Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

গিরি ভাইদের পুতুলনাচ শিল্প কাঁথির গর্ব -পঞ্চায়েত সভাপতি

গিরি ভাইদের পুতুলনাচ শিল্প কাঁথির গর্ব -পঞ্চায়েত সভাপতিএকটা সময় গ্রামীণ এলাকায় কোনও পুজোপার্বণ হলে পুতুলনাচের আসর বসবে, এটাই ছিল দস্তুর। কিন্তু এখন পুতুলনাচের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেছে। আগের মতো বায়না হয় না। বায়না হলেও উদ্যো…

 

গিরি ভাইদের পুতুলনাচ শিল্প কাঁথির গর্ব -পঞ্চায়েত সভাপতি

একটা সময় গ্রামীণ এলাকায় কোনও পুজোপার্বণ হলে পুতুলনাচের আসর বসবে, এটাই ছিল দস্তুর। কিন্তু এখন পুতুলনাচের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেছে। আগের মতো বায়না হয় না। বায়না হলেও উদ্যোক্তারা শিল্পীদের উপযুক্ত দাম দিতে চান না। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে এই শিল্পের নাভিশ্বাস উঠেছে। নানা সমস্যা সত্ত্বেও কাঁথির ভাজাচাউলি গ্রাম পঞ্চায়েতের কুমুরিয়া-খানকাখুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা দুই ভাই প্রদীপ গিরি ও পীযূষ গিরি হারিয়ে যেতে বসা এই ঐতিহ্যকে আজও টিকিয়ে রেখেছেন। বর্তমানে কাঁথি মহকুমায় একমাত্র ভাজাচাউলির এই পুতুলনাচের দলটিই টিমটিম করে ঐতিহ্য রক্ষার দায় কাঁধে নিয়ে চলছে। ভাজাচাউলির এই পুতুলনাচের দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কার্তিক গিরি। পুতুলনাচ শিল্পকে প্রায় একার হাতেই টিকিয়ে রেখেছিলেন কার্তিকবাবু। তাঁর দলের নাম ছিল ‘অগ্রগামী পুতুল থিয়েটার’। বেশ কয়েকমাস আগে কার্তিকবাবু মারা গিয়েছেন। তবে তাঁর দুই ছেলে এই শিল্পকে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছেন। এখন দুই ভাই বিভিন্ন জায়গায় পুতুল নাচের শো করতে যান। এমনিতেই নানা সমস্যার সম্মুখীন এই শিল্প। তার উপর করোনা-পরিস্থিতি ও লকডাউনের জেরে প্রায় দু’বছর ধরে শো কমে গিয়েছে। এতে তাঁদের আর্থিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। শিল্পীদের দাবি, সরকার এই শিল্পটাকে বাঁচাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিক।

দুই ভাইয়েরই আলাদা দল রয়েছে। প্রদীপের দলের নাম ‘অগ্রদূত পুতুল থিয়েটার’ ও পীযূষের দলের নাম ‘রয়্যাল স্টার পুতুল থিয়েটার’। দু’ভাইয়ের  গোটা পরিবারই এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া এলাকার আরও কয়েকজন যুক্ত। সব মিলিয়ে এই শিল্পে ১৪-১৫ জন কলাকুশলী যুক্ত থাকেন। শো’তে কেউ কণ্ঠদান করেন, কেউ পুতুল নাচান, কেউ আবহসঙ্গীত পরিবেশন করেন, কেউ আলো জ্বালান। দু’রকমের পুতুলনাচ রয়েছে, ‘রড পাপেট’ ও ‘স্প্রিং পাপেট’। দুই ভাই পৌরাণিক, ঐতিহাসিক ও সামাজিক পালা করেন। ‘হনুমানের লঙ্কাকাণ্ড’, ‘আলিফ লায়লা’, ‘বাবা আসামী ছেলে পুলিস’ সহ আরও অনেক পালাই রয়েছে। পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে এইডস, পালস পোলিও, প্রভৃতি রোগের সচেতনতার লক্ষ্যে প্রচার চালান তাঁরা। কার্তিকবাবু যখন বেঁচেছিলেন, তখন তিনি ওড়িশা, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, রাজস্থান প্রভৃতি জায়গায় শো করতে যেতেন। অনেক পুরস্কার ও শংসাপত্র পেয়েছেন।   

প্রদীপ ও পীযূষ বলেন, বায়না কমে গিয়েছে। তবুও এখনও কিছু কিছু জায়গায় পুজো হলে পুতুলনাচের আসর বসবেই। আর সরকারি কর্মসূচিগুলি তো রয়েছেই। তাঁদের জন্যই আমাদের এই শিল্প টিকে রয়েছে। আমরা দুই মেদিনীপুর সহ বিভিন্ন জেলায় শো করতে যাই। এক একটি শো করতেই অনেক খরচ হয়ে যায়। অনেকে পুতুলনাচের নাম শুনলে নাক সিঁটকান। কিন্তু শো হওয়ার পর তাঁরা এর গুরুত্ব বুঝতে পারেন। স্বীকার করেন, অন্যান্য চলতি অনুষ্ঠানের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা পুতুলনাচ শিল্প। পুতুলনাচের জন্য প্রয়োজনীয় নানা সামগ্রীর দাম বেড়েছে। পাশাপাশি কলাকুশলীদের পারিশ্রমিক সহ অন্যান্য খরচ তো রয়েছেই। সেই অনুপাতে উদ্যোক্তারা টাকা দিতে চান না। নানা সমস্যাকে সঙ্গী করেই আমরা পুতুলনাচ শিল্পটাকে টিকিয়ে রেখেছি। ঐতিহ্যের টানেই আমরা শিল্পটাকে ধরে রাখার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা শিল্পী হিসেবে সরকারি উদ্যোগে ভাতা পাই বটে। কিন্তু দলের নামে সরকারি অনুদান দিলে ভালো হতো। কারণ, যত দিন এগচ্ছে, পুতুলনাচের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমছে। বাড়ছে খরচ। 

কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বিকাশচন্দ্র বেজ বলেন, গিরি ভাইদের পুতুলনাচ শিল্প কাঁথির গর্ব। তাঁরা নানা সমস্যাকে সঙ্গী করেই শিল্পটাকে টিকিয়ে রেখেছেন। সরকারি উদ্যোগে তাঁদের ভাতা দেওয়া হয়। তবে যে কোনও সমস্যায় আমরা পুতুলনাচ শিল্পীদের পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত।   

No comments