Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

কবি-ইঞ্জিনীয়ারের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

কবি-ইঞ্জিনীয়ারের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি
বিনয় মজুমদার বা মংটু (জন্ম : ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪ - মৃত্যু : ১১ ডিসেম্বর, ২০০৬) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি ও ইঞ্জিনিয়ার।
জীবনী : কবি বিনয় মজুমদার মায়ানমারের মিকটিলা জেলার টোডো ন…

 



কবি-ইঞ্জিনীয়ারের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি


বিনয় মজুমদার বা মংটু (জন্ম : ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪ - মৃত্যু : ১১ ডিসেম্বর, ২০০৬) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি ও ইঞ্জিনিয়ার।


জীবনী : 

কবি বিনয় মজুমদার মায়ানমারের মিকটিলা জেলার টোডো নামক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম বিপিনবিহারী মজুমদার, মায়ের নাম বিনোদিনী। তাঁরা ছিলেন ছয় ভাই-বোন এবং তিনি ছিলেন সবার ছোটো। "ফিরে এসো চাকা" ছিল তাঁর অতি জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ।


শিক্ষা জীবন : 

১৯৪২ সালে তাঁকে বাংলাদেশের একটি স্কুলে ভর্তি করা হয়। ১৯৪৪ সালে তিনি প্রথম বিভাগে ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৯৪৬ সালে তাঁকে বৌলতলী উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়। ১৯৪৮ সালে দেশভাগের সময় তাঁরা সপরিবারে ভারতের কলকাতায় চলে আসেন। এখানে, ১৯৪৯ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁকে ক্রিক রো-রতে অবস্থিত মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট (বউবাজার ব্রাঞ্চ)-এ নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হবার পরে, ১৯৫১ সালে আই.এসসি. (গণিত) পড়ার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে তিনি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে পাশ করেন। শোনা যায়, তাঁর পাওয়া নম্বর আজও কেউ নাকি ভাঙতে পারেন নি। ১৯৫৭ সালে শিবপুর বি. ই. কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। ১৯৫৮ সালের জানুয়ারি মাসে, অর্থাৎ ছাত্রজীবন সমাপ্ত হবার কয়েকমাস পরেই এনবিএ থেকে প্রকাশিত হয় "অতীতের পৃথিবী" নামক একটি অনুবাদ গ্রন্থ। এই বছরেই গ্রন্থজগৎ থেকে বের হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'নক্ষত্রের আলোয়'। ১৯৫৩-৫৭ সাল পর্যন্ত রুশ ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করে কিছু রুশ সাহিত্য বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন।


কর্মজীবন :

ইঞ্জিনিয়ারিং পাশের পর চাকরি করেছেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট, ত্রিপুরা গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। 


কবিজীবন : 

বৌলতলি হাই-ইংলিশ স্কুলের ম্যাগাজিনে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ত্রিপুরা গভর্নমেন্ট কলেজে অল্পকিছুদিন শিক্ষকতা করার পর স্থির করেন শুধুই কবিতা লিখবেন। লেখা শুরু করেন 'ফিরে এসো চাকা'। এই সময় তিনি দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টেও কিছুদিন কাজ করেন। তখন থেকেই মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যায়। ১৯৬৬ সালে লিখতে শুরু করেন 'আঘ্রাণের অনুভূতিমালা' ও 'ঈশ্বরীর স্বরচিত নিবন্ধ'। বিশটির কাছাকাছি কাব্যগ্রন্থ লিখেছিলেন। যার মধ্যে "ফিরে এসো চাকা" তাঁকে সবচেয়ে বেশি খ্যাতি দিয়েছে। এছাড়াও নক্ষত্রের আলোয়, গায়ত্রীকে, অধিকন্তু, ঈশ্বরীর, বাল্মীকির কবিতা, আমাদের বাগানে, আমি এই সভায়, এক পংক্তির কবিতা, আমাকেও মনে রেখো- ইত্যাদি রচনা করেছিলেন। রহস্যময়তা, প্রতীকের সন্ধান, জড় ও প্রাণের সম্পর্কে ব্যাখ্যা ছিল তাঁর কবিতার মর্মবস্তু। এর সাথে মৌলিক প্রতিমা নির্মাণ, বিশিষ্ট অন্বয় এবং ভাবের ও আবেগের তীব্রতা নিবিড়তা স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে। ১৯৬২-৬৩ সালে বিনয় মজুমদার হাংরি আন্দোলন-এ যোগ দেন এবং তাঁর কয়েকটি কবিতা হাংরি বুলেটিনে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে, অর্থাৎ ১৯৬৩ সালের শেষ দিকে তিনি শক্তি চট্টোপাধ্যায় এবং সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়-এর কার্যকলাপে বিরক্ত হয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে একটি হাংরি বুলেটিন প্রকাশ করে কলকাতা কফিহাউসে বিলি করার পর হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করেন।


কাব্যগ্রন্থ সমূহ :

নক্ষত্রের আলোয় (১৯৫৮)

গায়ত্রীকে (১৯৬১)

ফিরে এসো চাকা (১৯৬২)

ঈশ্বরীর (১৯৬৪)

অধিকন্তু (১৯৭২)

আঘ্রাণের অনুভূতিমালা (১৯৭৪)

বাল্মীকির কবিতা (১৯৭৬)

শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৮২)

আমাদের বাগানে (১৯৮৫)

আমি এই সভায় (১৯৮৫)

এক পঙক্তির কবিতা (১৯৮৮)

কাব্যসমগ্র (১ম) (১৯৯৩)

আমাদের মনে রেখো (১৯৯৫)

আমিই গণিতের শূন্য (১৯৯৬)

স্বনির্বাচিত ১৬ (১৯৯৭)

এখন দ্বিতীয় শৈশবে (১৯৯৯)

কবিতা বুঝিনি আমি (২০০১)

কাব্যসমগ্র (২য়) [২০০২]

হাসপাতালে লেখা কবিতাগুচ্ছ (২০০৩, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্ত গ্রন্থ-২০০৫)

সমান সমগ্র সীমাহীন (২০০৪)

শিমূলপুরে লেখা কবিতা (২০০৫)

পৃথিবীর মানচিত্র (২০০৬)

বিনোদিনী কুঠী (২০০৬)

একা একা কথা বলি (২০০৬)

নির্বাচিত কবিতা (২০০৬)

ছোটো ছোটো গদ্য ও পদ্য (২০০৬)

আকাশে চাঁদ নেই অথচ আজিকে পূর্ণিমা [যুগ্ম প্রেমের কবিতা গ্রন্থ] (২০০৬)

দুপুরে রচিত কবিতা (২০০৬)

নির্মাণের খসড়া (২০১৭)। 


মৃত্যু : 

কবিতার জগতে তাঁর স্বকীয়তা এবং বিজ্ঞানে, বিশেষত গণিতে প্রগাঢ় আগ্রহ নিয়ে প্রথম থেকেই প্রথা ভেঙ্গে এগোচ্ছিলেন তিনি। ফলে সমকালীন কাব্যজগত হতে পৃথক জায়গায় ছিলেন। এর সাথে তাঁর নিজের কিছুটা অসুস্থতা, কিছুটা সচেতন বিচ্ছিন্নতা তাঁকে কষ্ট দিয়েছে। ফলে দীর্ঘ সময় ঠাকুরনগরে নিজের বাড়িতে একা থাকতেন। ১৯৮৭ সাল নাগাদ বিনয় মানসিক ব্যাধির কারণে দীর্ঘদিন কলকাতা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অনটনে ভুগেছেন। প্রতিবেশীরাই তাঁর দেখাশোনা করতেন। শেষে দীর্ঘদিন রোগভোগের পর ২০০৬ সালের ১১ই ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


পুরস্কার লাভ : 

তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর আগে তাঁকে দুটি বড় পুরস্কার দেওয়া হয়, রবীন্দ্র পুরস্কার এবং সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার।


তাঁর সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারের পদক তাঁর বাসভবনের পাশে বিনয় মজুমদার স্মৃতি রক্ষা কমিটি গ্রন্থাগারে রাখা ছিল। সেখান থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চুরি হয়ে যায় পদকটি। এখনও এটির কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।


No comments