ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় পূর্ব মেদিনীপুরে সাড়ে ৩০০ ত্রাণ শিবিরঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় পূর্ব মেদিনীপুরে সাড়ে ৩০০ ত্রাণ শিবির প্রস্তুত রেখেছে প্রশাসন। রাত পর্যন্ত উপকূলবর্তী এলাকা থেকে প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে সরানো হয়। উদ্ধার ক…
ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় পূর্ব মেদিনীপুরে সাড়ে ৩০০ ত্রাণ শিবির
ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় পূর্ব মেদিনীপুরে সাড়ে ৩০০ ত্রাণ শিবির প্রস্তুত রেখেছে প্রশাসন। রাত পর্যন্ত উপকূলবর্তী এলাকা থেকে প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে সরানো হয়। উদ্ধার কাজের জন্য দু’টি এনডিআরএফ এবং দু’টি এসডিআরএফ টিম জেলায় এসেছে। দীঘা এবং হলদিয়ায় এনডিআরএফের দু’টি টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কর্মকাণ্ডের উপর তদারকি করতে রবিবার নবান্ন থেকে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব পি উলগানাথনকে পাঠানো হয়। এছাড়াও রাজ্য পুলিসের আইজি আনাপ্পা ই দীঘায় এসে সাইক্লোন মোকাবিলার কাজে তদারকি করছেন। এদিন দীঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অফিসে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি বৈঠক সারেন নির্বাহী অফিসার তথা এসডিও সৌভিক ভট্টাচার্য।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলবর্তী রামনগর-১ ও ২, কাঁথি-১, দেশপ্রাণ, খেজুরি-১ ও ২, নন্দীগ্রাম-১, হলদিয়া এবং সুতাহাটা প্রভৃতি ব্লককে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপণ অফিসে ২৪ ঘণ্টা ব্যাপী কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুম নম্বর ৯০৭৩৯৩৯৮০৪। সেখানে বিদ্যুৎ বণ্টন, পিএইচই, পিডব্লুডি, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও সরবরাহ প্রভৃতি দপ্তরের কর্মী ও ইঞ্জিনিয়াররা থাকছেন। প্রতিটি ব্লকেও কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।
এদিন ডিএসডিএ অফিসে জরুরি মিটিংয়ের পর এলাকায় মাইকিং করে সব হোটেল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পর্যটকদের দীঘা ছাড়তে বলা হয়েছে। এদিন দুপুর থেকেই রামনগর-১ ও ২ ব্লকের উপকূলবর্তী এলাকা থেকে মানুষজনকে সরানো শুরু হয়। কিন্তু, কেউ কেউ বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে যেতে অনীহা দেখান। প্রতি মুহূর্তে নবান্ন থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়। প্রতিটি ব্লকে সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ার মজুত রেখেছে প্রশাসন। সাইক্লোনে গাছ ভেঙে পড়লে দ্রুত সরানোর জন্য টিম রেডি রাখা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগে তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। ভোটের সময় সংস্থার পক্ষ থেকে সব বুথে জেনারেটর বসানো হয়। এরজন্য অতিরিক্ত কর্মী নিযুক্ত করা হয়েছিল। সেইসব অতিরিক্ত কর্মীদের সাইক্লোন মোকাবিলার কাজেও লাগানো হয়েছে বলে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার পূর্ব মেদিনীপুরের রিজিওনাল ম্যানেজার রঞ্জিতকুমার মণ্ডল জানিয়েছেন। এছাড়াও প্রতিটি ব্লকে সংস্থার অধীন ঠিকাদারদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিপর্যয় হলে দ্রুত লাইন মেরামত করে লাইন স্বাভাবিক করাই মূল লক্ষ্য। জেলায় পর্যাপ্ত ইলেক্ট্রিক পোল মজুত রয়েছে বলেও রিজিওনাল ম্যানেজার জানিয়েছেন।
২০২০ সালে উম-পুন সাইক্লোনে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছিল। ছ’জনের মৃত্যু হয়। লক্ষাধিক বাড়ি ভেঙে পড়েছিল। তারপর ২০২১ সালে যশ সাইক্লোনে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। কোটি কোটি টাকা ভেনামি চিংড়ির ভেড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ঋণখেলাপি হয়ে আজও অনেকে ঘরছাড়া। রেমাল সাইক্লোনের সতর্কবার্তায় আবার পূর্ব মেদিনীপুরের মানুষের সেই উম-পুন এবং যশ সাইক্লোনের দুঃস্বপ্ন ফিরে আসছে।
রাজ্য পুলিসের আইজি আনাপ্পা ই বলেন, কলকাতা পুলিসের একটি ক্যুইক রেসপন্স টিম দীঘায় এসেছে। সকলে মিলে উপকূল এলাকা থেকে মানুষজনকে সরানো হচ্ছে। কিন্তু, অনেকে বাড়ি ছেড়ে যেতে চাইছেন না। এই মুহূর্তে প্রাণ বাঁচাতে সাইক্লোন শেল্টার, ফ্লাড শেল্টার, স্কুলবাড়ি এবং পাকাবাড়িতে আশ্রয় নেওয়াটা জরুরি। আমরা সেটাই মানুষজনকে বলছি।
কন্ট্রোল রুম নম্বর ৯০৭৩৯৩৯৮০৪
তাড়া করছে যশ-উমপুনের ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন।
উপকূল এলাকা থেকে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষকে সরানো হল।
নজরদারিতে পঞ্চায়েত দপ্তরের সচিব ও রাজ্য পুলিসের আইজি।
No comments