বিজেপির সভায় কলকাতায় অমিত শাহ
একুশের বিধানসভা ভোটেই বাংলার মানুষ বিজেপির এনআরসি ও সিএএ অস্ত্র ভোঁতা করে দিয়েছিল। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে কলকাতায় এসে সেই অস্ত্রেই শান দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।…
বিজেপির সভায় কলকাতায় অমিত শাহ
একুশের বিধানসভা ভোটেই বাংলার মানুষ বিজেপির এনআরসি ও সিএএ অস্ত্র ভোঁতা করে দিয়েছিল। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে কলকাতায় এসে সেই অস্ত্রেই শান দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বুধবার ২৯ শে নভেম্বর ধর্মতলার সভা থেকে তিনি বলেন, ‘বাংলায় অবৈধ অনুপ্রবেশের সমস্যা চরমে পৌঁছেছে। এখানে অনুপ্রবেশকারীদের আধার, ভোটার কার্ড করে দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ফোন নম্বর প্রচার করা হয়। পুলিস চুপ থাকে। অনুপ্রবেশ রুখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ মমতার সরকার।’ এরপরই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমোর উদ্দেশে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি বলেন, ‘দিদি, সিএএ দেশের একটা আইন। কেউ তা রুখতে পারবে না। সিএএ বাংলায় লাগু করেই ছাড়ব।’
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আইনে (সিএএ) পরিণত হয়। কিন্তু পরবর্তী পাঁচ বছরেও তা লাগু করতে পারেনি কেন্দ্র। নয়া আইন লাগু করতে গেলে বিধি প্রণয়ন প্রয়োজন। সেই কাজের সময়সীমা মোট সাতবার বৃদ্ধি হলেও কিছুই হয়নি। রাজনৈতিক মহলের অনেকে মনে করছেন, সিএএ নামক ‘গাজর’ ঝুলিয়ে রেখে ভোটব্যাঙ্ক ভরানো ছাড়া কেন্দ্র কিছু করছে না। এবারও মতুয়াদের ভোট নিশ্চিত করতেই ফের সিএএ ‘টোপ’ দিয়েছেন বিজেপির এই শীর্ষনেতা।
গেরুয়া শিবিরকে পাল্টা জবাব দিয়েছেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কথায়, ‘প্রতিবার ভোট এলেই বিজেপি নেতারা ঝুলি থেকে এই বেড়াল বের করেন। মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, বাংলায় কোনওভাবেই এই আইন লাগু করতে দেওয়া হবে না।’ তাঁর দাবি, ‘মতুয়ারা ভারতবর্ষের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাঁদের ভোটার, আধার সহ সমস্ত পরিচয়পত্র আছে। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভোটের আগে এই টোপ দিচ্ছেন।’
প্রসঙ্গত, বাংলদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু নাগরিকদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে তৈরি হয় সিএএ আইন। সেটি কার্যকর করতে সুনির্দিষ্ট বিধি (রুল) জারি বাধ্যতামূলক। সপ্তমবারের জন্য বিধি তৈরির যে সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছিল, তা শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর। সেই কারণে অনেকে মনে করছেন, লোকসভা ভোটের আগেই সিএএ লাগুর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিন সভা থেকে দুর্নীতি ইস্যুতেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি। তাঁর দাবি, আর্থিক দুর্নীতির কারণে গোটা দেশে বাংলার বদনাম হয়েছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কোনও মন্ত্রীর ঘর থেকে গুচ্ছ গুচ্ছ টাকা উদ্ধারের ঘটনা দেখেননি বলে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘মমতার হিম্মত থাকলে জেলবন্দি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, অনুব্রত মণ্ডল, পার্থ চট্টোপাধ্যায়দের দল থেকে সাসপেন্ড করে দেখান।’ তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের নাম না করে শাহের কটাক্ষ, ‘তৃণমূলের এমপিরা সংসদের পবিত্রতা নষ্ট করেছেন। উপঢৌকনের বদলে সংসদে প্রশ্ন তুলে বাংলার কোনও উন্নতি হবে না।’ সমাবেশে আগত কর্মী-সমর্থকদের তাঁর বার্তা, ‘লোকসভায় বিপুল আসন বিজেপিকে জেতান, যাতে মোদিজি শপথ নিয়ে বলতে পারেন, বাংলার জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছি।’
No comments