতৃ সান্নিধ্যে, পৃ- ২২৮)
সংসারে আমাদের অনেককে নিয়ে চলতে হয়, এর ফলে মতের অমিল হতেই পারে, কিন্তু সর্বংসহা পৃথিবীর মত সবকিছুই সহ্য করতে হয়। তাহলেই শান্তি বজায় থাকে। এজন্যই তিনি বলেছিলেন যে, এই সংসারে যে যেমন চায় তাঁকে সেটা যুগিয়ে যাও। তাহলে ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার দ্বন্দ্ব একেবারেই থাকবে না। এটাতে আবার সেই সহ্যের কথাতেই ফিরে আসতে হয়। মানুষ যেমন খাল কেটে নদীর জল কৃষিক্ষেত্রে এনে ক্ষেত্রটিকে সবুজ ফসলে ভরিয়ে তুলতে পারে, তেমনি সহ্যের খাল দিয়ে শান্তির প্রবাহ এনে নিজের সংসারটিকে আনন্দমুখরও করতে পারে।
সারদা দেবী শুধু একজন স্নেহময়ী জননী ছিলেন না, তিনি কল্যাণময়ী ও জ্ঞানদায়িনীও ছিলেন। একবার একজন যুবতী কুপথে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে সেই যুবতী নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এবং মায়ের দ্বারপ্রান্তে এসেও নিজের কর্মের লজ্জাবশতঃ তাঁর গৃহাভ্যন্তরে প্রবেশ করতে শুরু করেছিলেন। তখন সারদা দেবী স্বয়ং এগিয়ে এসে আলিঙ্গন করে সেই যুবতীটিকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে তাঁকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন—
“পাপ কি তা বুঝতে পেরেছ, অনুতপ্তা হয়েছ। এস আমি তোমাকে মন্ত্র দেব।” (শ্রীমা সারদাদেবী, স্বামী গম্ভীরানন্দ, পৃ- ৩০৭)
এভাবেই তিনি একজন অনুতপ্তা পাপীকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে পাপকেই ঘৃণা করতে শিখিয়েছিলেন, পাপীকে নয়।
পল্লীর আচার-বিচার মেনে চললেও অতিরিক্ত কৃচ্ছসাধনের ব্যাপারে কিন্তু তাঁর আপত্তি ছিল। এই কারণেই তিনি বালবিধবা ক্ষীরোদবালাকে বলেছিলেন—
“বাছা, অনেক কঠোরতা করেছ, আমি বলছি, আর করো না। দেহটাকে একেবারে কাঠ করে ফেলেছ। দেহ নষ্ট হলে কি নিয়ে ভজন করবে মা?” (শ্রীমা সারদাদেবী, স্বামী গম্ভীরানন্দ, পৃ- ৩৬০)
বালবিধবা শবাসনাদেবীকে নিরম্বু উপবাসে উন্মুখ দেখে তিনি তাঁকে বলেছিলেন—
“আত্মাকে কষ্ট দিয়ে কি হবে? আমি বলছি তুই জল খা।” (শ্রীমা সারদাদেবী, স্বামী গম্ভীরানন্দ, পৃ- ৩৬০)
সুরবালাদেবীকে বলেছিলেন—
“আত্মা যদি কিছু খেতে চায়, আত্মাকে দিতে হয়। না দিলে অপরাধ হয়, সে কাঁদে, আমাকে দিলে না বলে।” (শ্রীমা সারদাদেবী, স্বামী গম্ভীরানন্দ, পৃ- ৩৬০)
উপরোক্ত প্রতিটি কথা এবং আচরণের ক্ষেত্রে তিনি প্রাচীন এবং আধুনিক মন ও মননের সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন বলে দেখতে পাওয়া যায়।
তাঁর জীবনের বিভিন্ন ঘটনা থেকে জানা যায় যে, নারীশিক্ষা প্রসারের ব্যাপারেও তিনি খুবই উৎসাহী ছিলেন। এই কারণেই নিবেদিতার স্কুলের বয়স্কা ছাত্রীদের দেখে তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। নিজের একজন নারী ভক্তের অবিবাহিতা পাঁচটি কন্যার জন্য দুশ্চিন্তার কথা শুনে তিনি তাঁকে বলেছিলেন—
“বে দিতে না পার, এত ভাবনা করে কি হবে? নিবেদিতা স্কুলে রেখে দিও। লেখাপড়া শিখবে, বেশ থাকবে।” (শ্রীমা সারদাদেবী, স্বামী গম্ভীরানন্দ, পৃ- ৩৬২)
সারদা দেবী বাল্যবিবাহের বিরোধী ছিলেন। এথেকে তাঁর আধুনিক চিন্তাধারার পরিচয় পাওয়া যায়। মাদ্রাজের দুটি কুড়ি-বাইশ বছরের অবিবাহিতা ছাত্রীদের দেখে তিনি খুশি হয়েছিলেন। পরে অন্যদের কাছে তাঁদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন—
“আহা, তারা কেমন সব কাজকর্ম শিখেছে। আর আমাদের! এখানে পোড়া দেশের লোকে কি আট বছরের হতে না হতেই বলে, ‘পরগোত্র করে দাও, পরগোত্র করে দাও!’ আহা! রাধুর যদি বিয়ে না হত, তাহলে কি এত দুঃখ দুর্দশা হত?” (শ্রীমা সারদাদেবী, স্বামী গম্ভীরানন্দ, পৃ- ৩৬১)
তিনি বলেছিলেন—
“যদি শান্তি চাও, মা, কারও দোষ দেখো না। দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপনার করে নিতে শেখ। কেউ পর নয়, মা, জগৎ তোমার।” (শ্রীমা সারদাদেবী, স্বামী গম্ভীরানন্দ, পৃ- ৫৫৬)
বর্তমান সময়ের মানুষ যখন শুধু ছিদ্রান্বেষী হয়ে নিজের দোষত্রুটি না দেখে শুধুই অপরের সমালোচনা করে, তখন মায়ের উপরোক্ত বাণীটি ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়োগ করবার প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে দেখা যায়। হানাহানি আর বিদ্বেষের কালিমাময় ও বিভীষকাপূর্ণ সমাজে মুক্তির স্বার্থে সবাইকে একজোট হয়ে সারদা দেবীর এই বাণীটি মানুষের কাছে বারবার তুলে ধরতে হবে।
No comments