Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যরকম প্রেমের কাহিনি!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৫টি অন্যরকম প্রেমের কাহিনি!রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন আপাদমস্তক একজন প্রেমিক পুরুষ। তার সাহিত্যজীবনের প্রেম ও প্রেম দর্শন আমরা প্রায় সবাই জানি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের প্রেম সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। বলা হয়ে থাকে, …

 




রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৫টি অন্যরকম প্রেমের কাহিনি!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন আপাদমস্তক একজন প্রেমিক পুরুষ। তার সাহিত্যজীবনের প্রেম ও প্রেম দর্শন আমরা প্রায় সবাই জানি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের প্রেম সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। বলা হয়ে থাকে, রবিঠাকুর প্রেমের জন্য মরিয়া ছিলেন। জীবনে অনেকবারই প্রেমের স্রোতে গা ভাসিয়েছেন। দিয়েছেন নিজেকে উজাড় করে। বিশ্বকবির প্রেম নিয়ে কথা বললে যাদের নাম উঠে আসে, তারা হলেন- স্ত্রী মৃণালিনী, মারাঠি কন্যা আন্না তড়খড়, কাদম্বরী বৌঠান, আর্জেন্টিনার ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো, রবীন্দ্ররচনার গুণমুগ্ধ পাঠিকা হেমন্তবালা, ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা ও রবীন্দ্রভক্ত রাণু অধিকারী। তাদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কাহিনিগুলো এখানে তুলে ধরা হলো।


০১। মারাঠি কন্যার প্রেমে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম প্রেমে পড়েন এক মারাঠি কন্যার। তখন তিনি মুম্বাইতে ছিলেন। মেয়েটির নাম ছিল আন্না তড়খড়। আন্না তড়খড় ছিল ডা. আত্দারাম পাণ্ডুরংয়ের কন্যা। তার সঙ্গে কবির প্রেম ছিল মাত্র একমাসের সামান্য কিছু বেশি সময়। জানা যায়, তাদের যোগাযোগ ছিল পত্র বিনিময়ের মাধ্যমে। এই প্রেম খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও বেশ তাৎপর্যময় ছিল রবীন্দ্রজীবনে। জীবনের প্রথম প্রেম বলে কথা। কবি তখন সবে কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে। আন্না ছিলেন বিদুষী, বুদ্ধিমতী রূপলাবণ্যে ভরপুর তরুণী। এই মারাঠি কন্যা কবির কাছ থেকে ভালোবেসে একটি ডাক নাম চেয়েছিলেন। ‘নলিনী’ নামটি তার জন্য যেন তুলে আনেন কবি। সেই নাম পেয়ে আন্না বলেছিলেন, ‘কবি, তোমার গান শুনলে আমি বোধহয় আমার মরণ দিনের থেকেও প্রাণ পেয়ে জেগে উঠতে পারি।’ ‘নলিনী’ নামটি খুবই প্রিয় ছিল রবীন্দ্রনাথের। কবির প্রথম জীবনে রচিত বহু কাব্য-কবিতায়-নাটকে এই নামটি এসেছে বহুভাবে। বহুকাল পরেও অতুলপ্রসাদ সেন এবং দিলীপকুমার রায়ের সঙ্গে একান্ত আলাপে এই তরুণীর কথা স্মরণ করতে দেখা যায় কবিকে। আন্নার সঙ্গে কবির প্রেম ছিল খুবই কম সময়। বহুদিন তার সঙ্গে কবির পত্র যোগাযোগ ছিল।


০২। কাদম্বরীর প্রেমে

রবীন্দ্রনাথের জীবনে দ্বিতীয় নারী তার বৌদি কাদম্বরী। কাদম্বরী ছিলেন কবির বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সহধর্মিণী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে বয়ঃসন্ধির সংবেদনশীল সেই দিনগুলোতে কাদম্বরী বৌঠানকে বলা হয় রবীন্দ্রনাথের স্থপতি। কিশোর মনে ছাপ ফেলতে কাদম্বরী এবং রবীন্দ্রনাথ দুজনে প্রায় সমবয়সী ছিলেন। কবির অনেক সাহিত্য ও কবিতা সৃষ্টি এই নিঃসঙ্গ রিক্ত এই নারীটিকে ঘিরেই। কবি তাকে নিয়ে 'ভারতী' পত্রিকায় লিখেন, 'সেই জানালার ধারটি মনে পড়ে, সেই বাগানের গাছ গুলো মনে পড়ে, সেই অশ্রুজলে সিক্ত আমার প্রাণের ভাবগুলি মনে পড়ে। তার একজন যে আমার পাশে দাঁড়াইয়া ছিল তাহাকে মনে পড়ে, সে যে আমার খাতায় আমার কবিতার পার্শ্বে  হিজিবিজির কাটিয়া দিয়াছে, সেইটে দেখিয়া আমার চোখে জল আসে। সেই তো যথার্থ কবিতা লিখিয়াছিল। তাহার সে অর্থ পূর্ণ হিজিবিজি ছাপা হইল না আর আমার রচিত গোটাকতক অর্থহীন হিজিবিজির ছাপা হইয়া গেল।' এই লেখাটি প্রকাশের পরেই ঠাকুর বাড়িতে আগুন জ্বলে উঠেছিল। আর সে কারণেই তার বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়। এর কিছুকাল পরেই কবি বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হলেন। কিশোরী বৌদিটির সঙ্গে বালক রবির সম্পর্ক ছিল সৌখিন ও খুঁনসুটির। দুজনের মধ্যে বোঝাপাড়ার কারণেই এই সুসম্পর্ক দাঁড়িয়েছিল। 'চারুলতা' ও' নষ্টনীড়ে' সেই ছাপ স্পষ্ট পাওয়া যায়।


০৩। বিদেশিকন্যা ভিক্টোরিয়ার প্রেমে

বিদেশিকন্যা ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। ভিক্টোরিয়াকে বেশ আপন করে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই প্রেমের গাঁথা রচিত হয়েছিল আর্জেন্টিনার প্লাতা নদীর তীরে। এ নদীর তীর ঘেঁষে কবির সঙ্গী হয়ে পথ চলেছেন বিদেশিনী ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। যাকে স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনাতেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। তখন নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ বিশ্বে খুব পরিচিত। দেশে-বিদেশে তাঁর অসংখ্য ভক্ত। রবীন্দ্রনাথের 'গীতাঞ্জলি' কাব্যগ্রন্থে বিমুগ্ধ ছিলেন ওকাম্পো। এক ফরাসি সাহিত্যিকের অনূদিত গীতাঞ্জলি পড়েই ওকাম্পো প্রেমে পড়েন রবীন্দ্রনাথের। রবীন্দ্রনাথ বিশ্ব ভ্রমণের একপর্যায়ে আর্জেন্টিনা পৌঁছান। সেখানে পৌঁছেই বিপুল সংবর্ধনা পান তিনি। প্রিয় কবিকে কাছে পেয়ে ওকাম্পো উদ্বেলিত হয়েছিল। ক্রমেই কবির কাছে তিনি ভালো লাগার যে আবেদন প্রকাশ করেছেন তাতে দুজনের মধ্যে বেশ গোছানো একটি সুসম্পর্ক তৈরি হয়। অনেকেই দাবি করেন রবীন্দ্রনাথের বহুল জনপ্রিয় গান, 'আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী' তাকে ভেবেই লেখা। কিন্তু গানটি লেখা হয়েছিল ১৮৯৫ সালে, শিলাইদহে। আর রবীন্দ্রনাথ আর্জেন্টিনা যান আরও অনেক পরে, সম্ভবত ১৯২৪ সালে। হয়ত-বা শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ যাকে নিয়ে গান রচনা করেছিলেন সে ছিলেন রবীন্দ্রজীবনের আরেক প্রেমের উপাখ্যান!


০৪। পাঠিকার প্রেমে

রবীন্দ্র-জীবনে প্রেম-অধ্যায়ে পাওয়া যায় একজন হেমন্তবালা রায় চৌধুরীকেও। হেমন্তবালা ছিলেন রবীন্দ্ররচনার গুণমুগ্ধ পাঠিকা। দুজনের মধ্যে আলাপ হতো পত্র বিনিময়ের মাধ্যমে। তার সঙ্গে কবির একাধিক পত্র বিনিময় হয়েছে। কবিকে হেমন্তবালা ডাকতেন ‘কবিদাদা’। নানা অজুহাতে, পারিবারিক বাধা সত্ত্বেও এমন-কি রাতের বেলায়ও ল্যান্সডাউন রোডের বাড়ি থেকে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে হঠাৎ গিয়ে হাজির হতেন তিনি। রবীন্দ্রনাথকে একটি চিঠিতে হেমন্তবালা লেখেন, ‘আপনি আমার দেবতা, আমার কল্পলোকের রাজা। আমার দুর্ভাগ্য যে, আমার পূর্ণ পূজা আপনার চরণে দিতে পারছি না। আপনি কি আমার মন দেখতে পারছেন না?’ গুণমুগ্ধ এই পাঠিকাকে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমাতেই আপন করে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। 


০৫। স্ত্রীর সমবয়সী ইন্দিরার প্রেমে

স্ত্রী মৃণালিনীর সমবয়সী ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরাকেও একটু ভিন্নভাবেই রবীন্দ্রনাথের জীবনে পাওয়া যায়। ইন্দিরা বয়সে ছোট হলেও মনের দিক থেকে কবির সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক ছিল। ইন্দিরাকে লেখা বেশ কিছু চিঠি পড়েই সেটি স্পষ্ট হয়। ইন্দিরা বহুদিন অনূঢ়া ছিলেন। সংগীতচর্চায় আগ্রহ ও সাহিত্য অনুরাগের কারণে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তার। ইন্দিরা কবিকে ‘রবিকা’ সম্বোধন করতেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ইন্দিরার পত্র বিনিময় নিয়েও ছড়িয়ে আছে অনেক কথা। রবীন্দ্রনাথ ইন্দিরার চিঠির লম্বা লম্বা উত্তর লিখতেন। অবস্থাটা এমন যে অন্য সব কাজ ফেলেও ইন্দিরাকে আগে চিঠি লেখা চাই-ই। জীবনের শেষভাগে রাণু অধিকারীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মনের মিলন ঘটে। রাণু ইতিমধ্যে পড়েছে কবির সব গল্প। তার পাঠানো চিঠিতে তার অনুযোগ, কেন কবি ইদানীং অত কম গল্প লিখছেন? কলকাতায় গিয়ে সেই কিশোরী প্রৌঢ় কবির সান্নিধ্য পেয়েছে। স্ত্রী মৃণালিনীর সঙ্গে কবির জীবন ছিল সরল ও স্বাভাবিক। সেখানেও প্রেমের ছোঁয়া এতটুকু কম পড়েনি।

'জনপ্রিয় লেখকদের অদ্ভুত কাণ্ডকাহিনি' বইটি থেকে নেওয়া।

No comments