🌺 দুর্গাপুজোতে ১০৮টি পদ্ম লাগে, দেবীর গলায় ১০৮টি বেলপাতার মালা পরানো হয়, নারায়ণ পুজোতে ১০৮টি তুলসী পাতা দেওয়া হয় কিংবা জপের মালাতে ১০৮টি রুদ্রাক্ষ থাকে। বিভিন্ন মন্দিরের সন্ত সমাজে মহামণ্ডলেশ্বরের নামের আগে ‘শ্রী শ্রী ১০৮’ দিয়ে …
🌺 দুর্গাপুজোতে ১০৮টি পদ্ম লাগে, দেবীর গলায় ১০৮টি বেলপাতার মালা পরানো হয়, নারায়ণ পুজোতে ১০৮টি তুলসী পাতা দেওয়া হয় কিংবা জপের মালাতে ১০৮টি রুদ্রাক্ষ থাকে। বিভিন্ন মন্দিরের সন্ত সমাজে মহামণ্ডলেশ্বরের নামের আগে ‘শ্রী শ্রী ১০৮’ দিয়ে শুরু হয়। ১০৮ পুঁতিবিশিষ্ট জপমালা হিন্দু ধর্ম ছাড়া বৈষ্ণব, বৌদ্ধ ও শিখ ধর্মেও প্রচলিত। ধর্মীয় রীতিনীতি আলাদা হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন সনাতন ধর্মে ১০৮ সংখ্যার গুরুত্ব আছে, লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও, আরও অনেক ব্যাখ্যা সনাতন ধর্মের ইতিহাস পড়লে জানা যাবে।
🌺 আসলে, হিন্দুধর্মে শাস্ত্রানুসারে যে পঞ্চ দেবদেবী সর্বাগ্রে পূজিত হন, তাঁরা হলেন গণেশ, বিষ্ণু, শিব, চন্ডী (বা কৌশিকী) এবং আদিত্য ( বা সূর্য্য) — এঁদের প্রত্যেকেরই ১০৮ টি নাম আছে এবং অষ্টোত্তর শতনাম সংকীর্তন করা হয়ে থাকে। এই ১০৮ সংখ্যাটিকে হিন্দুধর্মে পবিত্র মানা হয়। সেইজন্যই বোধহয় প্রথা অনুসারে দুর্গাপুজোতে ১০৮টি পদ্ম লাগে, নারায়ণ পুজোতেও ১০৮টি তুলসী পাতা দেওয়া হয় এমন কি জপের মালাতেও ১০৮টি রুদ্রাক্ষ থাকে।
🌺 এই প্রসঙ্গে, জপের মালাতে যে ১০৮টি পুঁতি আছে তার একটি গাণিতিক ও দার্শনিক ব্যাখ্যা মনে পড়ল। ৬ x ৩ x ২ x ৩=১০৮। এই আলাদা আলাদা সংখ্যাগুলিরও তাৎপর্য লক্ষণীয়। ৬ হল মানুষের ছটি ইন্দ্রিয় (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক ও চিন্তা), ৩ হল ত্রিকাল (অর্থাৎ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ), আবার ২ হল হৃদয়ের দুই রূপ — নির্মল হৃদয় ও কলুষিত হৃদয় এবং পরিশেষে ৩ হল তিন প্রকারের মানসিক অবস্থা — ইচ্ছা, অনিচ্ছা ও উদাসীনতা। জপমালার এই ১০৮টি পুঁতি নাড়াচাড়া করে জপের মূল উদ্দেশ্য হল ইন্দ্রিয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা, মনের পরিচালনা করা এবং কালের ঊর্ধ্বে নিজের হৃদয়কে প্রতিস্থাপন করা।
🌺 এটা লক্ষ্যণীয় যে ১+০+৮ = ৯। এই নয়ে নবগ্রহ। আবার ৯ x ২ = ১৮ যা থেকে মনে আসে অষ্টাদশ পর্বের হিন্দু মহাকাব্য মহাভারত।
🌺 হিন্দুধর্ম মতে ১০৮ সংখ্যাটি দ্বারা ব্রহ্মকে প্রকাশ করা হয়, তাই হিন্দুধর্মে ১০৮ সংখ্যাটির এত মাহাত্ম্য। বাংলা ভাষার বর্ণমালার অক্ষরের সাংখ্যিক স্পন্দন অনুসারে, ব্রহ্ম= ব+র+হ+ম= ২৩+২৭+৩৩+২৫= ১০৮।
🌺 প্রাচীন সংস্কৃত ভাষায় ৫৪টি অক্ষর ছিল। প্রতিটি বর্ণের পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ, অর্থাৎ শিব ও শক্তি বর্তমান। সেই অনুযায়ী ৫৪x২= ১০৮।
🌺 প্রাচীন মুহূর্ত শাস্ত্র অনুসারে, সময়কে ১০৮টি উপলব্ধিতে বিভাজিত করা হয়েছিল। ৩৬ অতীত, ৩৬ বর্তমান, ৩৬ ভবিষ্যত্। হিন্দুধর্মের পঞ্চদেবদেবী, যাঁরা শাস্ত্রানুসারে সর্বাগ্রে পূজিত (গণেশ, বিষ্ণু, শিব, কৌশিকী বা চণ্ডী এবং সূর্য বা আদিত্য), প্রত্যেকেরই অষ্টোত্তর শতনাম সংকীর্তন করা হয়ে থাকে। শ্রীকৃষ্ণ সর্বদা ১০৮ জন গোপিনীর সঙ্গে লীলাখেলায় রত থাকতেন।
🌺 ১০৮-কে সংস্কৃতে বলা হয় ‘হর্ষদ সংখ্যা’। কারণ, এই সংখ্যাকে তার সংখ্যা-সমষ্টি দিয়ে বিভাজিত করা যায়। ১+০+৮=৯, আবার ১০৮/৯=১২।
🌺 আয়ুর্বেদ ও যোগ শাস্ত্রমতে, মানবদেহে মোট ১০৮টি পথ ধরে চালিকাশক্তি এসে হৃদপিণ্ডকে সচল রাখে।
🌺 কালজয়ী মহাকাব্য মহাভারতে প্রত্যেকটিতেই ১৮টি অধ্যায় আছে। এমনকি শ্রীরামচরিত মানস ৯ দিনে পাঠ সম্পূর্ণ করতে হয়, যাকে ‘নবাহ্ন পরায়ণ’ বলা হয়। নটরাজের তাণ্ডবের থেকে প্রেরিত হয়ে ‘ভরতনাট্যম’-এর সৃষ্টি সেই নৃত্যশাস্ত্রে ১০৮টি হস্ত ও পদ্মমুদ্রা আছে। সারা ভারতে তন্ত্রপীঠের সংখ্যাও ১০৮।
🌺 ধর্মীয় রীতিতে বৈচিত্র থাকলেও হিন্দু, বৈষ্ণব, বৌদ্ধ, শিখ ও জৈন ধর্মে জপমালার পূঁতির সংখ্যা সর্বক্ষেত্রেই ১০৮। কেন ১০৮টি পুঁতি জপমালাতে থাকে তার একটি সুন্দর ব্যাখ্যা বৌদ্ধ ধর্মে রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, একটি সূত্র— ৬ x ৩ x ২ x ৩= ১০৮, অর্থাৎ ৬ হল মানুষের ছয়টি ইন্দ্রিয় (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক ও চিন্তা), ৩ হল ত্রিকাল (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত্), ২ হৃদয়ের দু’টি অবস্থা (নির্মল ও কলুষিত) এবং ৩ হল মানুষের মনের অবস্থা (ইচ্ছা, অনিচ্ছা ও উদাসীনতা)। জপের মূল উদ্দেশ্য হল ইন্দ্রিয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা, মনের পরিচালনা করা এবং কালের ঊর্ধ্বে নিজের হৃদয়কে প্রতিস্থাপন করা।
🌺(বিঃ দ্রঃ সংগৃহীত তথ্য। কোনো ভুলভ্রান্তি থাকলে আলোচনা স্বাগত)🌺
No comments