একটা ভালো গান শোন। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।’
আসলে মন খারাপ, উদাসীনতা, ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ— সব কিছুর অব্যর্থ দাওয়াই এই ‘গান’ (বৃহৎ অর্থে সঙ্গীত)। এটা কেবল কথার কথা নয়, বরং রয়েছে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞা…
একটা ভালো গান শোন। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।’
আসলে মন খারাপ, উদাসীনতা, ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ— সব কিছুর অব্যর্থ দাওয়াই এই ‘গান’ (বৃহৎ অর্থে সঙ্গীত)। এটা কেবল কথার কথা নয়, বরং রয়েছে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বহুল প্রচলিত ধারা হল সঙ্গীতের ব্যবহারে রোগ নিরাময়। বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘মিউজিক থেরাপি’। কেবল মানসিক রোগ নয়, বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, শারীরিক নানা ব্যাধিও নিরাময় হয় এই থেরাপিতে।
কীভাবে হয় মিউজিক থেরাপি?
সঙ্গীতের মতোই শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আলাদা সুর, ছন্দ, তাল, লয় রয়েছে। পছন্দের সঙ্গীত বা সুর প্রভাব ফেলে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে। এটি সব আবেগের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। পছন্দের গান তথা শ্রুতিমধুর শব্দে তারা উদ্দীপিত হয়। স্নায়ুতন্ত্রকেও উজ্জীবিত করে সঙ্গীত। তবে মিউজিক থেরাপি বলতে হেডফোনে গান শোনা বোঝায় না। বরং লঘু সুরের গান বা মিউজিক ছোট বক্সে চালিয়ে শোনানো হয় রোগীকে। সেতার, সরোদ, ভায়োলিনের মতো বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েও শোনানো হয়। রোগীর সংস্কৃতি, পরিপার্শ্ব, পছন্দ, রুচি, রোগ দেখে সঙ্গীত ও চিকিৎসা প্রক্রিয়া নির্বাচন করেন চিকিৎসক। । অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই থেরাপির ফলে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থতার দিকে ফিরছেন।
উপকারিতা: মিউজিক থেরাপি কখনওই একমাত্র সমাধান নয়। যে কোনও রোগের অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির পাশাপাশি মিউজিক থেরাপি করলে দ্রুত আরোগ্য মেলে। আবার, বড় অস্ত্রোপচারের পর মিউজিক থেরাপির সাহায্য নিলে মেজাজ ফুরফুরে থাকে।
১. মানসিক চাপ বা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে মিউজিক থেরাপি। রোগীর মনে যে ঝড় বইছে, তা প্রশমিত করতে অত্যন্ত উপকারী সঙ্গীত।
২. অটিজম আক্রান্তদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি হল মিউজিক থেরাপি। এই রোগ কম বয়সে ধরা পড়ে। সেক্ষেত্রে তখন থেকেই মিউজিক থেরাপি চালু করলে তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের জন্যও এই থেরাপি উপকারী।
৩. ডিমেনশিয়া বা অ্যালজাইমারের রোগীদের মানসিক অবস্থা উন্নত হয়।
৪. অবসাদ কাটানোর মোক্ষম ওষুধও এটি।
৫. স্লিপ ডিসঅর্ডার বা ঘুমের নানা সমস্যার সমাধানে কার্যকরী এটি।
৬. এই থেরাপিতে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে থাকে। দুশ্চিন্তা দূর হয়। ক্লান্তি কমে।
৭. হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। হাইপ্রেশার বা হার্টরেট নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৮. গর্ভবতী মায়েরা থেরাপি নিলে, শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ভালো হয়।
মনে রাখবেন
শাস্ত্রীয় রাগের নিয়ম মেনে মিউজিক থেরাপি করলে সুবিধা অনেক বেশি। যেমন— ভৈরবী সকালের জন্য আদর্শ। দুপুরের দিকে শোনা যায় পিলু। সন্ধ্যায় ইমন ও রাতে কেদার। প্রকৃতির শব্দ থেরাপিতে কাজে লাগে। বাড়িতে মিউজিক থেরাপি : বাড়িতেই সম্ভব মিউজিক থেরাপি। দিনে ১৫ মিনিট করে অন্তত চারবার পছন্দের সঙ্গীত বা সুর শুনুন। ছোট থেকে বাচ্চাদের ভালো গান শোনানোর অভ্যেস করুন। গান-বাজনার চর্চা করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
No comments