ট্রেন দুর্ঘটনা স্থলে মুহুর্মুহু এম্বুলেন্সের সাইরেন এবং স্বজন হারার কান্না মিলেমিশে একাকার
মুহুর্মুহু অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। সেই শব্দে মিশে যাচ্ছে স্বজনহারার কান্না, বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টায় আকুল আর্তনাদ। বড় রাস্তার পাশে জমা হচ্ছ…
ট্রেন দুর্ঘটনা স্থলে মুহুর্মুহু এম্বুলেন্সের সাইরেন এবং স্বজন হারার কান্না মিলেমিশে একাকার
মুহুর্মুহু অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। সেই শব্দে মিশে যাচ্ছে স্বজনহারার কান্না, বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টায় আকুল আর্তনাদ। বড় রাস্তার পাশে জমা হচ্ছে মৃতদেহের স্তূপ। রেললাইনের উপর যেখানে সেখানে পড়ে রয়েছে বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। কোথাও পড়ে রয়েছে কাটা হাত, কাটা পা। কোথাও আবার রক্তে-মাংসে দলা পাকিয়ে গিয়েছে ফুটফুটে শিশুর দেহ। হাত-পা হারিয়েও যাঁদের শরীরে প্রাণটুকু রয়ে গিয়েছে, তাঁরা বাঁচার জন্য কাতরাচ্ছিলেন। কেউ কেউ এমনভাবে চাপা পড়েছিলেন যে টেনে-হিঁচড়েও বার করে আনা যাচ্ছিল না। শনিবার ৩ রা জুন সকালে বাহানাগাজুড়ে কেবলই এমন হাড়-হিম দৃশ্যের অবতারণা। যা দেখে শিউরে উঠছে গোটা দেশ।
২ রা জুন শুক্রবার রাত থেকেই উদ্ধারকাজে নামে ভারতীয় সেনা। তাদের সঙ্গে হাত মেলায় স্থানীয় মানুষ, পুলিস-প্রশাসন থেকে শুরু করে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরও শেষ হয়নি দেহ উদ্ধার। ফলে আজ, রবিবারও চলবে এই প্রক্রিয়া। উদ্ধারকারী দলের সেনাকর্মীরা বলেন, যেভাবে ট্রেনের কামরাগুলি দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে এবং একটি অন্যটির উপর উঠে গিয়েছে, তাতে দেহ উদ্ধার বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্যাস কাটার দিয়ে বগি না কাটা পর্যন্ত দেহ বার করে আনা যাচ্ছে না। ২ রা জুন শুক্রবার রাত ৭টা ৮ মিনিটে বাহানাগা স্টেশনের কাছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় লুপলাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়ির। করমণ্ডলের ইঞ্জিন উঠে যায় মালগাড়ির উপর। ইঞ্জিনের পিছনে থাকা অসংরক্ষিত এস-১, এস-২ সহ প্রায় ২১টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। কয়েকটি কামরা কার্যত উড়ে গিয়ে পড়ে ডাউন লাইনের উপর। সেই সময় ডাউন লাইনে চলে আসে যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস। করমণ্ডলের লাইনচ্যুত বগির সঙ্গে সেই ট্রেনের ধাক্কায় দু’টি কামরা কয়েকবার পাল্টি খেয়ে ছিটকে পড়ে পাশের নয়ানজুলিতে।
শনিবার সকালেও এই কামরাগুলির ভিতর থেকে গড়িয়ে আসছিল কালচে রক্ত। ছড়িয়ে থাকা জুতো, জলের বোতল, শিশুর খেলনা, আধখাওয়া বিরিয়ানির প্যাকেট—সবই রক্তমাখা। কোনও কোনও দেহ এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গিয়েছে লোহার পাতে। কারও ধড় থেকে মুণ্ডু আলাদা হয়ে গিয়েছে। রেলের খুলে যাওয়া চাকার নীচে চাপা পড়ে রয়েছে দলা পাকানো দেহের স্তূপ। বেশ কিছুটা অংশের রেললাইনই উড়ে গিয়েছে। সিমেন্টের স্লিপার, বিদ্যুতের খুঁটি—অক্ষত নেই কিছুই। বেশিরভাগ মৃতদেহ উদ্ধার করতে হচ্ছে গ্যাস কাটারের সাহায্যে। সেখান থেকে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে মাংস পোড়ার গন্ধ।
শুক্রবার রাতে প্রথমে স্থানীয় মানুষজনই উদ্ধারকাজে নামেন। অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে জখমদের নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তাঁরা। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসে সেনা, বায়ুসেনা, এনডিআরএফ থেকে শুরু করে একের পর এক উদ্ধারকারী দল। পর্যাপ্ত আলোর অভাবে কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়। সকাল থেকে সেই কাজ শুরু হয় যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। উদ্ধারকারীদের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে মৃতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে থামবে, বলা কঠিন।
No comments