Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর মল্লরাজাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত টেরাকোটা শৈলীতে মাকড়া বা ল্যাটেরাইট পাথরে নির্মিত স্থাপত্যের জন্য প্রসিদ্ধ

নিচে বিষ্ণুপুরের মন্দিরসমূহের স্থাপত্যের ইতিহাস ছবি সহ (আমাদের ভ্রমণের সময় তোলা ছবি) বর্ণনা করা হলো:-
1. মন্দিরের নাম: জোড় বাংলা, অধিষ্ঠিত মূর্তি: কৃষ্ণ রায়, এই মন্দিরটি ১৬৫৫ খ্রীষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয়। মল্লরাজা প্রথম রঘুনাথ …

 





নিচে বিষ্ণুপুরের মন্দিরসমূহের স্থাপত্যের ইতিহাস ছবি সহ (আমাদের ভ্রমণের সময় তোলা ছবি) বর্ণনা করা হলো:-


1. মন্দিরের নাম: জোড় বাংলা, 

অধিষ্ঠিত মূর্তি: কৃষ্ণ রায়, এই মন্দিরটি ১৬৫৫ খ্রীষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয়। মল্লরাজা প্রথম রঘুনাথ সিংহ দ্বারা নির্মিত এই মন্দিরটি পরস্পর সংযুক্ত দুটি দোচালা কুটিরের সমন্বয়ে গঠিত। সংযুক্ত অংশের মধ্যস্থলে একটি চারচালা শিখর বিদ্যমান। তাই একে জোড় বাংলা বলা হয়। মন্দিরের দৈর্ঘ্য ১১.৮ মিটার, প্রস্থ ১১.৭ মিটার ও উচ্চতা ১০.৭ মিটার। মন্দিরের দেওয়ালে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী, সামাজিক জীবনযাত্রা ও শিকারের দৃশ্য টেরাকোটা অলংকরণের মাধ্যমে চিত্রিত। 


2. মন্দিরের নাম: রাসমঞ্চ, অধিষ্ঠিত মূর্তি-রাধা ও কৃষ্ণ (রাস উৎসবের সময়)। মল্লরাজা বীরহাম্বীর আনুমানিক ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে এই মঞ্চটি নির্মাণ করেন। বৈষ্ণব রাস উৎসবের সময় বিষ্ণুপুর শহরের যাবতীয় রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ এখানে জনসাধারণের দর্শনের জন্য আনা হত। ১৬০০ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত এখানে রাস উৎসব আয়োজিত হয়েছে।

রাসমঞ্চের চূড়া পিরামিডাকৃতির।  চূড়ার মূলে চারটি করে দোচালা ও প্রতি কোণে একটি করে চারচালা রয়েছে। মঞ্চের বেদিটি মাকড়া বা ল্যাটেরাইট পাথরে নির্মিত। বেদিটির উচ্চতা ১.৬ মিটার ও দৈর্ঘ্য ২৪.৫ মিটার। মঞ্চটির মোট উচ্চতা ১২.৫ মিটার। উপরের অংশ ইষ্টকনির্মিত। চূড়ার কাছে একটি স্বল্প পরিসর ছাদে গিয়ে উপরের অংশটি মিলিত হয়েছে। গর্ভগৃহটি দেওয়াল-দ্বারা আবৃত নয়। বরং রাসমঞ্চের গর্ভগৃহটিকে ঘিরে রয়েছে তিন প্রস্থ খিলানযুক্ত দেওয়াল। বাইরের সারিতে খিলানের সংখ্যা ৪০। এই খিলানগুলির গায়ে পোড়ামাটির পদ্ম ও পূর্ব দেওয়ালে বিষ্ণুপুরের গায়ক-বাদকদের স্মৃতি-অলংকৃত কয়েকটি টেরাকোটার প্যানেল রয়েছে। রাসমঞ্চটি বিষ্ণুপুরের প্রচলিত স্থাপত্যরীতি অনুসরণে নির্মিত হয়নি।


3. মন্দিরের নাম:শ্যামরায় মন্দির, অধিষ্ঠিত মূর্তি-শ্যামরায়।

১৬৪৩ খ্রীষ্টাব্দে মল্লরাজা রঘুনাথ সিংহ টেরাকোটা কাজে সমৃদ্ধ দক্ষিণমুখী এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এই মন্দিরের দক্ষিণদিকের দেওয়ালে নিবদ্ধ প্রাচীন উৎসর্গ লিপি থেকে এই তথ্য জানতে পারা যায়। শ্যামরায় মন্দির বিষ্ণুপুরের প্রসিদ্ধ টেরাকোটা শৈলীতে নির্মিত একটি মন্দির। মন্দিরটি চৌকো, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ১১.৪ মিটার। মন্দিরের চারদিকের খিলানগুলি সুন্দর কারুকার্যময় স্তম্ভের ওপর নির্ভর করে নির্মিত হয়ে ফাঁকা দালানের মতো অংশের সৃষ্টি করেছে। এই দালানের ভেতরে মন্দিরের গর্ভগৃহটি অবস্থিত। গর্ভগৃহের দরজা টেরাকোটা শৈলীতে ফুল ও বিভিন্ন প্রকার নকশা দ্বারা সাজানো। মন্দিরের ছাদ চৌকো ও উত্তলাকার। ছাদের চার প্রান্তে চারটি শিখর বা শীর্ষ বর্তমান। উড়িষ্যার স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত এই শিখরগুলি প্রত্যেকটি প্রতিসম। ছাদের ঠিক মাঝে একটি অষ্টভূজাকৃতি শিখর বা গম্বুজ বর্তমান। এই অংশে মন্দিরের উচ্চতা ১০.৭ মিটার। মন্দিরের বাইরের ও ভেতরের দেওয়ালে রাসলীলা, রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী এবং বিভিন্ন কারুকার্যের দৃশ্য আছে।


4. মন্দিরের নাম:মদনমোহন মন্দির 

অধিষ্ঠিত মূর্তি:মদনমোহন। ১৬৯৪ খ্রীষ্টাব্দে মল্লরাজা দুর্জন সিংহ এই একরত্ন ইষ্টক নির্মিত মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দিরটির ছাদ চৌকো ও বাঁকানো, কিনারা বাঁকযুক্ত ও মধ্যে গম্বুজাকৃতি শীর্ষ বর্তমান। মন্দিরের দেওয়ালে কৃষ্ণলীলা, দশাবতার ও অন্যান্য পৌরাণিক কাহিনীর বিভিন্ন দৃশ্য ভাস্কর্যের মাধ্যমে রূপায়িত। মন্দিরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ১২.২ মিটার এবং উচ্চতা ১০.৭ মিটার।


5. মন্দিরের নাম: রাধালালজিউ মন্দির। 

অধিষ্ঠিত মূর্তি:রাধা ও কৃষ্ণ। ১৬৫৮খ্রীষ্টাব্দে মল্লরাজা বীর সিংহ দ্বারা নির্মিত এই মন্দিরটি চৌকো বেদীর ওপর অবস্থিত। এই মন্দিরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ১২.৩ মিটার এবং উচ্চতা ১০.৭ মিটার।


6. মন্দিরের নাম: রাধাশ্যাম মন্দির 

অধিষ্ঠিত মূর্তি: রাধা ও কৃষ্ণ। ১৭৫৮ খ্রীস্টাব্দে মল্লরাজা চৈতন্য সিংহ মাকড়া পাথরের এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ১২.৫ মিটার এবং উচ্চতা ১০.৭ মিটার। মন্দিরের শিখরটি গম্বুজাকৃতির। মন্দিরের দেওয়ালে পুরাণরামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনীর স্থাপত্য লক্ষণীয়। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে ইটের নহবতখানা আছে। পূর্বদিকে উড়িষ্যার স্থাপত্যরীতি অনুসারে নির্মিত তুলসীমঞ্চ ও নাটমঞ্চ বর্তমান।


7. মন্দিরের নাম: নন্দলাল মন্দির 

অধিষ্ঠিত মূর্তি:নন্দলাল। 

সপ্তদশ শতাব্দীতে চৌকো বেদীর ওপরে নির্মিত একচালা মন্দিরটির বাঁকানো ছাদ এক শিখর বিশিষ্ট।


8. মন্দিরের নাম: কালাচাঁদ মন্দির অধিষ্ঠিত মূর্তি:কালাচাঁদ। ১৬৫৬ খ্রীষ্টাব্দে মল্লরাজা রঘুনাথ সিংহ মাকড়া পাথরের এই একচালা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরের সামনের দিকে পঙ্খের অলঙ্করণে কৃষ্ণলীলা ও পুরাণের কাহিনী দেখা যায়। 


9. মন্দিরের নাম: মদনগোপাল জীউ মন্দির, অধিষ্ঠিত মূর্তি: মদনগোপাল। ১৬৬৫  খ্রীষ্টাব্দে মল্লরাজা বীর সিংহের পত্নী রাণী শিরোমণি দেবী মাকড়া পাথরের পাঁচচালা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।


10. মন্দিরের নাম: রাধাগোবিন্দ মন্দির, অধিষ্ঠিত মূর্তি: রাধা ও কৃষ্ণ। ১৭২৯ খ্রীষ্টাব্দে মল্লরাজা কৃষ্ণ সিংহ ঝামা পাথরের একচালা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। 


11. মন্দিরের নাম:রাধামাধব মন্দির, অধিষ্ঠিত মূর্তি: রাধা ও কৃষ্ণ। ১৭৩৭ খ্রীষ্টাব্দে মল্লরাজা গোপাল সিংহের পুত্রবধূ চূড়ামণিদেবী মাকড়া পাথরের এই একচালা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। 


12. মন্দিরের নাম: জোড় মন্দির শ্রেণী। ১৭২৬ খ্রীষ্টাব্দে মল্লরাজা গোপাল সিংহ মাকড়া পাথরের এই মন্দিরগুলির প্রতিষ্ঠা করেন। দুটি বড় ও একটি ছোট মন্দির নিয়ে এটি জোড় মন্দির শ্রেণী নামে পরিচিত। 


13. মন্দিরের নাম: মৃন্ময়ী মন্দির  অধিষ্ঠিত মূর্তি: মৃন্ময়ী। ৯৯৭ খ্রীস্টাব্দে মল্লরাজা জগৎমল্ল এই মন্দির তৈরী করেন। এই মন্দিরের পিছনে মল্লরাজাদের রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ বর্তমান। এই মন্দিরে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।


14. মন্দিরের নাম: যুগলকিশোর মন্দির অধিষ্ঠিত মূর্তি:কৃষ্ণ ও বলরাম। অষ্টাদশ শতাব্দীতে উড়িষ্যার স্থাপত্যের অনুকরণে পাশাপাশি অবস্থিত মন্দির দুটি নির্মিত হয়েছে।


15. মন্দিরের নাম:মল্লেশ্বর মন্দির, অধিষ্ঠিত মূর্তি: মল্লেশ্বর। ১৬২২ খ্রীষ্টাব্দে মল্লরাজা বীর সিংহ মাকড়া পাথরের এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।


16. মন্দিরের নাম: মহাপ্রভু মন্দির। অষ্টাদশ শতাব্দীতে উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মন্দিরটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।

No comments