ঘর শত্রু বিভীষণ! শাসকের চিন্তা ‘ঘরের ছেলেরা’ই
পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল বিধানসভার অন্তর্গত মহিষাদল ও হলদিয়া উন্নয়ন পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের লড়াই এ বার একদা ঘরের ছেলে চার বাঘা নেতার সঙ্গে। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে পদ্ম প্রতীক…
ঘর শত্রু বিভীষণ! শাসকের চিন্তা ‘ঘরের ছেলেরা’ই
পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল বিধানসভার অন্তর্গত মহিষাদল ও হলদিয়া উন্নয়ন পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের লড়াই এ বার একদা ঘরের ছেলে চার বাঘা নেতার সঙ্গে। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে পদ্ম প্রতীকে লড়ছেন তৃণমূলের ওই চার প্রাক্তন জনপ্রতিনিধি। ফলে, দুই ফুলের টক্কর এখানে জোরদার হওয়ারই আশা।
বিজেপির দাবি, শুধু এই চার জনই নয়, এর বাইরে আরও ২০-২২ জন তাদের প্রতীকে বিভিন্ন আসনে লড়াই করছেন, যাঁরা গত ভোটেও তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যদিও এই দাবি উড়িয়ে তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, দলত্যাগীদের ভোট দেবেন না মহিষাদলের জনতা। জিতবে ঘাসফুলই। কিন্তু একঝাঁক প্রাক্তন দুদে তৃণমূল নেতা কেন লড়ছেন পদ্ম প্রতীকে— ভোট মরসুমে চলছে তারই চর্চা। এঁদের দলত্যাগ নিয়ে তৃণমূলের দাবি, এঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত। তাই পিঠ বাঁচাতে বিজেপিতে গিয়েছেন। অন্য দিকে, বিজেপি-র এই নব্য নেতাদের দাবি, তৃণমূলের দুর্নীতি মানতে না পারাতেই তাঁদের দল ছাড়তে হয়েছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে লড়ছেন চন্দন সামন্ত, যিনি ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত হলদিয়া উন্নয়ন ব্লকের অধীন তৃণমূল পরিচালিত বাড় উত্তর হিংলি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। পরের পাঁচ বছর ছিলেন হলদিয়া উন্নয়ন পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি। এ বার কেন বিজেপিতে? চন্দনের দাবি, "তৃণমূল নেতৃত্বের নির্দেশ সত্ত্বেও বেআইনি কাজ না করায় মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে আমাকে। জেলে ভরা হয়েছে পুলিশ কে দিয়ে। এই হচ্ছে বর্তমানে তৃণমূল। এই প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার হয়ে ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।"
ইটামগরা ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে লড়ছেন
5
রামকৃষ্ণ দাস। তিনি এই গ্রাম পঞ্চায়েতেই ২০০৮ থেকে টানা ১০ বছরের প্রধান ছিলেন। পরে প্রধান পদ মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় উপপ্রধান হন। রামকৃষ্ণেরও দাবি, "যাঁরা বলছেন দুর্নীতির কারণে আমরা দল ছেড়েছি, তাঁদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা'য় জেলায় একমাত্র পুরস্কার এনেছি। পঞ্চায়েতের নিজস্ব আয় তৈরি করে রাজ্যে নজর কেড়েছি। আমার গ্রাম পঞ্চায়েতই একমাত্র পঞ্চায়েত যেখানে জনগণের অভিযোগ দায়েরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দুর্নীতি করলে এসব করা যায়?” তাঁরও দাবি, “দুর্নীতির পাঁকে ডুবে থাকা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে থাকা যায় না বলেই দলটা ছেড়েছি।” আরেক বিজেপি প্রার্থী শ্যামল সিংয়ের কথায়, "২০০৮-১৩ গড় কমলপুর পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রধান ছিলাম। পরের পাঁচ বছর মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যও করেছিল। তৃণমূল। ফের পরের পাঁচ বছর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। তখন তো দুর্নীতির অভিযোগ তোলেনি? আজ দল ছাড়ার পরে বললে মানুষ শুনবেন কেন!”
একই এলাকার এত জনপ্রতিনিধি ছাড়লেন কেন? জবাবে দল মহিষাদলের তৃণমূল বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী বলেছেন, "এঁরা সবাই পঞ্চায়েতে ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন। জনগণের টাকা লুট করেছে। এখন পিঠ বাঁচাতে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। ঠিক যেমনটা ওঁদের গুরু শুভেন্দু অধিকারী।” তাঁর দাবি, “ওঁদের নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। জনগণ ওঁদের প্রত্যাখ্যান করবে।" মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী বিরোধী দলনেতা বিজেপির বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য - কটাক্ষ, “২০১৬ তে প্রায় ১৫ হাজার ভোটে জেতা আসন গতবার তিলক জিতেছেন মাত্র ২,৮০০ ভোটে। এই ঘাসফুল ছেড়ে বিজেপির টিকিটে পঞ্চায়েতে কপাল থেকে তিলক মুছেই দেবে মহিষাদল।"
No comments