ভোটের মুখে শাসকদলের উদ্যোগে উদ্বাস্তুদের পোর্টের প্রশাসনিক ভবনে ডেপুটেশনউচ্ছেদ অভিযানে কড়া প্রতিরোধ গড়তে মরিয়া উদ্বাস্তু উন্নয়ন সমিতিপুনর্বাসনের পাকাপাকি ব্যবস্থা এবং চাকরির দাবি সামনে রেখে লড়াই, আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে হল…
ভোটের মুখে শাসকদলের উদ্যোগে উদ্বাস্তুদের পোর্টের প্রশাসনিক ভবনে ডেপুটেশন
উচ্ছেদ অভিযানে কড়া প্রতিরোধ গড়তে মরিয়া উদ্বাস্তু উন্নয়ন সমিতি
পুনর্বাসনের পাকাপাকি ব্যবস্থা এবং চাকরির দাবি সামনে রেখে লড়াই, আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে হলদিয়া উদ্বাস্তু ক্ষতিগ্রস্ত বস্তি উন্নয়ন সমিতি। ১৮ আগস্ট, শুক্রবার হলদিয়া টাউনশিপে হলদিয়া বন্দরের প্রশাসনিক ভবন জওহর টাওয়ারে সমিতির ডেপুটেশন কর্মসূচি রয়েছে। জানা গিয়েছে, সেই ডেপুটেশন কর্মসূচিতে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, তৃণমূল কংগ্রেসের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র, আন্দোলনকারী সংস্থার সভাপতি দেবপ্রসাদ মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক জ্যোতি প্ৰসাদ দাস প্রমুখ উপস্থিত থাকছেন। উদ্বাস্তু ক্ষতিগ্রস্তদের উচ্ছেদ করতে এলে কঠিন প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে হলদিয়া বন্দরকর্তাদের। আগাম সেই বার্তাও দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদের প্রতিবাদে এমন ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে উদ্বাস্তু পরিবারগুলি। কঠিন প্রতিরোধ গড়তে এককাট্টা হলদিয়া উদ্বাস্তু ক্ষতিগ্রস্ত বস্তি উন্নয়ন সমিতি।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশকে শিখণ্ডি করে বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে হুগলি নদীর পাশে কারখানা লাগোয়া বেশ কিছু বাড়ি এবং দোকান ভেঙেছে। সেই এলাকায় উদ্বাস্তু পরিবারের সংখ্যা খুবই কম। স্বাভাবিকভাবে দশদিন আগের সেই উচ্ছেদ অভিযানে প্রতিবাদ ছিল না। তবে এবার উচ্ছেদ অভিযানে কড়া প্রতিরোধ গড়তে মরিয়া উদ্বাস্তু ক্ষতিগ্রস্ত বস্তি উন্নয়ন সমিতি।
জানা গিয়েছে, হলদিয়া বন্দর এবং শিল্পতালুক গড়ার প্রয়োজনে ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ সালের মধ্যে হলদি এবং হুগলি নদীর সংযোগস্থলে হলদিয়া এলাকায় প্রায় আড়াইশো মৌজা অধিগ্রহণ করে হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। উচ্ছেদ হতে হয় প্রায় ৫ হাজার পরিবারকে। কিন্তু উচ্ছেদের শর্ত অনুযায়ী, জমি ও বসতবাড়ির ক্ষতিপূরণ এবং যোগ্যতা অনুযায়ী পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার কথা ছিল।
ধাপে ধাপে প্রায় তিন হাজার পরিবার সেই সুযোগ পেলেও এখনও বাদ থেকেই গিয়েছে প্রায় ২০০০ পরিবার। ক্ষতিপূরণ পেলেও পায়নি পুনর্বাসনের উপযুক্ত জায়গা। নিরুপায় হয়ে ফাঁকা - জায়গায়, কেউ বা খালপাড়ে, অব্যবহৃত জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কলকাতা হাই কোর্টের অনুমতি নিয়ে পুলিশের সহযোগিতায় এখন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। বর্ষায় এমন অভিযানে বড় সমস্যায় পড়েছেন উদ্বাস্ত পরিবারের লোকজন। উদ্বেগ, আতঙ্কে তাঁদের দিন কাটছে। বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (এম অ্যান্ড এস) প্রবীণকুমার দাস বলেন, “হাই কোর্টের নির্দেশ মেনেই উচ্ছেদ করা হবে। ধাপে ধাপে এলাকা ধরে চলবে সেই কাজ।” এদিকে, হলদিয়ার পাতিখালি, কুমারচক, চিরঞ্জীবপুর, রাণিচক, ব্রজনাথচক, বিষ্ণুরামচক, সাঁওতানচক-সহ বেশকিছু এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে প্রস্তুত বন্দরকর্তারা। তবে তাদের এমন পদক্ষেপ কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না উদ্বাস্তু পরিবারের লোকজন।
উদ্বাস্তু ক্ষতিগ্রস্ত বস্তি উন্নয়ন সমিতির সভাপতি দেবপ্রসাদ মণ্ডল জানিয়েছেন, “হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ হঠকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। বন্দরের লোকজন উচ্ছেদ করতে গেলে উদ্বাস্তু পরিবারগুলিও যোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুত। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে, চাকরির শর্ত পূরণ না করে হঠকারিতা করছেন বন্দরকর্তারা। তাঁরা জমি দিয়েছেন বলেই বন্দর গড়ে উঠেছে। অথচ তাঁদেরকে আজ অসহায়ভাবে কষ্টের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের এমন হঠকারী পদক্ষেপ আমরা মানছি না। আমরা তৈরি আছি ওদের জবাব দিতে।” ১৮ আগস্ট, শুক্রবার হলদিয়ার বিদ্যাসাগর মোড় থেকে অয়েল জেটি পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তার ধারে দোকান এবং বস্তি উচ্ছেদের কথা ঘোষণা করা হয়েছে বন্দরের তরফে। এদিন উচ্ছেদ অভিযান হবে, নাকি আন্দোলনের ঝাঁঝে পিছু ঘটবে বন্দর কর্তৃপক্ষ সেটাই এখন দেখার বিষয়।
No comments