চিরনিদ্রায় ঘুমলেন পেলে
জন্ম ২৩ অক্টোবর, ১৯৪০ • মৃত্যু ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ফুটবল জীবনে একের পর এক কড়া ট্যাকল সামলে লক্ষ্যে সফল হয়েছেন। জীবনযুদ্ধেও দুরন্ত লড়াই চালালেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। বৃহস্পতিবার না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন…
চিরনিদ্রায় ঘুমলেন পেলে
জন্ম ২৩ অক্টোবর, ১৯৪০ • মৃত্যু ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২
ফুটবল জীবনে একের পর এক কড়া ট্যাকল সামলে লক্ষ্যে সফল হয়েছেন। জীবনযুদ্ধেও দুরন্ত লড়াই চালালেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। বৃহস্পতিবার না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন ফুটবল সম্রাট পেলে, ৮২ বছর বয়সে। তাঁর মৃত্যু সংবাদে শোকের ছায়া নেমে আসে বিশ্বজুড়ে।
দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ী এই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি। গত তিন সপ্তাহ ধরে সাও পাওলোর এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। গত ২৯ নভেম্বর তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন প্যালিয়াটিভ কেয়ারে। এই পর্বে কেমোথেরাপিতেও খুব একটা কাজ হয়নি। ধীরে ধীরে হার্ট ও কিডনি কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। ডাক্তাররা প্রাণপাত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শেষের দিকে চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন না তিনি। ২৩ ডিসেম্বর এলিভেটেড কেয়ারে স্থানান্তরিত করা হয় পেলেকে। বিশ্বজুড়ে চলছিল তাঁর সুস্থতা কামনা করে প্রার্থনা। কিন্তু যাবতীয় প্রচেষ্টা ও প্রার্থনা ব্যর্থ হল। সর্বকালের সেরা ফুটবলার চিরনিদ্রাতেই শায়িত হলেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়ে কেলি নাসিমেন্তো রোগশয্যায় সর্বক্ষণ বাবার সঙ্গেই ছিলেন। ফুটবল সম্রাটের শারীরিক অসুস্থতার কথা জানতে পেরে একে একে ব্রাজিলে ফিরে এসেছিলেন ছেলে, আত্মীয়রাও। বড়দিন উপলক্ষ্যে রবিবার সকলে হাসপাতালেও এসেছিলেন পেলেকে দেখতে। তবে শনিবারই সোশ্যাল মিডিয়ায় কন্যা কেলির ভিডিও পোস্টে ছিল মন খারাপ করে দেওয়া ইঙ্গিত। আবেগপূর্ণ সেই পোস্টে তিনি লেখেন, 'আমরা এখনও বিশ্বাস নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। পেরিয়ে গেল একটা রাত।' লেখার সঙ্গে ছিল একটি ছবি। যেখানে হাসপাতালের শয্যায় বাবাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রয়েছেন কেলি। অক্সিজেন মাস্কে মুখ ঢাকা পেলের চোখের সামনে মোবাইলে তিনি তুলে ধরছিলেন বিভিন্ন দৃশ্য। বাবাকে শেষপর্যন্ত সজীব রাখাই ছিল তাঁর লক্ষ্যে। কিন্তু ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হতে থাকে পেলের। অসাড় হয়ে যায় মস্তিষ্কও।
'ফুটবলজীবনে অজস্র কীর্তি রয়েছে পেলের। যা অবিশ্বাস্যই। দেশের জার্সি গায়ে ৯২ ম্যাচে রয়েছে ৭৭টি গোল। জিতেছেন তিনটি বিশ্বকাপ (১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০)। ক্লাব ফুটবলে কেরিয়ারের সিংহভাগ কেটেছে স্যান্টোসের জার্সিতে। শেষ বয়সে যোগ দেন নিউইয়র্ক কসমস ক্লাবে। ১৯৭৭ সালে কলকাতায় এসে ইডেনে মোহন বাগানের বিরুদ্ধেও খেলে গিয়েছেন। ফুটবলজীবন শেষ করার পরও ফুটবলের সঙ্গেই জড়িয়ে ছিলেন তিনি।
কাতার বিশ্বকাপের বেশিরভাগ ম্যাচ অবশ্য হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই দেখেছেন পেলে। একান্ত ইচ্ছা ছিল, গ্যালারিতে বসে সাক্ষী থাকবেন মরুদেশে কাপযুদ্ধের। কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলোয়নি। শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল তাঁর। কাতারে না থেকেও অবশ্য ছিলেন ফুটবল সম্রাট। প্রতি ম্যাচে তাঁর সুস্থ হয়ে ওঠার প্রার্থনা সঙ্গী হতো নেইমারদের। গ্যালারিতেও ব্যানার-প্ল্যাকার্ড থাকত পেলেকে নিয়ে। টিভির পর্দায় অবশ্য নিয়মিত চোখ রাখতেন তিনি। ব্রাজিল ছিটকে যাওয়ার পরও রিচার্লিসনদের খেলার প্রশংসা করেছিলেন। তৃতীয়বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন আর্জেন্তিনাকে। প্রশংসা করেছিলেন লায়োনেল মেসিরও। পেলের মৃত্যুর পর এক আর্জেন্তিনা ফুটবলপ্রেমী সেজন্যই পোস্ট করেছেন, ‘যাক, মেসির হাতে কাপ দেখে শান্তিতে ঘুমোলেন পেলে। হোক না দেশ আলাদা, লাতিন আমেরিকাতেই তো এল কাপ!'
No comments