পেট্রকেমের কয়লা চুরির ঘটনা! ব্যাপক চাঞ্চল্য গত বছর পুজোর সময় হলদিয়া বন্দর এলাকা থেকে পেট্রকেমের আমদানি করা প্রায় ১৩০০ মেট্রিক টন কয়লা চুরি হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। হলদিয়া থানায় গত ২১ ডিসেম্বর চুরির লিখিত অভিযোগ করে পেট্রকেম…
পেট্রকেমের কয়লা চুরির ঘটনা! ব্যাপক চাঞ্চল্য
গত বছর পুজোর সময় হলদিয়া বন্দর এলাকা থেকে পেট্রকেমের আমদানি করা প্রায় ১৩০০ মেট্রিক টন কয়লা চুরি হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। হলদিয়া থানায় গত ২১ ডিসেম্বর চুরির লিখিত অভিযোগ করে পেট্রকেম কর্তৃপক্ষ। এবিষয়ে পুলিসি তদন্ত চলছে। বুধবার হলদিয়া বন্দরে এক অনুষ্ঠানে এসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দরের (কলকাতা পোর্ট) চেয়ারম্যান রথেন্দ্র রমন বলেন, কোনও চুরির ঘটনা ঘটেনি। তবে এই বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করতে পারি না। কী ঘটনা ঘটেছে পেট্রকেম জানে। ওদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বন্দরের। এখানে কোনওরকম জাতীয় ক্ষতি হয়নি। যেহেতু এবিষয়ে তদন্ত চলছে তাই বেশি কথা বলা ঠিক হবে না। তবে চুরির ঘটনা ঘটেনি। আসলে কী ঘটেছে তদন্তের শেষে সব জানা যাবে। এদিন বন্দরের চেয়ারম্যানের বক্তব্যে নতুন করে ধন্দ তৈরি হয়েছে। বন্দরে ‘কয়লা চুরি’-র ঘটনা ‘সংবাদ মাধ্যমে প্রথম প্রকাশিত হয়। এখবর প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়।
শেষমেশ বিপাকে পড়ে গত ২৭ জানুয়ারি পেট্রকেম কর্তৃপক্ষ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, হলদিয়া বন্দরের সঙ্গে হলদিয়া পেট্রকেমের বহু বছর ধরে ব্যবসায়িক সুসম্পর্ক রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বন্দরের সঙ্গে পণ্য আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে পেট্রকেমের সুদৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। গত ২১ ডিসেম্বর হলদিয়া থানায় পেট্রকেমের তরফে হলদিয়া বন্দর থেকে কয়লা চুরির অভিযোগ করা হয়। পেট্রকেম কর্তৃপক্ষের দাবি, বন্দর থেকে যে কয়লা চুরি হয়েছে, সে জন্য হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনওভাবেই দায়ী নয়। প্রাথমিকভাবে অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কোনওভাবেই বন্দর কর্তৃপক্ষের উপরে এই দায় বর্তায় না। পেট্রকেমের ওই বক্তব্যের দু’মাস বাদেও ‘চুরি’-র তদন্ত রিপোর্ট আর প্রকাশ্যে আসেনি। প্রায় দু’মাস পর এবার কলকাতা পোর্টের চেয়ারম্যান জানালেন, বন্দরে কোনও কয়লা চুরি হয়নি। একদিকে পেট্রকেম বলছে, বন্দরে চুরি হয়েছে, কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। অন্যদিকে বন্দরের চেয়ারম্যান বলছেন, বন্দরে কোনও চুরির ঘটনাই ঘটেনি। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ওই ১৩০০ টন কয়লা কোথায় উধাও হল? এদিন বন্দরের চেয়ারম্যানের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পেট্রকেমের মতামত জানতে চাওয়া হয়। পেট্রকেম কর্তৃপক্ষ এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছে। তারা ই-মেল করে জানিয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনকে তদন্তে সমস্ত রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে। পেট্রকেম স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করে। এবিষয়ে কোনও খবর দেওয়ার থাকলে অবশ্যই শেয়ার করা হবে। প্রসঙ্গত, গত ২১ ডিসেম্বর পেট্রকেম কর্তৃপক্ষ বন্দরের ইয়ার্ড (পণ্য রাখা হয় যেখানে) থেকে ১২৯২ মেট্রিক টন আমদানি করা কয়লা চুরি হয়েছে বলে হলদিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করে। পুলিস সূত্রে জানা যায়, ওই কয়লা ইন্দোনেশিয়া থেকে অক্টোবর মাসে এনেছিল পেট্রকেম। সংস্থার নিজস্ব ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টের (সিপিপি) জন্য ওই কয়লা এনেছিল। বন্দরের ২ নম্বর বার্থের দু’টি প্লটে নামানো হয়েছিল ওই কয়লা। বন্দরের সংরক্ষিত এলাকা থেকে পেট্রকেমের আমদানি করা প্রায় দেড়-দু’ কোটি টাকার কয়লা উধাও হওয়ার ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। এরপরই পেট্রকেম থানায় অভিযোগ দায়ের করে। এদিন কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যানের বক্তব্যের পর পেট্রকেম কর্তৃপক্ষের ‘চুরি’-র তত্ত্ব নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন উঠেছে। পুলিসের পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষও আলাদা একটি তদন্ত করেছিল বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনতে কেন গড়িমসি চলছে তা নিয়েও বন্দরের আধিকারিকদের একাংশের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। এবিষয়ে আবার বন্দরের আধিকারিকরা আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছেন। ওই কয়লা নাকি পুড়ে গিয়েছে, এমন তত্ত্বও খাড়া করার চেষ্টা হয়েছে। হলদিয়ার পুলিসও এবিষয়ে মুখ খুলতে চায়নি।
No comments