প্রদীপ কুমার মাইতি, পূর্ব মেদিনীপুরঃ রাজা নেই , নেই রাজ্যপাট, তাই হারিয়েছে রাজবাড়ির জৌলস।তবু নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে প্রায় ২৫০ বছরের পুরানো মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গা পূজাতেউ আজও বজায় রয়েছে বনেদিয়ানার ঐতিহ্য। বর্তমানে পূর্ব মেদ…
প্রদীপ কুমার মাইতি, পূর্ব মেদিনীপুরঃ রাজা নেই , নেই রাজ্যপাট, তাই হারিয়েছে রাজবাড়ির জৌলস।তবু নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে প্রায় ২৫০ বছরের পুরানো মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গা পূজাতেউ আজও বজায় রয়েছে বনেদিয়ানার ঐতিহ্য।
বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক বিগ বাজেটের পূজো মধ্যে আজও ঐ রাজবাড়ির পূজোয় বিশেষ মাহাত্ম্য আছে।
দুর্গা পূজার কয়েকটা দিন যাত্রা থেকে শুরু করে নানা ধরনের অনুষ্ঠান ভোগ বিতরণ, বিসর্জনের শোভা যাত্রা সব কিছুতে রয়ে গিয়েছে ঐতিহ্যর ছোঁয়া। তারই সাক্ষি হতে প্রতিবছর পূজোয় ঐ রাজবাড়িতে ভিড় জমায় স্থানিয় বাসিন্দারা।
রাজ আমলে অত্যন্ত ধূমধাম করে ঐ পূজো হতো । প্রায় ২৫০ বছর আগে মহিষাদলের রানি জানকি দেবীর আমলে শুরু হয়েছিল ঐ পূজো। দূর্গা পূজা উপলক্ষে হতো যাত্রাপাল। রাজবাড়ির মহিলারা পর্দার আড়াল থেকে সেই মাত্রা দেখতো। ষষ্ঠিতে ৬ মন, সপ্তমিতে ৭মন, অষ্টমিতে ৮ মন এবং নবমিতে ৯ মন চালের প্রসাদ রান্না করে এলাকার বাসিন্দাদের দেওয়া হতো। কিন্তু রাজত্ব চলে যাওয়ার পর ধিরে ধিরে তা কমতে থাকে। এখনো পূজোর দিন প্রসাদ বিতরণ হয় বটে তবে তা নিয়ম মেনে। একটা সময় সন্ধি পূজোর সময় রাজবাড়ি থেকে কামানের তোপ ধ্বনির মাধ্যমে সন্ধি পূজো শুরু হতো। কামানের শব্দ শুনেই শুরু হতো আশেপাশে এলাকার সন্ধি পূজো ও । কিন্তু সরকারি নিষেধাজ্ঞায় প্রায় ৩০ বছর ধরে সেই কামান দাগা বন্ধ। ফলে পটকা ফাটিয়ে শুরু হয় সন্ধি পূজো।
তবে চালু আছে ১০৮ টি নিল পদ্ম দেবির চরনে দেওয়া। আগের মতোই পালিত হয় নবরাত্রিও। মহালয়ার পর থেকে রাজবাড়ির দুর্গা মন্ডপ লাগুয়া অশ্বস্থ গাছ তোলায় ৯টি ঘট বসে। দেবী প্রতিমার একপাশে ঘট থাকে অন্যদিকে বেদির ওপরে ধান রাখা হয়। এলাকায় ভালো ফসল পাওয়ার আশায় বেদির ওপরে ধান রাখা হয়। রাজ আমলে দুর্গা মন্ডপ লাগোয়া যায়গায় স্থায়ি মঞ্চ ছিল । সেখানে যাত্রা থেকে শুরু করে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হতো। বর্তমানে সেই মঞ্চ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।এবার মহিষাদল রাজবাড়িতে মনখারাপের আবহেই চলছে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি। প্রায় দু’শো বছরের পুরনো হেরিটেজ রঙ্গিবসান প্রাসাদ ভেঙে পড়ায় মন ভালো নেই রাজবাড়ির সদস্যদের পাশাপাশি মহিষাদলের মানুষেরও। রাজবাড়ির দুর্গামণ্ডপের পাশেই রঙ্গিবসান প্রাসাদ। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন থেকে পর পর দু’বার ধসে পড়েছে প্রাসাদের সামনের সুদৃশ্য অংশ। রাজবাড়ির পুরনো পুজোর প্রস্তুতি দেখতে আসা উৎসাহী মানুষজন খণ্ডহর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাসাদ দেখে চমকে উঠছেন। ধ্বংসস্তূপের পাশেই রাজবাড়ির মৃণ্ময়ী প্রতিমাকে চিন্ময়ী মা রূপে সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পী গোপাল ভুঁইয়া। গত একশো বছর ধরে মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপ্রতিমা গড়ে চলেছেন গোপালবাবু এবং তাঁর পূর্বপুরুষরা। রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী দুর্গা প্রতিমার মুখের ছাঁচ নকল হওয়ার ভয়ে তাঁরা কেউ কোনওদিনও দ্বিতীয় প্রতিমা গড়েন না। বাবা রামপদ ভুঁইয়ার পর গোপালবাবুই গত ষাট বছর ধরে রাজপরিবারের মৃৎশিল্পী। অনুষ্ঠানের বহর ও গেছে ছোটো হয়ে। এবার পূজোয় আরো কাটছাট হয়েছে করোনার কারনে। সবকিছুই হবে প্রশাসনিক নিয়ম মেনে।
No comments