৭ নভেম্বর থেকে ৫ রাজ্যে ভোট, ফল ৩ ডিসেম্বর, লোকসভার প্রাক-যুদ্ধে ভরাডুবির শঙ্কায় মোদি
ক্রমেই একের পর এক নির্বাচনে দেশের মানচিত্রে ফিকে হচ্ছে গেরুয়া রং। হিমাচল প্রদেশ থেকে কর্ণাটক— বিধানসভা ভোটে বিজেপি লাগাতার পরাস্ত হয়ে চলেছে। এই…
৭ নভেম্বর থেকে ৫ রাজ্যে ভোট, ফল ৩ ডিসেম্বর, লোকসভার প্রাক-যুদ্ধে ভরাডুবির শঙ্কায় মোদি
ক্রমেই একের পর এক নির্বাচনে দেশের মানচিত্রে ফিকে হচ্ছে গেরুয়া রং। হিমাচল প্রদেশ থেকে কর্ণাটক— বিধানসভা ভোটে বিজেপি লাগাতার পরাস্ত হয়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতেই সোমবার ঘোষণা করা হল পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী নির্ঘণ্ট। আগামী ৭, ১৭, ২৩ ও ৩০ নভেম্বর বিধানসভা ভোট হবে ছত্তিশগড়, মিজোরাম, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং তেলেঙ্গানায়। ফলপ্রকাশ ৩ ডিসেম্বর। লোকসভা নির্বাচনের আগে এই সেমি-ফাইনালে বেশ ব্যাকফুটে প্রধানমন্ত্রীর দল। একে মহাজোট তৈরি করেছে বিরোধীরা। তার মধ্যে রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি ও যাবতীয় জনমত সমীক্ষার পূর্বাভাস, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে ফের বিজেপির শোচনীয় বিপর্যয়ের সম্ভাবনা চরমে। তেলেঙ্গানায় গেরুয়া শিবির সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপালেও সাফল্য পাওয়া মুশকিল। আর রাজস্থানে গোষ্ঠীকোন্দল থামার নাম নেই। মণিপুরের অশান্তির প্রভাব মিজোরামে পড়ার আশঙ্কাও যথেষ্ট। ফলে সর্বত্র ভরাডুবির আতঙ্কে ভুগছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে জল্পনা শুরু হয়েছিল ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন’ নিয়ে। কিন্তু তা যে আপাতত কার্যকর হচ্ছে না, এদিন তা স্পষ্ট হল।
পূর্ব ভারতের কোনও রাজ্যে বিজেপির সরকার নেই। দক্ষিণ ভারত কয়েক মাস আগে গেরুয়া-শূন্য হয়ে গিয়েছে। এবার লোকসভা ভোটের প্রাক-যুদ্ধে নরেন্দ্র মোদির অগ্নিপরীক্ষা— মধ্য ভারতে দলকে টিকিয়ে রাখা। কারণ, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে জয়ী হতে না পারলে সেখানে মুছে যাবে পদ্ম প্রতীকের অস্তিত্ব। সেক্ষেত্রে লোকসভা ভোটের আগে বৃহৎ রাজ্য হিসেবে বিজেপি সরকারের অস্তিত্ব টিকে থাকবে শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত এবং মহারাষ্ট্রে। ফলে চাপ বাড়ছে কেন্দ্রের শাসকদের উপর। তার উপর এই পাঁচ রাজ্যের ভোটযুদ্ধই হতে চলেছে ইন্ডিয়া বনাম এনডিএর প্রথম মহাসংগ্রাম। জনমত সমীক্ষা এবং রাজনৈতিক মহলের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় তো বটেই, তেলেঙ্গানাতে পর্যন্ত বিজেপির তুলনায় অনেক এগিয়ে কংগ্রেস।
রাজস্থান নিয়ে অবশ্য গেরুয়া শিবির কিছুটা আশাবাদী। সেটা মূলত দু’টি কারণে। এক, মরুরাজ্যের নির্বাচনী প্রবণতার রীতিই হল পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদলে যাওয়া। দুই, কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব। অশোক গেহলট বনাম শচীন পাইলট গোষ্ঠীর লড়াই ভোটের ফলাফলে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে প্রত্যাশা বিজেপির। কিন্তু তাদের সংসারেও যে অশান্তি চরমে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া বনাম দলের প্রদেশ নেতৃত্বের বিরোধে দল আড়াআড়ি বিভাজিত। বরং গেহলট অনেকটাই নাকি গুছিয়ে নিয়েছেন বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের। সুতরাং, নরেন্দ্র মোদির কাছে এখন প্রধান আশঙ্কা ৩ ডিসেম্বরের ফলাফলে বিরোধীরা পাঁচ এবং বিজেপি শূন্য হবে না তো? যদি সেটা হয়, সবথেকে বেশি সঙ্কট ঘনিয়ে আসবে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তির উপর। প্রমাণিত হবে, রাজ্যে রাজ্যে মোদি ম্যাজিক উধাও।
কিন্তু কেন এই আশঙ্কা? কারণ, কোনও রাজ্যেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কাউকে সামনে রাখেনি বিজেপি। এমনকী মধ্যপ্রদেশে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে পর্যন্ত রাখা হয়েছিল বৃত্তের বাইরে। সর্বত্র ভোট ঘোষণার এক মাস আগে থেকে প্রচারে নেমেছেন স্বয়ং মোদি। বলেছেন, মোদির গ্যারান্টিকে বিশ্বাস করে ভোট দিন। রাজ্যের ইস্যুকে ছাপিয়ে তাঁর প্রচারের ভরকেন্দ্র মহিলা সংরক্ষণ আইন থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের সুশাসন। এর মধ্যেই অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে চাপ বাড়িয়ে এদিন প্রকাশিত প্রার্থী তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন শিবরাজ। নিজের বুধনি আসন থেকেই তিনি লড়ছেন। এই পরিস্থিতিতে সব সমীক্ষাকে পরাস্ত করে বিজেপি সিংহভাগ রাজ্যে জয়ী হলে জোর ধাক্কা খাবেন রাহুল গান্ধী। এই রাজ্যগুলিতে সরাসরি লড়াই হচ্ছে কংগ্রেস বনাম বিজেপির। সুতরাং রাহুল ও প্রিয়াঙ্কার কাছেও এটা লিটমাস টেস্ট। ফলে ডেভিড বনাম গোলিয়াথের উপমা ভেসে বেড়াচ্ছে জাতীয় রাজনীতিতে। দলিত নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই হঠাৎ রাজ্যে রাজ্যে হাতের বিজয়কেতন উড়ছে। এমনকী লাদাখেও! এই রীতি লোকসভা পর্যন্ত বজায় থাকবে না তো? ভীত বিজেপি।
No comments