অতিবৃষ্টি ও ডিবিসির জলে প্রায় পাঁচটি জেলার বিস্তীর্ণ অংশ প্লাবিত
উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি ভারী বৃষ্টি এবং ডিভিসির ছাড়া জলে পুজোর মুখে দক্ষিণবঙ্গের পাঁচ জেলার বিস্তীর্ণ অংশ প্লাবিত হয়েছে। হাওড়া, বাঁকুড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং…
অতিবৃষ্টি ও ডিবিসির জলে প্রায় পাঁচটি জেলার বিস্তীর্ণ অংশ প্লাবিত
উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি ভারী বৃষ্টি এবং ডিভিসির ছাড়া জলে পুজোর মুখে দক্ষিণবঙ্গের পাঁচ জেলার বিস্তীর্ণ অংশ প্লাবিত হয়েছে। হাওড়া, বাঁকুড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার একাধিক এলাকায় পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। পাঁচ হাজারের বেশি মানুষকে ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা ভাবাচ্ছে রাজ্য প্রশাসনকে।
এদিন সকালে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিবদের নিয়ে নবান্নে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পায়ের চোট সারিয়ে উঠতে আরও সাত দিন সময় লাগবে। কালীঘাটের বাড়ি থেকেই পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন তিনি। এদিন বাড়ি থেকেই মুখ্যসচিবের ফোনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলা হল নৌকার মতো। সিকিম, বিহার, ঝাড়খণ্ড যেখানেই বেশি বৃষ্টি হোক না কেন, সেই জলে বাংলা ডুবে যায়। ডিভিসি জল ছাড়ায় পরিস্থিতি আরও বেসামাল হচ্ছে। আসলে এতো বেশি জল মুকুটমনিপুর এবং পাঞ্চেতে জমেছে যে জল না ছাড়লে বাঁধ ভেঙে যাবে। পরশু থেকে ডিভিসি ১.৭০ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছে। আমরা জল ছাড়ার পরিমাণ কমাতে বলেছি। এই পরিস্থিতিতে হাওড়া, বাঁকুড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে কোনও গাফিলতি যাতে না থাকে, সে বিষয়ে আধিকারিকদের সতর্ক করেন মমতা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুরের ঘাটাল-সবং, হুগলিতে খানাকুল এবং তারকেশ্বরের বিভিন্ন এলাকা ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। শিলাবতী, কেলেঘাই নদী ফুঁসছে। বিপদ সীমার উপর দিয়ে জল বইছে কংসাবতী ও সুবর্ণরেখায়। হাওড়ায় নিম্ন দামোদরও উপচে পড়ছে। ঝাড়গ্রামে, ডুলুং, কংসাবতী ও সুবর্ণরেখা এবং মুর্শিদাবাদে ভাগীরথী নদীতেও জলস্তর বেড়েছে। বীরভূমের মহম্মদবাজার, লাভপুরের বেশ কিছু গ্রামে বৃষ্টি ও নদীর জলে প্লাবনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে বহু জায়গায় কাঁচা বাড়ি ধসে গিয়েছে। উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুর পাঁচটি এনডিআরএফ দল নামানো হয়েছে। রয়েছে এসডিআরএফের টিমও।
দক্ষিণবঙ্গে এই পাঁচ জেলায় ১৭৮টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। যেখানে ৪৪৭৭জনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নতিবপুরের বাঁকা নগর এলাকায় মুন্ডেশ্বরী নদীর বাঁধে ধস নামায় বাসিন্দারা এদিন বিক্ষোভ দেখান। এদিন বাঁকুড়ার ইন্দাসে শালী নদী থেকে এক মহিলা অঞ্জলি সিংহ (৫০) এর দেহ উদ্ধার হয়েছে। পূর্তমন্ত্রী পুলক রায় সহ অন্যান্য মন্ত্রীদের দক্ষিণবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি এবং ত্রাণ কাজের তদারকির দায়িত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অন্য দিকে, বন্যা পরিস্থিতির জেরে বাতিল করা হয়েছে ২৩টি ট্রেন। টানা বৃষ্টিতে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের একাধিক লাইনে ধস নেমে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। খড়্গপুর ডিভিশনে রেল লাইনে ধসের জেরে হাওড়া-পুরী দুরন্ত এক্সপ্রেস বুধবার বাতিল ঘোষণা করেছে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ-পূর্ব রেলে লোকাল ও দুরপাল্লা মিলিয়ে ১৯টি ট্রেন এদিন রাত পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বাতিল ট্রেনগুলি হল- হাওড়া-পুরী শতাব্দী (আপ-ডাউন), শালিমার-এমজিআর চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস, হাওড়া-সত্য সাই প্রশান্তি, নীলায়ম এক্সপ্রেস, শালিমার-পুরী জগন্নাথ এক্সপ্রেস (আপ-ডাউন), শালিমার-পুরী এক্সপ্রেস, হাওড়া-পুরী এক্সপ্রেস ইত্যাদি। এছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বেশকয়েকটি দুরপাল্লার ট্রেনকে ঘুরপথে এদিন চালাতে হয়েছে। কয়েকটি ট্রেনের যাত্রাপথ সংক্ষিপ্তও করতে হয়েছে। এদিন রাত পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবারও একাধিক ট্রেন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছেন রেল কর্তারা।
No comments