আড়াই মাস উপাচার্য নেই মহিষাদলের মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ে । আর তাতেই হাজার সমস্যা তৈরি হয়েছে । থমকে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ কাজ । বন্ধ হয়েছে কর্মরত অধ্যাপক থেকে কর্মী, আধিকারিকদের মাসিক বেতন । এই প্রভাব পড়েছে বিশ…
আড়াই মাস উপাচার্য নেই মহিষাদলের মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ে । আর তাতেই হাজার সমস্যা তৈরি হয়েছে । থমকে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ কাজ । বন্ধ হয়েছে কর্মরত অধ্যাপক থেকে কর্মী, আধিকারিকদের মাসিক বেতন । এই প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রশাসনিক কাজেও । সেই সঙ্গে পঠন পাঠনে পরিকাঠামো ব্যবহারের ক্ষেত্রে মহিষাদল রাজ কলেজে তৈরি হয়েছে বাড়তি উদ্বেগ । কবে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন পাঠনের কাজ সরানো হবে এই প্রশ্ন জোরালো হয়েছে ।
২০১৮ সালের ২ অক্টোবর মহিষাদলের বামুনিয়া মৌজায় মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী । সেখানে ২০ একর জায়গা জুড়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো গড়ে ওঠার কথা । ২০১৯ সালে রাজ্যের তরফে নির্মাণ কাজের জন্য ২০ কোটি টাকা দেওয়া হয় । সেই টাকায় ইতিমধ্যে সীমানা প্রাচীর তৈরির কাজ শেষ হয়েছে । নির্মিত হয়েছে দুটি বিশাল মাপের গেট । বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভবন নির্মাণে হয়েছে ভিতের কাজ । ব্যাস তাতেই শেষ কুড়ি কোটি টাকা ।
টাকার অভাবে থমকে রয়েছে বাকি কাজ । কিন্তু বামুনিয়াতে নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন পাঠন । সেক্ষেত্রে মহিষাদল রাজ কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ।কলেজের বিস্তীর্ণ পরিকাঠামো থাকার সুবাদে আটটি রুমে গণিত,ইংরেজি, বাংলা এবং ইতিহাস চারটি বিষয়ে পঠন-পাঠন চলছে । সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠনের কাজে বিষয়ভিত্তিক বৈচিত্র্য আনতে এপিডেমিওলজি, ডিফেন্স সায়েন্স উইথ এনসিসি ইম্প্লিকেশন, ডাটা সায়েন্স এবং ফিশারি সায়েন্স চালু করার ছাড়পত্র মিলেছে । নিমতৌড়িতে মাতঙ্গিনী সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয় এর চারটি রুম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চারটি বিষয়ে পঠনপাঠনের অতিরিক্ত পরিকাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে । আর এই গতিশীল উদ্যোগের মধ্যেই উপাচার্যের অনুপস্থিতি ঠিক যেন ইন্দ্রপতনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে । যার ফলে বড় ধাক্কা খেয়েছে প্রশাসনিক কাজ । বন্ধ হয়ে গিয়েছে ব্যাংক সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পঠন-পাঠনে যুক্ত থাকা অধ্যাপক, অধ্যাপিকা থেকে অফিসের কর্মী,আধিকারিক মোট ৪১ জন গত তিন মাস ধরে এক টাকাও পাননি । মেটানো সম্ভব হচ্ছে না বিদ্যুৎ বিল সহ অন্যান্য খরচ । কলেজে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রেও জটিলতা তৈরি হয়েছে । বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা মণিশংকর মাইতি জানান, " উপাচার্য না থাকার কারণে যত কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে । আমাদের ব্যাংক সংক্রান্ত কোনো কাজ করতে পারছি না । টানা তিন মাস কর্মী থেকে অধ্যাপক কাউকে টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি । বিদ্যুতের বিল মেটাতেই পাচ্ছিনা । বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে মসৃণতা আনতে এখনই ১৬ জন শিক্ষক এবং ২০ জন অশিক্ষক কর্মচারি নিয়োগ করা জরুরি হয়ে পড়েছে । কিন্তু নতুন কোন অধ্যাপক কিংবা কর্মী নিয়োগ করাও সম্ভব হচ্ছে না । থমকে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো নির্মাণ কাজ । বিষয়টিতে রাজ্য সরকারের পাশাপাশি, রাজ্যপালের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে । জানিনা কবেই সমস্যার সমাধান করবে ।" এই পরিস্থিতিতে মহিষাদলের বিধায়ক, তথা মহিষাদল রাজ কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তিলক চক্রবর্তী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন । সেজন্য রাজ্যের রাজ্যপালকে তিনি সরাসরি দায়ী করেছেন । তিনি বলেন, " বিধানসভায় মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো নির্মাণ বিষয়ে উদ্ভূত সমস্যার কথা তুলে ধরেছি । উপাচার্য না থাকার কারণে বহু কাজ থমকে রয়েছে । রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের সঙ্গে প্রশাসনিক কাজে সহযোগিতা করছেন না বলেই এমন নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে । রাজ্যপালের এই খবরদারি সমর্থন করা যায় না । বামুনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হলে খুব ভালো হয় ।
যত দ্রুত সম্ভব আমাদের কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠনের কাজ সরানো সম্ভবত । কিন্তু উপাচার্যহীন অবস্থা । কবে এই জটিলতা কাটবে কে জানে ।" জানা গিয়েছে রাজ্যের ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪ টি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো উপাচার্যহীন অবস্থায় রয়েছে । মহিষাদলের মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয় তার মধ্যে একটি । প্রশাসনিক স্তরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তিনটি নাম পাঠানো হয়েছে । কিন্তু কবে যে তাতে সরকারি সিলমোহর পড়বে তা নিয়ে উৎকণ্ঠা থেকেই যায় ।
No comments