মিনি টর্নেডোয় লন্ডভন্ড হল জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকাবিবার মুহূর্তের মিনি টর্নেডোয় লন্ডভন্ড হল জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা। মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। আহত হয়েছেন অন্তত দু’শতাধিক মানুষ। ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্য…
মিনি টর্নেডোয় লন্ডভন্ড হল জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা
বিবার মুহূর্তের মিনি টর্নেডোয় লন্ডভন্ড হল জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা। মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। আহত হয়েছেন অন্তত দু’শতাধিক মানুষ। ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডেলে দুর্গতদের প্রতি গভীর শোকপ্রকাশ করেন। তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনী বিধি মেনে মৃত ও আহতদের ক্ষতিপূরণও দেওয়া হবে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেখানকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তাঁর নির্ধারিত সূচির পরিবর্তন করে রবিবার রাতেই জলপাইগুড়িতে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ ঝড়ে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারেও ক্ষতি হয়েছে। তবে জলপাইগুড়িতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্য সরকার দুর্গতদের পাশে আছে।’ জানা গিয়েছে, দ্বিজেন্দ্রনারায়ণ সরকার (৫২), অণিমা বর্মন (৪৫), জগেন রায় (৭২), সমর রায় (৬৪) সহ মোট পাঁচজন মারা গিয়েছেন। মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে জখমদের চিকিৎসা চলছে। এক্স হ্যান্ডেলে মৃতদের প্রতি শোকপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আহতদের পাশে থাকার বার্তা দেন তিনি।
রবিবার রাতে জলপাইগুড়ি পৌঁছনোর আগে পথে বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরেই জলপাইগুড়ি পৌঁছে মৃত দ্বিজেন্দ্রনারায়ণ সরকার ও অণিমা বর্মনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পাশে থাকার বার্তাও দেন তিনি। রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছে জখমদের প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলে শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী। কথা বলেন চিকিৎসকদের সঙ্গেও। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেই সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসনের থেকে জানতেও চান তিনি। প্রায় আধঘণ্টা পর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘উদ্ধারকাজ খুব ভালো হয়েছে। প্রশাসন ও হাসপাতালের কর্মীরা খুবই ভালো কাজ করেছেন।’ রাতেই ময়নাগুড়ির বার্নিশ গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখবেন বলেও জানান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এদিন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সহ শীর্ষ আধিকারিকদের একটি দল জলপাইগুড়ি এসেছেন। নবান্নে বিশেষ কন্ট্রোল রুম খুলে নজর রাখা হচ্ছে পরিস্থিতির উপর। জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি প্রয়োজনে নবান্নের ১০৭০ কন্ট্রোল রুমও সক্রিয় রাখা হয়েছে। আজ, সোমবার মমতার নির্দেশে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে আহতদের সঙ্গে দেখা করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, সোমবার জলপাইগুড়িতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করবেন রাজ্যপালও।
ঝড়ের তাণ্ডব চলে ময়নাগুড়ির বার্নিশ গ্রাম পঞ্চায়েতে। অগণিত কাঁচা বাড়ি ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ঘরের সিলিংয়ের বাটাম ভেঙে মাথায় পড়ে বৃদ্ধ সমর রায়ের মৃত্যু হয়। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের বিশেষ টিম। রাজ্যের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী জেলায় মজুত রয়েছে। আরও ত্রাণের প্রয়োজন আছে কি না, তা জেলা প্রশাসনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রচুর ঘর, বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেসব নিয়ে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। বহু মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সিকিম কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, কয়েকদিন ধরেই এখানে উষ্ণতা বাড়ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পের আগমন ঘটলে এখানকার বায়ুমণ্ডল অস্থির হয়ে ওঠে। যার ফলে জলপাইগুড়িতে শিলাবৃষ্টি সহ নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় তীব্র ঝড় বয়ে যায়। যেটা প্রাথমিকভাবে মিনি টর্নেডো বলে মনে হচ্ছে। জলপাইগুড়ি শহরের রাজবাড়িপাড়া, শহর ঘেঁষা খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত, পাহাড়পুর, ময়নাগুড়ির বার্নিশে ঝড়ের তীব্রতা প্রবল ছিল। ঝড়ের অভিঘাত এতটাই ছিল যে, বহু বাড়ির টিনের চাল উড়ে গিয়ে গাছের মগডালে আটকে যায়। এদিন রাতেই হাসপাতালে দুর্গতদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরাও। আসেন শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গৌতম দেব। মিনি টর্নেডোয় বহু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়ে যায়। বিদ্যুৎ দপ্তর সূত্রে খবর, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে।
No comments