পঞ্চায়েত ভোটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে হলদিয়া পুরসভাহলদিয়া ও সুতাহাটা ব্লকের পঞ্চায়েত ভোটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে হলদিয়া পুরসভা। প্রশাসন সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ভোট মিটলেই শুরু হবে হলদিয়া পুরভোটের প্রস্তুতি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের গোড়ায় পুরব…
পঞ্চায়েত ভোটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে হলদিয়া পুরসভা
হলদিয়া ও সুতাহাটা ব্লকের পঞ্চায়েত ভোটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে হলদিয়া পুরসভা। প্রশাসন সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ভোট মিটলেই শুরু হবে হলদিয়া পুরভোটের প্রস্তুতি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের গোড়ায় পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরনোর পর পুরসভা আপাতত প্রশাসক নির্ভর। ১০ মাসের বেশি সময় ধরে বোর্ড না থাকায় পুরসভার উন্নয়নমূলক কাজ থমকে গিয়েছে বলে অভিযোগ। নতুন বোর্ড গঠনের জন্য দ্রুত পুরভোটের দাবি জানিয়েছে সমস্ত রাজনৈতিক দল। এই পরিস্থিতিতে সুতাহাটা ও হলদিয়া ব্লকের পঞ্চায়েত ভোটের দিকে তাকিয়ে শাসক, বিরোধী সবাই। কারণ পঞ্চায়েতের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে হলদিয়ার পুরভোট। হলদিয়া ও সুতাহাটা ব্লকের বড় অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছে হলদিয়া পুরসভা। দুই ব্লকের অর্থনীতির ৭৫ ভাগই শহর হলদিয়া বা হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের উপর নির্ভরশীল। সে কারণে গ্রাম হলদিয়ার পঞ্চায়েত ভোটে কার্যত অ্যাসিড টেস্ট হবে শহর হলদিয়ার।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, শহর হলদিয়ার পুরভোটের ভাগ্য নির্ধারণ করবে গ্রাম হলদিয়ার পঞ্চায়েত ভোট। পঞ্চায়েতের ফলাফল দেখেই পুরভোটের দিনক্ষণ স্থির করা হবে বলে সবার ধারণা। এক্ষেত্রে শাসকদল তৃণমূলের রেজাল্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শহর হলদিয়া দখলের আগে গ্রাম হলদিয়ায় তৃণমূলের ভালো রেজাল্ট জরুরি। শাসকদল পঞ্চায়েতে সন্তোষজনক রেজাল্ট করলে পুজোর আগে পুরভোটের ঢাকে কাঠি পড়ার সম্ভবনা প্রবল। এর উল্টো ফলাফল হলে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে পুরভোট, এমনই মত বিরোধীদের। রাজনৈতিক মহলের মতে, হলদিয়া বিধানসভা তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে। এখন হলদিয়া পুরসভা দখল করতে না পারলে রাজ্যের আধুনিকতম শিল্পাঞ্চল ও বন্দর এলাকায় শাসকদলের রাশ আলগা হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে মনোবল ফেরাতে তৃণমূলকে ভরসা করতে হচ্ছে গ্রামের ভোটের উপর। সেজন্য সুতাহাটায় এবার পঞ্চায়েত ভোটে কোমর বেঁধে লড়ছে তৃণমূল। হলদিয়া ব্লকে দলীয় কোন্দলের জেরে অবশ্য চিন্তায় তৃণমূল।
হলদিয়া ও সুতাহাটা দুই ব্লকেই তৃণমূল, বিজেপি ও বামেদের মধ্যে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। যদিও প্রচারের শেষদিনে তৃণমূল ও বামেরা প্রচারে ঝড় তুললেও বিজেপিকে কার্যত খুঁজেই পেলেন না এলাকার মানুষজন। আদি-নব্যর দ্বন্দ্ব ছাড়াও বিধায়ক ও তাঁর সাগরেদদের সবক শেখাতে পঞ্চায়েতে উঠে পড়ে লেগেছে দলেরই লোকজন। সেজন্য সুতাহাটা কিংবা হলদিয়া ব্লকের ভোট ময়দানে বিজেপির কয়েকটা পোস্টার ও ফ্লেক্স ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না মানুষ। এলাকায় বিজেপির প্রার্থীকে চেনেই না মানুষ। বরং সুতাহাটায় তৃণমূলের সঙ্গে প্রচারে পাল্লা দিয়েছে বামেরা। হলদিয়া ও সুতাহাটার পঞ্চায়েত ভোট অন্য পঞ্চায়েতের থেকে আলাদা। শহরের মতো এখানে ভোটের ইস্যু শিল্প কারখানায় কাজ চাই, বাড়ির উঠোন অব্দি পাকার রাস্তা, নলবাহিত পানীয় জল।
সুতাহাটার তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ও পঞ্চায়েতের প্রার্থী অশোক মিশ্র বলেন, সুতাহাটা ও হলদিয়া মিলিয়ে দুই ব্লকে প্রায় ৫৫ হাজারের বেশি মহিলা ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ পাচ্ছেন। কিন্তু পাড়ায় ঢুকলেই মানুষ কারখানায় কাজের কথা বলছেন। শহর লাগোয়া পঞ্চায়েত ভোটে কর্মসংস্থানের ইস্যু বড় চ্যালেঞ্জ। এবার পঞ্চায়েত ভোট হলদিয়া পুরভোটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপির জেলা পরিষদের হলদিয়া ব্লকের প্রার্থী ও হলদিয়া আইওসির ঠিকাদার সোমনাথ ভুঁইয়া বলেন, গ্রামের ভোটে লড়ছি ঠিকই, তবে হলদিয়া শহরে আমাদের রুটিরুজি। এবার ভোটের ইস্যুও কর্মসংস্থান। পঞ্চায়েতে ভালো রেজাল্ট করে পুরভোটে ঝাঁপাতে চাই। একই বক্তব্য সিপিএম নেতা পরিতোষ পট্টনায়কের। তিনি বলেন, হলদিয়ার মানুষ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নয়, হাতে কাজ চায়। হলদিয়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও প্রবীণ তৃণমূল নেতা সুধাংশু মণ্ডল বলেন, পঞ্চায়েত ও পুরসভার পরিষেবা আলাদা ধরনের। হলদিয়া ও সুতাহাটায় পঞ্চায়েত ভোট গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু পুরভোটে তেমন কোনও প্রভাব পড়বে না।
No comments