নয়াচর পরিদর্শন অতিরিক্ত মুখ্য সচিবের
নয়াচরে ফিশিং হাব কাম ইকো ট্যুরিজম প্রকল্প গড়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তরের পরিকল্পনা একত্রিত করে একটি ‘কনসলিডেটেড রিপোর্ট’ দ্রুত মুখ্যসচিবের কাছে জমা দেওয়া হবে। বুধবার হলদিয়ার নয়াচর দ্বীপ পরিদর্শন…
নয়াচর পরিদর্শন অতিরিক্ত মুখ্য সচিবের
নয়াচরে ফিশিং হাব কাম ইকো ট্যুরিজম প্রকল্প গড়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তরের পরিকল্পনা একত্রিত করে একটি ‘কনসলিডেটেড রিপোর্ট’ দ্রুত মুখ্যসচিবের কাছে জমা দেওয়া হবে। বুধবার হলদিয়ার নয়াচর দ্বীপ পরিদর্শনের পর একথা জানান রাজ্যের মৎস্য দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব অত্রি ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর ফিশিং হাবের ভাবনা হল একটি সমন্বিত প্রকল্প। এই প্রকল্প গড়ার কাজ শুধুমাত্র মৎস্য দপ্তরের নয়। অন্যান্য অনেকগুলি দপ্তরের এখানে কাজের সুযোগ রয়েছে। ফিশিং হাব ঘিরে নয়াচরে ইকো ট্যুরিজম, সোলার এনার্জি ফার্ম গড়ার পরিকল্পনার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেজন্য বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকরা পরিদর্শনে এসেছেন। এরপর প্রতিটি দপ্তর নয়াচর ঘিরে তাদের ভাবনাগুলি রিপোর্ট আকারে জমা দেবেন। সেগুলি একত্রিত করা হবে। মুখ্যসচিবকে জমা দেওয়ার পর এবিষয়ে আলোচনা হবে।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ হলদিয়ার টাউনশিপ জেটিঘাট থেকে পুলিস লঞ্চে চেপে জেলাশাসক পূর্ণেন্দুকুমার মাজিকে নিয়ে নয়াচর রওনা দেন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সাত আটটি দপ্তর ও সরকারি সংস্থার প্রায় ৩০জন আধিকারিক। এছাড়া পুলিস সুপার, অতিরিক্ত জেলাশাসক সহ জেলা ও মহকুমা প্রশাসন, পুলিসের কর্তা ও ইঞ্জিনিয়াররা ছিলেন। লঞ্চে নয়াচর পৌঁছতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে। চড়া পড়ে নয়াচরে দীর্ঘদিন ধরে মৎস্য দপ্তরের জেটি অকেজো হয়ে গিয়েছে। পুরনো জেটি থেকে কিছুটা দূরে চড়ায় থমকে যায় লঞ্চ। ফলে লঞ্চ থেকে নেমে ভুটভুটি নৌকায় চাপতে বাধ্য হন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সহ প্রশাসনের কর্তারা। দ্বীপের খাঁড়ি এলাকার খাল পথ বেয়ে নৌকা পৌঁছয় নয়াচরের মূল ভূমিতে।
এদিন প্রশাসনের কর্তাদের নয়াচরে সফর নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল দেখা যায়। দিনকয়েক আগে নয়াচর ঘিরে মুখ্যমন্ত্রীর ফিশিং হাব গড়ার বিষয়টি ঘোষণার পরই আশা ও আশঙ্কায় দিন গুনতে শুরু করেছেন দ্বীপের বাসিন্দারা। গত তিন চারদিন ধরে মহকুমা প্রশাসনের কর্তারা যাতায়াত শুরু করেছেন। নয়াচরে নেমেই দ্বীপের ভূপ্রকৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থান বোঝার চেষ্টা করেন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব। জেলাশাসক ম্যাপ দেখিয়ে দ্বীপ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরেন। দ্বীপের কোন এলাকায় বর্তমানে মাছ চাষ হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে তা খতিয়ে দেখেন তিনি। দ্বীপে মাছ চাষের জন্য একটি বিশাল পাম্প হাউস ছিল। সেবিষয়ে তথ্য দেন মৎস্যজীবীরা। দ্বীপ ঘুরে দেখার সময় নয়াচরের উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেন কর্তারা। ওই সময় অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ও জেলাশাসক দ্বীপের একটি অস্থায়ী পাঠশালায় ঢুকে শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলেন।
নয়াচরে বর্তমানে মোট জমির পরিমাণ ৮৩৪৩ একর। এরমধ্যে কলকাতা বন্দরের জমি রয়েছে দেড় হাজার একর। প্রায় সাড়ে ৬হাজার একর জমি রাজ্য সরকারের ১নম্বর খতিয়ানের। নয়াচরকে বর্তমানে ৬টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ফিশিং হাবের জন্য প্রায় ৫হাজার একরের একটি এলাকা চিহ্নিত হয়েছে। মৎস্যদপ্তর জানিয়েছে, নয়াচরে প্রায় ৪০০একর জায়গায় ৩১৬টি মাছ চাষের পুকুর রয়েছে। বাম আমলে মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে খনন করে ১৩টি সমবায়কে দেওয়া হয়েছিল। হলদিয়া পুরসভা নয়াচরকে তাদের এলাকার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দপ্তকে চিঠি দিয়েছে।
এদিন হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল স্বপন নস্করও সচিবের সঙ্গে নয়াচরে যান। তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষজন সচিবকে নয়াচরের উন্নয়ন নিয়ে কতকগুলি দাবি জানিয়েছেন। এদিন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব বলেন, স্থানীয় মানুষের দাবিগুলি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসব। তবে অবৈধ দখলের অভিযোগ নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। প্রকল্প হলে কেউ উচ্ছেদ হবে কি না, এপ্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের কল্যাণমুখী দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুলে ধরেন তিনি।
No comments