রসায়নের নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন তিন বিজ্ঞানী
ন্যানো টেকনোলজিতে অসামান্য অবদান। ‘কোয়ান্টাম ডটস’ বা কোয়ান্টাম বিন্দু আবিষ্কার ও তা নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি। চলতি বছরে রসায়নের নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন তিন বিজ্ঞানী। তাঁরা হলেন, ম্যাসা…
রসায়নের নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন তিন বিজ্ঞানী
ন্যানো টেকনোলজিতে অসামান্য অবদান। ‘কোয়ান্টাম ডটস’ বা কোয়ান্টাম বিন্দু আবিষ্কার ও তা নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি। চলতি বছরে রসায়নের নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন তিন বিজ্ঞানী। তাঁরা হলেন, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক মৌঙ্গি বাওয়েন্ডি, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লুইস ব্রুস এবং ন্যানোক্রিস্টালস টেকনোলজি সংস্থার অ্যালেক্সি একিমভ। বুধবার স্টকহোমে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের তরফে এই তিন বিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করে হয়েছে। আধুনিক জীবনে কম্পিউটার মনিটর, টেলিভিশন স্ক্রিন ও এলইডি বাল্বের মতো অতি আবশ্যক সব সামগ্রী গড়ে উঠেছে অতি ক্ষুদ্র কোয়ান্টাম কণার স্বতন্ত্র ধর্মের উপর ভিত্তি করে। এই কণা বিচ্ছুরণ করে অতি উজ্জ্বল বর্ণের আলো— মেডিক্যাল ইমেজিং প্রক্রিয়াতেও যার ব্যবহার অত্যাবশ্যক। এই অসামান্য আবিষ্কারেরই স্বীকৃতি পেলেন তিন বিজ্ঞানী। জানিয়েছে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি। ঘটনাচক্রে এদিন সরকারিভাবে ঘোষণার আগেই তিন বিজ্ঞানীর নাম ফাঁস হয়ে যায় সুইডিশ সংবাদ মাধ্যমে। নজিরবিহীন এই ঘটনায় তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এবিষয়ে অ্যাকাডেমির মহাসচিব হান্স এলিগ্রিন বলেন, ‘ঠিক কী হয়েছে, তা জানতে সকাল থেকেই আমরা সক্রিয়। খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’ নোবেল জয়ের খবর জানাতে অ্যাকাডেমির তরফে এদিন অধ্যাপক বাওয়েন্ডির কাছে যখন ফোন যায়, তখনও তিনি ঘুমাচ্ছেন। সম্বিত ফেরার পর এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘আজ সকাল ন’টায় আমার ক্লাস রয়েছে। কী ঘটতে চলেছে তার কোনও ধারণাই নেই আমার!’ পরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ৬২ বছরের বাওয়েন্ডি বলেন, ‘আমি স্তম্ভিত, অবাক। প্রত্যাশাই করিনি। খুবই সম্মানিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘অ্যাকাডেমির তরফে ফোন আসার আগে কিছুই জানতাম না।’
৭৮ বছরের একিমভ ও ৮০ বছরের ব্রুস হলেন আটের দশকে ‘কোয়ান্টাম ডটস’ প্রযুক্তির অন্যতম পুরোধা বিজ্ঞানী। আর বাওয়েন্ডি ন’য়ের দশকে তাঁর গবেষণার মাধ্যমে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় একেবারে নিখুঁত ‘কোয়ান্টাম ডটস’ সৃষ্টি করেন। রসায়নে নোবেলজয়ী তিন বিজ্ঞানীই বর্তমানে মার্কিন নাগরিক। তবে বাওয়েন্ডি ফরাসি। আর একিমভের জন্ম সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ায়। অ্যাকডেমি তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, তিন বিজ্ঞানীর কাজ ইলেকট্রনিক্স, ন্যানো টেকনোলজির বিভিন্ন ক্ষেত্র ও স্বাস্থ্য গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।
‘কোয়ান্টাম ডটস’ কী?
‘কোয়ান্টাম ডটস’-কে হামেশাই ‘ন্যানো কণিকা’ বলে ডাকা হয়। আদতে এগুলি সেমিকন্ডাকটর ন্যানোক্রিস্টাল।
রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অতি ক্ষুদ্র এই কণাগুলির পরিধি মাত্র কয়েকটি পরমাণুর সমান। স্বতন্ত্র ধর্মের কারণে সেগুলি এখন টেলিভিশন স্ক্রিন থেকে এলইডি বাতি— সর্বত্র নিজেদের রঙিন ও উজ্জ্বল আলো ছড়াচ্ছে।
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অনুঘটক ভূমিকা পালন করতে পারে। এই কণার আলোয় সুস্পষ্ট আলোয় শল্যচিকিৎসকদের চোখের সামনে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে কোনও টিউমার টিস্যু, দাবি অ্যাকাডেমির।
পর্যায় সারণীর সুনির্দিষ্ট কিছু গোত্রের পদার্থ সংশ্লেষের মাধ্যমে ‘কোয়ান্টাম ডটস’ তৈরি হয়। অতি ক্ষুদ্র আকারের কারণে তাদের আলোক বিচ্ছুরণের ধর্ম দেখা যায়।
শুধুমাত্র রয়াসন নয়, কোয়ান্টাম ফিজিক্সেও এই কণার তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কোয়ান্টাম বাইটস বা কিউ বাইট ও কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির ক্ষেত্রে তারা অত্যাবশ্যক।
কোয়ান্টাম কমিউনিকেশনস ও কোয়ান্টাম কম্পিউটারের গবেষণায় নজর দিয়েছে ভারতও। এই গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা ইসরো।
No comments