মাঝ সমুদ্রে দুটি বড় জাহাজ কেপসাইজ ভেসেল থেকে পণ্য অপারেশন কাজ শুরু করল বন্দর কর্তৃপক্ষ
সাগরে এই প্রথম ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে একসঙ্গে দুটি বড় জাহাজ কেপসাইজ ভেসেল থেকে পণ্য নামানো কাজ অর্থাৎ ট্রান্সলোডিং অপারেশন শুরু করল হলদিয়া বন…
মাঝ সমুদ্রে দুটি বড় জাহাজ কেপসাইজ ভেসেল থেকে পণ্য অপারেশন কাজ শুরু করল বন্দর কর্তৃপক্ষ
সাগরে এই প্রথম ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে একসঙ্গে দুটি বড় জাহাজ কেপসাইজ ভেসেল থেকে পণ্য নামানো কাজ অর্থাৎ ট্রান্সলোডিং অপারেশন শুরু করল হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতদিন একটি করে দেড়-দু'লক্ষ টনের কেপসাইজ ভেসেল অপারেশন করা হত। কিন্তু ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ মাঝদরিয়ায় একসঙ্গে দুটি জাহাজ অপারেশন এই প্রথম। বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, এই ধরনের অপারেশন রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার এবং বন্দরের ইঞ্জিনিয়ারদের পরীক্ষানিরীক্ষা সফল হয়েছে। একসঙ্গে দুটি জাহাজে ট্রান্সলোডিং অপারেশনের সুফল বন্দর বাণিজ্যে আগামীদিনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে আশা করছেন বন্দর কর্তারা। সাগরে এইমুহূর্তে একসঙ্গে লাইবেরিয়ার 'স্কারলেট' এবং হংকংএর 'গোল্ডেন ঝাওসান' নামে দুটি কেপসাইজ ভেসেল থেকে পণ্য নামানোর কাজ চলছে। এক লক্ষ ৭৫হাজার টন পণ্য পরিবহণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্কারলেট জাহাজটি আমেরিকা থেকে স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়ার(সেল) ইস্পাত কারখানার জন্য হার্ড কোকিং কোল এনেছে। অন্যদিকে, এক লক্ষ ৭৬ হাজার টনের গোল্ডেন ঝাওসান জাহাজটি ইন্দোনেশিয়া থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য স্টিম কোল এনেছে।
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন।
https://youtu.be/xS8ti2R7K_w
বন্দর কর্তারা বলেন, হলদিয়া বন্দরের ইতিহাসে এটি একটি স্মরণীয় ঘটনা। সেজন্য সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের এই ঘটনার সাক্ষী থাকার জন্য সাগরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২মে মঙ্গলবার থেকে স্কারলেট জাহাজে অপারেশন শুরু হয়েছে। ৩মে বুধবার দুপুর থেকে গোল্ডেন ঝাওসানে শুরু হয় ট্রান্সলোডিং অপারেশন। বন্দরের আধিকারিকরা জানান, স্কারলেট জাহাজটি হলদিয়া আসার আগে বাণিজ্যিক সুবিধের জন্য ৮৩হাজার টন কয়লা ওড়িশার ধামড়া বন্দরে নামিয়ে এসেছে। বাকি ৪৯হাজার ৯৮৫টন সাগরে নামাচ্ছে। অন্যদিকে, গোল্ডেন ঝাওসান ধামড়ায় ১লক্ষ ৮হাজার টন নামিয়ে এসেছে। বাকি ৪৭হাজার ৫০০টন সাগরে খালাস করছে। এদিন সকালে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের নিয়ে একুয়েটর-টু টাগ ভেসেল রওনা দেয় সাগরে। সাগরের অ্যাঙ্করেজ পয়েন্ট হলদিয়া থেকে প্রায় ৩০নটিক্যাল মাইল অর্থাৎ ৫৫কিলোমিটার দূরে। আড়াই ঘণ্টার পথ পেরিয়ে টাগ ভেসেল পৌঁছয় সাগরে ট্রান্সলোডিং পয়েন্টে। কিছুটা ব্যবধানে মাঝদরিয়ার দাঁড়িয়ে রয়েছে দুটি দৈত্যসদৃশ জাহাজ।
স্কারলেট থেকে কয়লা নামানোর কাজ করছে বোথরা সংস্থার ফ্লোটিং ক্রেন। ফ্লোটিং ক্রেনের উচ্চতা ১০-১২তলা বাড়ির সমান। কীভাবে ট্রান্সলোডিংয়ের কাজ হচ্ছে, সেই জাহাজ কাজ করছে তার ব্যাখ্যা দিলেন বন্দরের মেরিন বিভাগের আধিকারিক অনিন্দ্য গুহঠাকুরতা এবং সিপিংয়ের আধিকারিক সুগত ঘোষ। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রের মাঝে প্রাণ হাতে নিয়ে ক্রেনে কাজ করছেন উত্তরপ্রদেশের শ্রমিক হরি বিশ্বকর্মা, পার্থসারথি জানারা। বড় জাহাজ থেকে ছোট ছোট বার্জে পণ্য বোঝাই করা হচ্ছে। এক একটি বার্জ ৪-৫হাজার টন কয়লা বোঝাই করে লাইন দিয়ে হলদিয়া নিয়ে আসছে পণ্য। সাগরে যাওয়ার সময় হলদিয়া চ্যানেলে সেই বার্জগুলি দেখা যায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই অপারেশনকে ট্রান্সলোডিং বলা হয়। বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান অমলকুমার মেহেরা বলেন, নাব্যতা সমস্যার মোকাবিলায় হলদিয়া বন্দরকে এখন সাগরে নিয়ে গিয়েছি। ওই এলাকায় ১৪মিটারের বেশি গভীরতা রয়েছে। সারা বছর ধরে বড় জাহাজ আসতে পারে। ফলে যে সংস্থাগুলি বড় জাহাজ হলদিয়ায় না আনতে পেরে মুখ ফিরিয়েছিল তারা এখন আবার আসছে পণ্য নিয়ে। সেজন্য ট্রান্সলোডিং অপারেশনে গুরুত্ব দিচ্ছে বন্দর। হলদিয়াকে বাঁচানো শুধু নয়, ট্রান্সলোডিং নতুন গতি দিয়েছে। গত বছর ৩৩টি কেপসাইজ ভেসেল অপারেশন হয়েছিল। এবার একসঙ্গে দুটি করে হলে দ্বিগুণ হবে আশা করছি। একসঙ্গে দুটি জাহাজ অপারেশন রীতিমতো চ্যালেঞ্জের বিষয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও হলদিয়ার গুরুত্ব আরও বাড়বে।
No comments