তমলুক লোকসভার সাত বিধানসভাতেই লিড নিল বিজেপিতমলুকে তাবড় নেতাদের এলাকাতেই পর্যুদস্ত হল তৃণমূল কংগ্রেস। তমলুক লোকসভার সাত বিধানসভাতেই লিড নিল বিজেপি। তবে তমলুক বিধানসভায় গোটা জেলার মধ্যে সর্বাধিক ২০ হাজার ৯৬৬ ভোটের লিড পেয়েছে তারা।…
তমলুক লোকসভার সাত বিধানসভাতেই লিড নিল বিজেপি
তমলুকে তাবড় নেতাদের এলাকাতেই পর্যুদস্ত হল তৃণমূল কংগ্রেস। তমলুক লোকসভার সাত বিধানসভাতেই লিড নিল বিজেপি। তবে তমলুক বিধানসভায় গোটা জেলার মধ্যে সর্বাধিক ২০ হাজার ৯৬৬ ভোটের লিড পেয়েছে তারা। এরমধ্যে পোস্টাল ব্যালট ৫০৫। জেলা সদর শহরে হোমরা-চোমরা তৃণমূল নেতাদের গড়ে বিজেপি হেলায় লিড নিল। এই লোকসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরের বহু জায়গায় শাসকদলের মধ্যে অন্তর্ঘাত কাজ করেছিল। সূত্র মারফত এই খবর নেত্রীর কাছেও পৌঁছেছিল। এনিয়ে হলদিয়ায় সভা করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী কয়েকজনকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু, তলায় তলায় বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন অনেক নেতা। ভোটের ফলাফলে তার প্রভাব পড়েছে। মঙ্গলবার গণনাকেন্দ্রের সামনে তমলুক ব্লকের এক নেতাকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেন দেবাংশু ভট্টাচার্য। কাউন্টিং হল ছাড়ার আগে তিনি বলেন, ‘আপনারা কেউ কিছু করেননি।’
২০২১ সালে তমলুক বিধানসভা থেকে তৃণমূল কংগ্রেস ৭৯৩ ভোটের মার্জিনে জয়ী হয়ে বিধায়ক হন সৌমেন মহাপাত্র। কিন্তু, বিধায়ক হওয়ার পর নিজের বিধানসভায় সংগঠনের দিকে বিশেষ নজর দেননি। যেকারণে ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে ওই বিধানসভায় ফলাফল খারাপ হয়। একটি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়। কিন্তু, এবার তমলুক বিধানসভায় এমন ভরাডুবি হবে তৃণমূল কর্মীরাও কল্পনা করতে পারেননি। তমলুক শহরে ২০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২, ৪, ৫, ৭ ও ৯নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া বাকি ওয়ার্ডে পিছিয়ে তৃণমূল। শহরে তৃণমূল পিছিয়ে ৪৭৭৫ ভোটে। দলের শহর সভাপতি চঞ্চল খাঁড়ার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল পিছিয়ে ৭৭৯ ভোটে। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দলের জেলা কমিটির চেয়ারপার্সন চিত্ত মাইতি। ওই ওয়ার্ডে বিজেপির লিড ৫৫৩ ভোটের। পুরসভার চেয়ারম্যান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়ের ১ নম্বর ওয়ার্ডে দল পিছিয়ে ৬৬৯ ভোটে। তমলুক শহরে ৫৩টি বুথের মধ্যে শাসকদল পিছিয়ে ৪২টি বুথে।
তমলুক বিধানসভার অধীন শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের অবস্থাও ভালো নয়। ওই ব্লকে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে সবকটি পঞ্চায়েতে তৃণমূল পিছিয়ে। ঘাটতির পরিমাণ ১৩ হাজার ৬২ ভোটের। তমলুক ব্লকের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত তমলুক বিধানসভার মধ্যে পড়ে। সবকটি থেকে লিড পেয়েছে বিজেপি। অর্থাৎ তমলুক বিধানসভার মধ্যে গ্রামীণ এলাকার ১৪টি পঞ্চায়েতের একটিতেও তৃণমূল লিড নিতে পারেনি। তমলুক ব্লকের উত্তর সোনামুই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল নেতা সোমনাথ বেরাকে একাধিক ব্লকের অবজার্ভার করে ভোটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অথচ নিজের অঞ্চল থেকে লিড দিতে ব্যর্থ ওই জেলা তৃণমূল নেতা।
সৌমেন মহাপাত্রের নির্বাচনী এলাকায় দলের এমন বিপর্যয় কেন তানিয়ে বুধবার দিনভর চর্চা হয়। অনেক নেতা ভোটের মুখে দেওয়ালে বসে জল মাপছিলেন। পরিবারের অন্যদের মোবাইল নিয়ে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই চলছিলেন। বিজেপি ভালো রেজাল্ট করতে পারে আঁচ করে দুই কূল বাঁচিয়ে খেলতে গিয়ে এই বিপর্যয় বলে জানা গিয়েছে। সৌমেনবাবু লোকসভা নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যান। অথচ, তাঁর নির্বাচনী এলাকায় সব থেকে বেশি বিপর্যয় হয়েছে। এনিয়ে বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র বলেন, আমাদের রেজাল্ট একদম ভালো হয়নি। শহর এবং গ্রামীণ দুই জায়গায় ভরাডুবি হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই জেলার নেতাদের বিশ্বাসঘাতক বলে সন্দেহ করে। আমরা সেই জায়গা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারলাম না। এটাই আফশোস।
No comments