যক্ষ্মারোগের প্রখ্যাত চিকিৎসক ও গবেষক কুমুদশঙ্কর রায় প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করি
কুমুদশঙ্কর রায় (জন্ম : ৭ সেপ্টেম্বর, ১৮৯২ - মৃত্যু : ২৪ অক্টোবর, ১৯৫০) ছিলেন একজন বিশিষ্ট অগ্রণী বাঙালি চিকিৎসক। বৃটিশ ভারতে চিকিৎসাশাস্ত্…
যক্ষ্মারোগের প্রখ্যাত চিকিৎসক ও গবেষক কুমুদশঙ্কর রায়
প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করি
কুমুদশঙ্কর রায় (জন্ম : ৭ সেপ্টেম্বর, ১৮৯২ - মৃত্যু : ২৪ অক্টোবর, ১৯৫০) ছিলেন একজন বিশিষ্ট অগ্রণী বাঙালি চিকিৎসক। বৃটিশ ভারতে চিকিৎসাশাস্ত্রে যক্ষ্মা গবেষণায় ও নিরাময়ে অসামান্য অবদানের এক সুপরিচিত নাম।
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন :
কুমুদশঙ্কর রায়ের জন্ম ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের ৭ই সেপ্টেম্বর বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা জেলার তেঁওতা গ্রামে এক জমিদার পরিবারে। পিতা পার্বতীশঙ্কর রায়চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন কুমুদশঙ্কর। তাঁর প্রাথমিক পড়াশোনা তেঁওতা একাডেমীতে। পরবর্তীতে কলকাতার হিন্দু স্কুল ও প্রেসিডেন্সি কলেজে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নের পর উচ্চশিক্ষার্থে স্কটল্যান্ড যাত্রা করেন ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নের পর স্যার রবার্ট ফিলিপের পরামর্শে যক্ষ্মা চিকিৎসায় বিশেষ জ্ঞানার্জনে স্কটল্যান্ড ওকিল হিল স্যানাটোরিয়ামে যোগ দেন এবং বেশ কিছুদিন সেখানে সহকারী সুপারিনটেন্ডন্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
কর্মজীবন :
১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে কুমুদশঙ্কর কলকাতায় ফিরে আসেন এবং কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজের বর্তমানে রাধাগোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাণীতত্ত্বের অধ্যাপক হন। তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ প্রতিষ্ঠিত কলকাতা ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজের সাথেও যুক্ত ছিলেন। ওই সময়ে তাঁর এক ছাত্র প্রভাসচন্দ্র ঘোষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। সেই ছাত্রটি মৃত্যুর সময় তাঁর সঞ্চিত দু-লক্ষ টাকা যক্ষ্মা হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ট্রাস্টিকে দিয়ে যান। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে এই ট্রাস্টি ডক্টর কুমুদশঙ্কর রায়কে সম্পাদক ও সংগঠক নিযুক্ত করে। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার যাদবপুরে ৬৫ একরের জায়গায় হাসপাতাল স্থাপিত হয় এবং তিনি এই যক্ষ্মা হাসপাতালে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। অস্পৃশ্যতার কারণে যক্ষ্মারোগীদের সাহায্যে অনেকে এগিয়ে আসত না; সেজন্য তিনি নিজে রোগীদের রান্না ও পরিবেশনের কাজও করতেন। সকলের উপহাসে তিনি 'উন্মাদ' আখ্যা পেয়েছিলেন। কালক্রমে সেই যক্ষ্মা হাসপাতাল এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাসপাতালে পরিণত হয়। এরপর দার্জিলিং জেলার কার্সিয়াং-এ রায় পরিবারের নিজস্ব বাড়িতে 'এস বি দে স্যানাটোরারিয়াম' নামে দ্বিতীয় যক্ষ্মা হাসপাতাল গঠন করেন।
তিনি ও তাঁর সম্পর্কিত ভাই কিরণশঙ্কর রায় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের প্রভাবে স্বরাজ্য দলে যুক্ত হন। দেশবন্ধুর অনুপ্রেরণায় ফরিদপুর হতে বাংলার বিধান পরিষদের সদস্য হন, স্বরাজ্য দলের মুখ্য সচেতক হন। কলকাতা কর্পোরেশনের তথা পুরসভার কাউন্সিলর ও অল্ডারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি কলকাতার অক্রুর দত্ত লেনের বাড়িতে আহত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর আশ্রয় দিতেন।
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় মেডিক্যাল আন্দোলনে প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। বারো বৎসর তিনি এর সম্পাদক ও বেশ কয়েক বছর সভাপতি পদেও ছিলেন। ড. নীলরতন সরকারের প্রয়াণের পর তিনি আই. এম. এ জার্নালেরও দ্বিতীয় সম্পাদক হন।
জীবনাবসান :
কুমুদশঙ্কর রায় ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে অক্টোবর তামিলনাড়ুর ভেলোরে প্রয়াত হন।
স্মারক :
যাদবপুরে এশিয়ার সর্ববৃহৎ যক্ষ্মা হাসপাতালে কুমুদশঙ্করের উদ্যোগে ক্রমোন্নতি এবং প্রতি পর্যায়ে তাঁর অবদানের কথা স্মরণ রেখে তাঁর মৃত্যুর পর ওই হাসপাতালটি তাঁর নামাঙ্কিত হয়। প্রসঙ্গতঃ, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এই হাসপাতালে প্রয়াত হন। এই হাসপাতালের চত্বরে যৌথ উদ্যোগে বর্তমানে কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল স্থাপিত হয়েছে।
No comments