Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

দিনরাত বাড়িতে? কচিকাঁচাদের একঘেয়েমি কাটাতে কী করবেন?

দিনরাত বাড়িতে?কচিকাঁচাদের একঘেয়েমি কাটাতে কী করবেন?


পরামর্শে বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবাঞ্জন পান।
অতিমারীর সময়ে বাচ্চারা গৃহবন্দি। পৌনঃপুনিক কেটে যাচ্ছে দিন। ওদের গ্রাস করছে একঘেয়েমি। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে গতানুগতিক অনলাইন ক্ল…

 



দিনরাত বাড়িতে?

কচিকাঁচাদের একঘেয়েমি কাটাতে কী করবেন?




পরামর্শে বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবাঞ্জন পান।


অতিমারীর সময়ে বাচ্চারা গৃহবন্দি। পৌনঃপুনিক কেটে যাচ্ছে দিন। ওদের গ্রাস করছে একঘেয়েমি। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে গতানুগতিক অনলাইন ক্লাস, বাড়ির একই খাবার, মোবাইলের খুপরি স্ক্রিনের টিউশনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে দিন। একটানা এমন জীবনযাপন ইতিবাচক কোনও প্রভাব তৈরি করতে পারছে না। বরং নেতিবাচক প্রভাবই বেশি দেখা যাচ্ছে শিশুদের মধ্যে। এভাবে অনলাইনে লেখাপড়ায় আদৌ পড়াশোনার উন্নতি কতখানি হচ্ছে তা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ রয়ে যাচ্ছে। কারণ একজন শিক্ষার্থীর বিদ্যার্জনের সঙ্গে শিক্ষকের প্রত্যক্ষ সংযোগ থাকে। ক্লাসরুমে শেষ বেঞ্চে বসা ছাত্র আদৌ লেখাপড়ার বিষয়বস্তুতে মনোননিবেশ করতে পারছে কি না তা একমাত্র ক্লাসরুমে দাঁড়িয়েই বোঝা যায়। শিক্ষক মানে ছাত্রের কাছে পথপ্রদর্শক। সেই গাইডের সঙ্গে ছাত্রের অকৃত্রিম যোগাযোগ তৈরি হয় জ্ঞানলাভ এবং সেই জ্ঞানের সঠিক ব্যবহার শেখার মাধ্যমে। সেখানে শুধু একজন শিক্ষক রুটিনমাফিক স্ক্রিনে হাজির হয়ে সাবজেক্ট পড়িয়ে চলে যাচ্ছেন, প্রশ্নপত্র পাঠাচ্ছেন, উত্তরপত্রে নম্বর দিচ্ছেন— এই প্রক্রিয়া বাধ্যবাধকতার সূত্র ধরে চললেও বড় একটা ফাঁক কিন্তু তৈরি হচ্ছে। সেই ফাঁকটা কোথায়? ফাঁকটা তৈরি হচ্ছে কল্পনাবোধ বাড়ানোর ক্ষমতায়। শিক্ষকের আর গল্প করে পড়াবার অবসর থাকছে না। থাকছে না পাঠ্যবইয়ের বিষয়টিকে অন্যরকম উদাহরণ দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা। ফলে ছাত্রছাত্রীরাও নতুন ভাবে ভাবার ক্ষমতা হারাচ্ছে। বই-এর ভাষায় বা প্রোটোটাইপ উত্তর লিখে নম্বর ভালো উঠলেও, আলাদা করে ভাবতে শেখার ক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে খামতি। এখানেই শেষ নয়। আমরা মানুষরা একে অন্যকে দেখে শিখি। বিশেষ করে শৈশাবস্থা কিন্তু পড়া মুখস্থ করে নয়, বরং দেখে শেখারই বয়স। এভাবেই তৈরি হয় ভিন্ন ব্যক্তিত্ব। স্কুল বন্ধ থাকায় সেই শেখা যেমন থেমে থাকছে তেমনই ভাবের আদানপ্রদানের পথও বন্ধ হয়ে রয়ে গিয়েছে। ফলে চূড়ান্ত একঘেয়েমিতে ভুগছে ছোটরা। মেজাজ হয়ে পড়ছে খিটখিটে। কেউ কেউ ভাঙচুর চালাচ্ছে ঘরে।  তর্ক করছে মুখে মুখে। 

প্রশ্ন হচ্ছে, কী করলে এই একঘেয়েমি কাটানো যাবে? কীভাবে বদ্ধ জীবনেও মিলবে কিছু করে দেখানোর উৎসাহ? কীভাবেই বা লেখাপড়ায় ফিরিয়ে আনা যাবে মনোযোগ? দেখা যাক। মূল উদ্যোগটা নিতে হবে অভিভাবকদের। অনেকরকম উপায় আছে। দেখা যাক—

• অনলাইন ক্লাস করতেই হবে। সেই সময়ে সত্যিই কিছু করার নেই। তবে ক্লাস পরবর্তী যে সময়ে বাচ্চারা পড়তে বসে, সেই পড়ার সময়টাকে অভিভাবকরা বরং একটু ভেঙে দিন। ২০:২—এই অনুপাতে সময়টাকে ভাঙা যেতে পারে। তা কেমন? ২০ মিনিট পড়ার  পরে ওদের ২ মিনিটের একটা ব্রেক দিন। ওই সময়ে সে একটু গান চালিয়ে নেচে নিতে পারে। পারে গলা ছেড়ে গান করতে। আবার একটু বারান্দা থেকে ঘুরে আসুক না হয়। তবে ২ মিনিট শেষ হলেই ফের পড়তে বসতে হবে।  কেন এমন করবে? কারণ গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাচ্চারা একটানা কোনও বিষয়ে মনোনিবেশ করতে পারে না। বরং এমন ছোটখাট ব্রেক ওদের পড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

• একঘেয়ে জীবনে নতুন কিছুর স্বাদ দিন ওদের। কী করবেন? অবসর সময়ে ওদের সঙ্গে বসে ছোটখাট খেলা করুন যেমন লুডো, ক্যারাম, চোর-পুলিশ, অন্তাক্ষরী।

• শরীরচর্চা খুব জরুরি বিষয়। গতানুগতিক জীবনের ভার কমাতে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। এক্সারসাইজ আমাদের দেহে এন্ডোর্ফিন হর্মোনের ক্ষরণ বাড়ায়। এই হর্মোন মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই সম্ভব হলে ছেলে বা মেয়েকে নিয়ে ছাদে উঠে এক্সারসাইজ করুন। ছাদ না থাকলে ঘরের মধ্যেও টুকটাক এক্সারসাইজ করতে পারেন সপরিবারে। শরীরচর্চা করতে পারেন নতুন নতুন উপায়ে।

• মাঝে মধ্যেই ধাঁধা জিজ্ঞেস করুন সন্তানকে। ওরা মজা পাবে। প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব বা উপস্থিত বুদ্ধির ব্যবহারও শিখবে। ওদেরও বলুন নতুন নতুন ধাঁধা বানাতে। 

• নতুন একটা ভাষা নিজে শিখতে পারেন। ওদেরও একসঙ্গে শেখাতে পারেন। দেখা গিয়েছে নতুন ভাষা শিখলে তা ব্রেনের কার্যকারিতা বাড়ায়। এক্ষেত্রে নিজের সঙ্গে সন্তানেরও উপকার হবে।

• সন্তানের সঙ্গে এভাবে সময় কাটানোর অবসর হয়তো আর কবে পাবেন তার ঠিক নেই। তাই চেষ্টা করুন ওদের প্রকৃতির পাঠ দেওয়ার। বিরাট প্রকৃতিকে উপলব্ধি করতে শেখান ওদের। পাখি, পাখির ডাক, গাছ, ফুল, ফুলের গন্ধ, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পোকা চিনিয়ে দিন ওদের। বাগান থাকলে ভালো, না হলে ছাদে কিংবা বারান্দায় ছোট্ট ছোট্ট টবে গাছ লাগান। ওদের বলুন জল দিতে। নতুন পাতা গজালে, ফুল ফুটলে, ফল ফললে ভিন্ন স্বাদের আনন্দ পাবে ওরা। ওদের দেখান আকাশ, রাতের তারা। এদের বোঝান কতখানি উদার এই প্রকৃতি। ওকে বোঝান, ব্যক্তিগত পড়াশোনা, চার দেওয়াল, রোজকার চাওয়া পাওয়া, দুঃখের বাইরেও জীবন রয়েছে। সেই জীবন সম্পৃক্ত রয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে। সেদিকে তাকাতে হবে। দেখতে হবে প্রকৃতি কীভাবে আশ্রয় হয়ে উঠেছে মানুষ এবং প্রাণীর। বোঝান সব বন্ধু, আত্মীয়রা থাকবে না। তবে প্রকৃতি থেকে যাবে। প্রকৃতির মতোই হতে হবে আমাদের। মনের ধারণ ক্ষমতা করে তুলতে হবে প্রকৃতির মতোই।

• এই সুযোগে সন্তানের সঙ্গে অভ্যেস করুন মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন। দেখা গিয়েছে ছোটবয়স থেকে ধারাবাহিকভাবে মান্ডিফুলনেস মেডিটেশন অভ্যেস করলে মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা বা আবেগের কেন্দ্রের অল্পেই উত্তেজিত হয়ে ওঠার প্রবণতা কমে আসতে থাকে। ফলে আমাদের এই উদ্বেগপূর্ণ জীবনে বিনা কারণে আশঙ্কায় ভোগার মাত্রাও কমতে থাকে। সুতরাং সন্তানের সঙ্গে দিনের যে কোনও একটা সময় বসুন।

এবার পঞ্চেন্দ্রিয়কে আলাদা আলাদা সক্রিয় করে তোলার একটা খেলা খেলুন। সন্তানকে বলুন চোখ বন্ধ করে ঘরে কী কী রং আছে তা বলতে। অথবা বলুন কানে সে এখন কী কী শুনতে পাচ্ছে। বহুদূরের রিকশার ভেঁপু কিংবা পাখির ডাক অথবা ফেরিওলার আওয়াজ, শুনে লিখে রাখতে বলুন খাতায়। কে কটা আওয়াজ শুনলো কিংবা রং মনে করতে পারল তা গুনুন। মাঝে মধ্যে হেরে যান, কারণ হেরে যাওয়ার মধ্যেও থাকে অন্যরকম আনন্দ।


লিখেছেন : সুপ্রিয় নায়েক

No comments