Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

বিজয়া দশমীর মিষ্টির ইতিহাস ও বর্তমান

🔴 মা দুর্গা কন্যারূপে প্রতিবছর বাপের বাড়ি আসেন তিন দিনের ছুটিতে। আর দশমীতে মেয়ে বাপের বাড়িকে বিদায় জানিয়ে স্বামীর গৃহে অর্থাৎ কৈলাসে ফিরে যান।বিজয়ায় মেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। স্বভাবতই সবার মন থাকে ভারাক্রান্ত।মেয়েকে তো আর  বিষাদ মনে বি…

 





 


🔴 মা দুর্গা কন্যারূপে প্রতিবছর বাপের বাড়ি আসেন তিন দিনের ছুটিতে। আর দশমীতে মেয়ে বাপের বাড়িকে বিদায় জানিয়ে স্বামীর গৃহে অর্থাৎ কৈলাসে ফিরে যান।

বিজয়ায় মেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। স্বভাবতই সবার মন থাকে ভারাক্রান্ত।

মেয়েকে তো আর  বিষাদ মনে বিদায় করা যায় না, তাই মিষ্টি মুখের আয়োজন করা হয়, আর সেই কারণেই দশমীর পর বিষাদের মধ্যেই সমানভাবে চলে মিষ্টিমুখের আয়োজন। তাই দশমীর সকাল থেকেই আজও কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, বিভিন্ন বাড়ির কর্তা-দের লাইন পড়ে পাড়ার মিষ্টির দোকানে।  বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপোতভাবে জড়িত ঐতিহ্যের টান।


🔵 সেকালে ছানার মিষ্টি ছিল আড়ম্বরের একটা অংশ। যা বনেদি বাঙালি বাড়ির স্পেশাল। ওইসব বাড়ির মা মেয়েরা দেবী দুর্গাকে বিদায় বরন করতেন ছানার সন্দেশ দিয়ে। মনে করা হতো পিত্রালয়ে উমার মুখে ছানার সন্দেশ দেখেই নাকি নীলকণ্ঠ পাখি কৈলাসে উড়ে যেত পতিগৃহে ফেরার সন্দেশ নিয়ে।


🔴 কলকাতায় নীলমণি মিত্র স্ট্রিটে রাজকৃষ্ণ মিত্রের বাড়িতে দুর্গোৎসবের কথায় আসি। ১৮২৩ খ্রীস্টাব্দের এই পুজোয় এক মন খাসা সন্দেশ কিনতে খরচ হয়েছিল ১৫ টাকা। যা সেই সময়ে বেশ মূল্যবান।

অমৃতলাল বসু তার স্মৃতিচারনায় বলেছেন, ১৮৫৩ খ্রীষ্টাব্দে এক মন ছানার সন্দেশ বিক্রি হত ১৬ থেকে ২০ রুপির মধ্যে। 

সন্দেশ কিন্তু তখন আমজনতার পাতে ওঠেনি। সন্দেশ ছিল ধনীর ঝুলিতে। তার বদলে সেকালে গরীব, মধ্যবিত্তরা মা দুর্গাকে বিদায় জানাতেন নাড়ু, মালপোয়া, রসবড়া, নারিকেল ও চিনি-গুড় দিয়ে ছাঁচের মিষ্টি বানিয়ে। তবে সেকালে কলকাতায় বিজয়ার অ্যাপায়ন ছানার ‘সন্দেশ’ দিয়ে হত না— ‘নারকেল ছাপ’ দিয়ে হত। অনেক পরে মধ্যবিত্তদের বিজয়াতে যোগ হয়েছে ছানার সন্দেশ। মহেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন, বনেদি ছাড়া ‘বিজয়ার দিন নারিকেল ছাবা দেওয়া হইত। বিজয়ার কোলাকুলিতে সন্দেশ বা অন্য কোনো খাবার চলিত না। ’


🔵 কলকাতার ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করলে জানা যাবে বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজোর পর মিষ্টির ভিয়েনে বসিয়ে তৈরি হতো বিজয়ার মিষ্টি। ঢাকের বোলে বিদায়ের ছন্দ বাজলেই ময়রাদের কড়ায় পাক হতো সন্দেশ, জিবেগজা, রসবড়া, মনোহরা, মিহিদানা, সীতাভোগ।

শুধু বনেদি বাড়ি নয় বিজয়ার মিষ্টিমুখের রেওয়াজ ছিল দরিদ্র বাড়ীতেও। সেখানে এত আড়ম্বর না থাকলেও নারকেল নাড়ুর উপস্থিতি জানান দিত পুজো শেষ। কলকাতার বনেদি বাড়িগুলোতে কোথাও কোথাও এখনও তৈরি হয় বিজয়ার মিষ্টি। কিন্তু বেশিরভাগ বনেদি বাড়িতেই বাজার থেকে কেনা মিষ্টি দিয়েই সম্পন্ন হয় বিজয়াপর্ব।

নাড়ু, মালপোয়া, রসবড়া, ছাবা এসব দরিদ্র, মধ্যবিত্তের রসনায় তৃপ্তি দিলেও সন্দেশ বস্তুটি ছিল বরণ স্পেশাল। যা বনেদি বাড়ির পাকশালার স্পেশাল। সেকালে মা দুর্গাকে বরণ করা হতো ছানার সন্দেশ দিয়ে।  অনেক পরে সাধারণের বিজয়াপর্বে যোগ হয় সন্দেশ।


🔴 এখনও বাঙালির বিজয়া দশমীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঘরোয়া সংস্কৃতি। যদিও কালের নিয়মে বদলে গেছে বহু রীতি। তবে অন্তরের টান এখনও টিকে আছে। ইতিহাস বলছে, একদিকে যখন বনেদি বাড়িতে বিজয়ার ছানার মিষ্টি আড়ম্বর চলছে তখন গরীবদের ঘরে ছানার আড়ম্বর না থাকলেও নারকেল নাড়ুর উপস্থিতি জানান দিত পূজা শেষ। সেকালে মা, ঠাকুমার হাতের তৈরি মালপোয়া বা নাড়ুর স্বাদ ছিল বিজয়ার পরম প্রাপ্তি।


🔵 বাঙালি অবশ্য মিষ্টির ক্ষেত্রে নতুন পুরনো সব স্বাদেই ভরসা রাখে। তাই বিজয়ায় যেমন পুরনো জমানার মিষ্টি জলভরা তালশাঁস সন্দেশ, শাঁখ সন্দেশ বা কালাকাঁদ থাকে তেমনই গোলাপ সন্দেশ, কাজু বরফি, আইসক্রিম সন্দেশ বা স্যান্ডউইচ সন্দেশ পছন্দও বঙ্গবাসীর। আবার নতুন প্রজন্ম ফিউশনে বিশ্বাসী। তাই তারা অনেকেই খোঁজেন চকোলেট মিষ্টি। চকোলেট সন্দেশ, চকোলেট ক্ষীরকদম, চকো রোল, চকোলেট রসগোল্লা, বেকড রসোগোল্লার মতো মিষ্টি এখন রাখতে হয় ক্রেতা টানার জন্য।


🔴 সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় রীতি। নারকেল ছাপা দিয়ে এখন বিজয়া দুর্লভ। তিথি মতে দেবী দুর্গার বিসর্জন হলেই শুরু হয় বিজয়া দশমীর পালা। কিন্তু একটা সময়ে মহালয়ার পর থেকেই বাড়ির মহিলা মহলে শুরু হয়ে যেত বিজয়া দশমীর প্রস্তুতি। গাছ থেকে নারকেল পাড়িয়ে ঘরে জমা করা, নানাভাবে সন্দেশের ছাঁচগুলিকে প্রস্তুত করে রাখা, মিষ্টির জন্য গুড়-চিনি এবং নিমকির জন্য ডালডার টিন মজুত রাখা ইত্যাদি ইত্যাদি।


🔵 কাটোয়াতে হাতে লেখা ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের তালপাতার এক পুঁথিতে দুর্গাপূজার খরচের একটি ফর্দ বলছে, সে বছর ‘দুর্গাপূজায় মোট খরচ হয়েছিল ৮০ টাকা ১৪ আনা ২ পাই পয়সা। এরমধ্যে প্রতিমার দাম ৫ টাকা, এক মন ঘি কেনা হয়েছিল ৫ টাকা, ৪ মন ময়দা ২ টাকা ৬ আনা। ক্ষীর কেনা হয় ৫ টাকার, সন্দেশ ৭ টাকার। ’ অর্থাৎ পূজা মানেই মিষ্টি মুখের আয়োজন।


🔴 এই কারনে বাঙালির কাছে বিজয় দশমীর সঙ্গে মিষ্টি যুগ যুগ ধরে জড়িয়ে আছে আবেগ ও ঐতিহ্যের সঙ্গে। তাই বিজয়ার সঙ্গে বাঙালীর মিষ্টির প্রতি ভালোবাসা এখন বজায় রেখে চলেছে সেকালের মত একালের বাঙালীরা।


(তথ্যসূত্র এবং চিত্রসমূহ : ইন্টারনেট)

No comments