জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে জরুরি স্ক্রিনিং
সিনিয়র কনসালট্যান্ট গাইনি-অঙ্কোলজি অ্যান্ড রোবোটিক সার্জারিস্তন ক্যান্সারের পর মহিলারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন সারভাইক্যাল বা জরায়ুমুখ ক্যান্সারে। আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুহারেও দ্বি…
জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে জরুরি স্ক্রিনিং
সিনিয়র কনসালট্যান্ট গাইনি-অঙ্কোলজি অ্যান্ড রোবোটিক সার্জারি
স্তন ক্যান্সারের পর মহিলারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন সারভাইক্যাল বা জরায়ুমুখ ক্যান্সারে। আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুহারেও দ্বিতীয় এই ক্যান্সার। তবে একটু সচেতন হলেই জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব। আর এই সচেতনতা বাড়াতেই প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) পালন করে আসছে 'জরায়ুমুখ ক্যান্সার সচেতনতা মাস'।
কেন হয়?
ইউটেরাসের মুখকে বলা হয় সারভিক্স। এই সারভিক্স যেহেতু বাইরের দিকে থাকে। তাই সেখানে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। আর এই সংক্রমণের জন্য দায়ী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচ পি ভি)। প্রথমে সংক্রমণ, তারপর আলসার বা ঘা এবং সেই আলসার ধীরে ধীরে পরিণত হয় ক্যান্সারে। আর এই প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ বছর। এই সময়টাকে বলা হয় লং ল্যাটেন্ট পিরিয়ড । জরায়ুমুখ ক্যান্সারে এই ল্যাটেন্ট পিরিয়ড যেহেতু অনেকটা লম্বা, তাই ক্যান্সার প্রতিরোধ করাও সম্ভব । আলসার হয়, তখন তার অনেকগুলো স্টেজ থাকে। যাকে বলে প্রিক্যান্সার স্টেজ। তখনই যদি রোগ নির্ণয় করা যায়, তাহলে ক্যান্সারাস স্টেজে পৌঁছনোর আগেই রোগীকে সুস্থ জীবনে ফেরানো সম্ভব। আর এর জন্য দরকার আগাম সতর্কতা ওনির্দিষ্ট সময় অন্তর স্ক্রিনিং।
কতদিন অন্তর স্ক্রিনিং?
স্তন ক্যান্সারের জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে জরুরি স্ক্রিনিং। স্ক্রিনিং অর্থাৎ প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট। জরায়ু মুখ থেকে রস সংগ্রহ করে এই পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষায় অ্যানাস্থেশিয়ার প্রয়োজন হয় না বা এতে কোনও ব্যথা-বেদনাও লাগে না। এবার প্রশ্ন হল কারা এই টেস্ট করাবেন? সব মহিলাই (যাঁরা কোনও ক্যান্সার আক্রান্ত হননি) তিন বছর অন্তর এই টেস্ট করা দরকার। জরায়ুমুখে কোনও পরিবর্তন হলে তা টেস্টে ধরা পরে। আলট্রাসোনোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যানে এই পরিবর্তন ধরা সম্ভব নয়। প্যাপ স্মিয়ারেই একমাত্র সেটা সম্ভব। রিপোর্টে সন্দেহজনক কিছু এলে তখন বায়োপ্সি ও অন্যান্য চিকিৎসা শুরু হয়। আর তখনইচিকিৎসা শুরু হওয়ায় সেটা ক্যান্সার পর্যন্ত পৌঁছয় না।
এর কি কোনও উপসর্গ থাকে?
• প্রচুর পরিমাণে সাদাস্রাব দুটো পিরিয়ডের মাঝে র সময় হঠাৎ করে ব্লিডিং, যাকে বলে ইন্ট্রামেস্ট্রয়াল ব্লিডিং এবং • সহবাসের পর ব্লিডিং। এইধরনের সমস্যা নজরে পড়লে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন এবং জরুরি প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট।
রিস্ক ফ্যাক্টর
জরায়ুমুখ ক্যান্সারের কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে- • ধূমপান • একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে সহবাস • দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসের সমস্যা কোনও অসুখের কারণে যাঁদের লংটার্ম স্টেরয়েড খেতে হয়, তাঁদের শরীরে রোগ। প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে যে কোনও সংক্রমণেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
যেহেতু ভাইরাস, তাই এর কি কোনও ভ্যাকসিন আছে?
জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে রয়েছে ভ্যাকসিন। আর ভ্যাকসিন নিলে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। ভ্যাকসিনেশনের সঠিক সময় ৯ থেকে ১৪ বছর বয়স। বিদেশে ছেলেদেরও এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, তবে আমাদের দেশে শুধুমাত্র মেয়েদেরই দেওয়া হয়। ওষুধের কোম্পানি অনুযায়ী ভ্যাকসিনের দুটো বা তিনটে ডোজ। ১৪ বছরের পরে বা বিবাহিত মহিলারা, যাঁদের সন্তান হয়ে গেছে, তাঁরাও এই ভ্যাকসিন নিতে পারেন, তবে তখন ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কিছুটা হলেও কমে যায়।
চিকিৎসাপ্যাপ স্মিয়ার টেস্টে অস্বাভাবিকতা এলে তখন বায়োপ্সি করা হয়। বায়োপ্সি ছাড়া রোগ নির্ণয় সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, বায়োপ্সিতে রোগ ছড়ায় না। বায়োপ্সিতে ক্যান্সার ধরা পড়লে, তখন এমআরআই করে দেখা হয় রোগটা কতটা ছড়িয়ে। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থাৎ স্টেজ ১, ইউটেরাসের মধ্যেই ক্যান্সার সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে সার্জারি করা হয়। ইউটেরাস থেকে বাইরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে সার্জারি করা হয় না, তখন কেমো ও রেডিয়েশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোবটিক সার্জারি করা হয়। কারণ এতে রোগী দ্রুত সুস্থ জীবনে ফেরেন। স্টেজ ১-এ রোগ ধরা পড়লে ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান। যে কোনও ক্যান্সারের চিকিৎসাতেই এটা একটা পজেটিভ বার্তা। অর্থাৎ ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়। আধুনিক চিকিৎসায় স্টেজ ৪-এ ও ৩০ শতাংশ রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। আর ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে জরুরি এক ছাদের তলায় ক্যান্সারের যাবতীয় চিকিৎসা পরিষেবা। অর্থাৎ বায়োপসি, সার্জারি, কেমো, রেডিয়েশন ইত্যাদি সব কিছুই থাকবে একই সেন্টারের মধ্যে।
No comments