পোর্ট ভিজিলেন্সর নির্দেশে বাতিল ১০ কোটির জিএম বাংলো
বন্দরের ভিজিল্যাগ ও ফিনান্স ডিপার্টমেন্টের আপত্তিতে কোটি কোটি টাকা খরচে হলদিয়া বন্দরের জিএমদের জন্য বিলাসবহুল বাংলো নির্মাণের সিদ্ধান্ত স্থগিত করল হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্…
পোর্ট ভিজিলেন্সর নির্দেশে বাতিল ১০ কোটির জিএম বাংলো
বন্দরের ভিজিল্যাগ ও ফিনান্স ডিপার্টমেন্টের আপত্তিতে কোটি কোটি টাকা খরচে হলদিয়া বন্দরের জিএমদের জন্য বিলাসবহুল বাংলো নির্মাণের সিদ্ধান্ত স্থগিত করল হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচে পাঁচটি বিলাসবহুল বাংলো তৈরির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বন্দরের ভিজিলান্স ও ফিনান্স বিভাগ। সরকারি সংস্থাগুলিতে যখন খরচ কমানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে এই ধরনের ব্যয়বহুল প্রকল্পের সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দুই বিভাগ। তাছাড়া শ্রমিকদের ক্যান্টিনে ভর্তুকি বন্ধ করে কোটি কোটি টাকা বারে জিএম বাংলো নির্মাণের সিদ্ধান্তে জোর বিতর্ক তৈরি হয়। গত বছর মে মাসে বন্দর কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত জানার পরই শ্রমিক কর্মচারি মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। প্রায় এক বছর ধরে এনিয়ে টানাপোড়েন চলে। প্রকল্পের ফলে জলাভূমি বোজানো ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এজন্য চিঠি দিয়ে বন্দরের কৈফিয়ত চায় হলদিয়া পুর কর্তৃপক্ষ। ফলে সব মিলিয়ে বন্দরের বাংলো তৈরির বিষয়টি শুরু থেকেই বিতর্কের জালে জড়িয়ে পড়ে। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২২ সালের মে মাসে বন্দরের পাঁচ বিভাগীয় জেনারেল ম্যানেজারের বাংলো তৈরির জন্য ৭১8 কোটি টাকার টেন্ডার ডাকে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি বাংলোর সামনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচে ল্যান্ডস্কেপিং করা হবে বলে টেন্ডারে উল্লেখ করা হয়। হলদি ও হুগলি নদীর মোহনায় মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়েওঠার কথা ছিল প্রস্তাবিত নতুন বাংলোগুলির। হলদিয়া বন্দরে বর্তমানে ম্যানেজমেন্ট এন্ড সার্ভিসেস প্রশাসন, ট্রাফিক, ফিনান্স, মেরিন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড সার্ভিসেস বা প্রশাসন, ট্রাফিক, ফিনান্স, মেরিন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পাঁচ জন জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) রয়েছেন। হলদিয়াকে স্বায়ত্তশাসন দিতে ২০১৪ সালে এখানে নতুন করে বিভাগীয় প্রধান বা জিএম পদ তৈরি করে তাদের বন্দর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়। জিএম পদ তৈরি হলেও হলদিয়ায় তাদের আলাদা কোন বাংলো নেই জিএমরা ডি টাইপ আবাসনের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছেন। দেশের অন্যান্য মেজর পোর্টে এই ধরনের বাংলো থাকলেও হলদিয়ায় তা নেই।
বন্দরের এই টেন্ডার নজরে আসতেই শুরু থেকেই ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করে শ্রমিক সংগঠনগুলি। তাদের অভিযোগ, বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যয় সঙ্কোচের নামে শ্রমিকদের ক্যান্টিন ভর্তুকি বন্ধ করে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে আধিকারিকদের রাজকীয় বাংলো গড়ছে। এদিকে সাধারণ কর্মীদের বেহাল আবাসন সারাতে গড়িমসি করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, প্রতিটি বাংলো নির্মাণের খরচ প্রথমে দেড় কোটি টাকা ধরে টেন্ডার করা হলেও পরে দেখা যায় তা বেড়ে গিয়ে প্রায় দু'কোটি হয়ে গিয়েছে, অর্থাৎ মোট খরচের বহর দাঁড়ায় প্রায় ১০ কোটি টাকায়। বাংলো নির্মাণে খরচের এই বহর দেখে চোখ ওঠ বন্দরের অর্থ বিভাগ ও ভিজিলান্সের। কোটি টাকার দামী বাংলো তৈরির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বন্দরের প্রাক্তন পদস্থ আধিকারিকরা বন্দর তার নিজস্ব জমিতেই যখন বাংলো তৈরি করছে তখন বিপুল টাকা কিভাবে খরচ হচ্ছে তা নিউ প্রশ্ন ওঠে।
ভারতীয় মজদুর সংঘের সর্বভারতীয় সম্পাদক এবং বন্দরের শ্রমিক নেতা প্রদীপ বিজলী বলেন, বাংলো নিয়ে বিলাসিতা করার বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলি। আমাদের দাবি, বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই প্রকল্পের পরিবর্তে বন্দরের হাসপাতাল সহ বন্দরের অবসরপ্রাপ্তদের স্বাস্থ্য খাতে বেশি খরচ করুক। বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান অমলকুমার মেহেরা বলেন, হলদিয়া বন্দরের বাংলো তৈরির সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়েছে। এর কিছু কারণ রয়েছে। এখন বন্দরে কর্মী সংখ্যা কমায় বাংলো তৈরির জন্য খরচ নিয়ে ফিনান্স আপত্তি জানায়। কেন্দ্রের নতুন নিয়মে বন্দরগুলি ল্যান্ডলর্ড মডেলে পরিচালনা করা হবে। এজন্য কর্মী সংখ্যা কমছে। বন্দরের কর্মী ৫ হাজার থেকে কমে এখন সাড়ে ৭০০ তে নেমে এসেছে। এখন রোজগার বাড়লেও টেকনিক্যাল বিষয়গুলি মূল্যায়ন করে আপাতত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
No comments