ভোটের মুখে বস্তি উচ্ছেদ নিয়ে সরগরম হলদিয়ার রাজনীতি
ভরা বর্ষা এবং পুরভোটের মুখে বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করা নিয়ে সরগরম হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের রাজনীতি। হলদিয়ার বিভিন্ন জায়গায় অধিগৃহীত জমি থেকে জবরদখল সরাতে সম্প্রতি নোটিস দিয়ে মাইক প…
ভোটের মুখে বস্তি উচ্ছেদ নিয়ে সরগরম হলদিয়ার রাজনীতি
ভরা বর্ষা এবং পুরভোটের মুখে বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করা নিয়ে সরগরম হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের রাজনীতি। হলদিয়ার বিভিন্ন জায়গায় অধিগৃহীত জমি থেকে জবরদখল সরাতে সম্প্রতি নোটিস দিয়ে মাইক প্রচার শুরু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এস্টেট অফিসারের নির্দেশে বন্দরের জমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্দরের দাবি, উচ্ছেদের সময় আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক রাজ্য প্রশাসন পুলিস ফোর্স দিতে বাধ্য। ধাপে ধাপে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চলবে। প্রথম দফায় আগামী ২৭ জুলাই বেলা ১১টা থেকে দুর্গাচক এলাকায় পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে পাতিখালি বস্তি উচ্ছেদ করা হবে। ওই এলাকায় বার্জ জেটি থেকে পাতিখালি অর্থাৎ রিভার সাইড রোড এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান হবে। এজন্য দুর্গাচক থানার কাছে পুলিস ফোর্স চেয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পুরভোটের মুখে বন্দরের উচ্ছেদের নোটিসে ফের কেন্দ্র ও রাজ্য সংঘাত চরমে উঠেছে। কেন্দ্রের অধীনস্থ সংস্থা বন্দর কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদের বিরোধিতায় নেমেছে শাসকদল তৃণমূল ও সিপিএম।
বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৯ জুন হাইকোর্ট বন্দরের জমি থেকে উচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একটি নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশে বলা হয়, উচ্ছেদের অর্ডার বহাল থাকলে পুলিস ফোর্স দিতে বাধ্য। বন্দর কর্তৃপক্ষকে ওই অর্ডারের কপি রাজ্য পুলিসের ডিরেক্টর জেনারেলকে পাঠানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়, যাতে উচ্ছেদের সময় পুলিস থাকে।
প্রসঙ্গত, বস্তিবাসীদের তরফে উচ্ছেদের বিরোধিতা করে মামলা করা হয় গত বছর আগস্টে। সেই মামলা এখন হলদিয়া আদালতে চলছে। বন্দরের দাবি, উচ্ছেদ বন্ধ করার জন্য এখনও আদালতের কোনও স্থগিতাদেশ আসেনি। অন্যদিকে, গত পাঁচ বছর ধরে বন্দরের উচ্ছেদ অভিযানের সময় রাজ্যের পুলিস ফোর্স দেওয়া নিয়ে বিস্তর টানাপোড়েন চলছিল। কোনওভাবেই পুলিস পাওয়া যাচ্ছিল না বলে বন্দরের অভিযোগ। এবার হাইকোর্টের নির্দেশকে হাতিয়ার করে কার্যত উচ্ছেদ করতে মরিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর জানিয়েছে, হলদিয়ায় বন্দরের ১০০ একরের বেশি জমি জবরদখল হয়ে রয়েছে দুর্গাচক, চিরঞ্জীবপুর, টাউনশিপ সহ বিভিন্ন জায়গায়। বিষ্ণুরামচক, সাওতানচক এলাকা অধিগ্রহণের পরও দখলমুক্ত হয়নি।বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) প্রবীণকুমার দাস বলেন, বন্দরের জমি দখল করে যারা বসবাস করছে, তাদের সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে কয়েকদিন ধরে। ২৭ জুলাই কেউ না সরলে তাদের উচ্ছেদ করা হবে আইনমাফিক। এজন্য ১৯৭১ সালের পাবলিক প্রেমিসেস (এভিকশন অব আন অথরাইজড অকুপায়েন্টস) অ্যাক্ট অনুযায়ী বন্দরের এস্টেট অফিসার বারবার নোটিস করেছেন। বর্ষাকালের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। তবে জবরদখল সরাতে গেলে সমস্যা হবেই। তৃণমূলের হলদিয়া উদ্বাস্তু ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসী, উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক জ্যোতিপ্রসাদ দাস মঙ্গলবারই এনিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের কড়া অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, উন্নয়ন তো মানুষের স্বার্থেই হবে। কিন্তু বন্দরের আচরণ তুঘলকী। রত্নারচকে বন্দরের উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য ৬৫ একর জমি পড়ে রয়েছে। সেখানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে তবেই বন্দর উচ্ছেদ করুক।
সিপিএমের বস্তিবাসীদের জেলা সভাপতি অচিন্ত্য শাসমল বলেন, সরকারের জমি উন্নয়নের নামে বেসরকারি হাতে তুলে দিতেই বন্দরের এই উচ্ছেদ অভিযান। বন্দর ও হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাবেই ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন হয়নি।
No comments