এক মাসে হলদিয়া শহরে সাইবার প্রতারণায় গায়েব প্রায় ১০ লক্ষ
গত একমাসে বন্দর শহরে একাধিক ব্যক্তি সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রতারণার ঘটনায় খোয়া গিয়েছে মোট প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। কাস্টমসের আধিকারিক, নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে…
এক মাসে হলদিয়া শহরে সাইবার প্রতারণায় গায়েব প্রায় ১০ লক্ষ
গত একমাসে বন্দর শহরে একাধিক ব্যক্তি সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রতারণার ঘটনায় খোয়া গিয়েছে মোট প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। কাস্টমসের আধিকারিক, নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের কম্পিউটারের শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া থেকে পেট্রকেমের ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, গৃহবধূ সকলেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কয়েকজনের আধারের তথ্য ও আঙুলের ছাপ চুরি করে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দিয়েছে প্রতারকরা। কেউ অনলাইন গেমের ফাঁদে পড়ে টাকা খুইয়েছেন, আবার কেউ অনলাইনে পুরনো টিভি বিক্রি করতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। কোনও ব্যবসায়ী আবার সাইবার ঠগিদের পাল্লায় পড়ে টাকা এবং দোকানের মাল দুটোই খুইয়েছেন। হলদিয়া, ভবানীপুর, দুর্গাচক এবং লাগোয়া মহিষাদল থানায় এ ধরনের ১১টি অভিযোগ সম্প্রতি নথিভুক্ত হলেও ছোটখাট সাইবার প্রতারণার ঘটনা এর কয়েক গুণ বলে পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে। গত ছ' মাসে বন্দর শহরে বিভিন্ন থানা এলাকায় সাইবার প্রতারণার ঘটনা মাত্রাছাড়া আকার নিয়েছে বলে অভিযোগ। হলদিয়া এবং ভবানীপুর থানা এলাকাতেই বাসিন্দারা বেশি প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ১১টি বড় সাইবার প্রতারণার ঘটনার মধ্যে ছ'টি ঘটেছে হলদিয়া ও ভবানীপুর থানা এলাকায়। ওই এলাকায় একাধিক শিল্পসংস্থা এবং সরকারি ও বেসরকারি আবাসন রয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা প্রায়ই সাইবার প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন বলে লক্ষ্য করা গিয়েছে। সম্প্রতি স্টেট ব্যাঙ্কের ক্রেডিট কার্ড ডিপার্টমেন্টের কর্মী বলে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে হলদিয়ার বৈষ্ণবচকের বাসিন্দা অক্ষয়কুমার প্রধানের ১ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাইবার ঠগিরা। প্রতারকদের পরামর্শমতো অ্যাপ ডাউনলোড করতে গিয়েই বিপদে পড়েন তিনি। একইভাবে,
দুর্গাচকের স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে ফোন করছি, বলে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে সাইবার প্রতারকরা মহিষাদলের লক্ষ্যার মাসুড়িয়ার বাসিন্দা অর্জুনচন্দ্র মাইতির ২ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা গায়েব করেছে বলে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কয়েকদিন আগেই হলদিয়ার টাউনশিপের তুষার অ্যান্টনি রায় নামে এক শিক্ষককে কেওয়াইসি ফর্ম পূরণের নামে ভুয়ো ব্যাঙ্ক কর্মীর পরিচয় দিয়ে ১ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আবার অনলাইনে গেম খেলে টাকা আয় করার লোভে প্রতারিত হয়েছেন হলদিয়ার একটি নামী স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষক। তিনি গেম খেলতে গিয়ে ৬০ হাজার টাকা খুইয়েছেন।
তদন্তকারী পুলিস আধিকারিকরা জানিয়েছেন, শিল্পশহরে অনলাইনে প্রতারণার পাশাপাশি আধার তথ্য ও আঙুলের ছাপ চুরি করে সাইবার প্রতারকরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাপিস করে দিচ্ছে। সম্প্রতি বন্দর এলাকায় চিরঞ্জীবপুরে শুল্ক বিভাগের এক আধিকারিকের এভাবে আধার এনাবেলড পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে টাকা খোয়ানোর ঘটনায় তাজ্জব পুলিস। রাঁচির বাসিন্দা প্রদীপ কুমার নামে ওই আধিকারিকের ১০ হাজার টাকা তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতারকরা তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ। একজন পদস্থ আধিকারিকের টাকা কীভাবে সাইবার প্রতারকরা তুলে নিয়েছে তা নিয়ে পুলিস রীতিমতো ধন্দে পড়েছে। তবে হলদিয়া এলাকায় গত দেড়মাসে আঙুলের ছাপ চুরি করে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এই ঘটনায় মূলত বয়স্ক ও মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট টার্গেট করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিস। তবে সিংহভাগ ঘটনাই ঘটছে স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে। পুলিস জানিয়েছে অনলাইন প্রতারণার ধরন খানিকটা পাল্টেছে। এখন আঙুলের ছাপ চুরি করেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা বেড়েছে।
No comments