" (প্রথম পর্ব)
আমি পিঁপড়েদের প্রতিনিধি শ্রীমান পিপীলিকাশ্রী বলছি-----
ভূমিকা ;---হে শ্রদ্ধেয় মহান মানবজাতি তোমরা আমাদের পিঁপড়েকূলকে আজ এই ফেসবুকের পাতার মাধ্যমে তোমাদের সাথে আর একটু পরিচিত হতে সুযোগ দাও ! আমরাও পৃ…
"
(প্রথম পর্ব)
আমি পিঁপড়েদের প্রতিনিধি শ্রীমান পিপীলিকাশ্রী বলছি-----
ভূমিকা ;---
হে শ্রদ্ধেয় মহান মানবজাতি তোমরা আমাদের পিঁপড়েকূলকে আজ এই ফেসবুকের পাতার মাধ্যমে তোমাদের সাথে আর একটু পরিচিত হতে সুযোগ দাও !
আমরাও পৃথিবীর বুকে তেরোকোটি বছরের পুরোনো মহান পিঁপড়ে জাতির বংশধর এবং তোমাদের আশেপাশে আমাদের উপস্থিতি জানানোর জন্য সুযোগ পেলেই আমরা কুটুস কাটুস করে তোমাদের একটু আধটু বিরক্ত করি । জেনে বা নাজেনে ! তোমরাও তো প্রায়শই আমাদের হাতে পায়ে পিষে মারো । আমরা পিঁপড়েরা তোমাদের ঘরের অবাঞ্ছিত কুটুম্ব বা প্রতিবেশী বলতে পারো । আমাদের আকার রঙ ও বাসস্থান বিচার করে তোমরাই আমাদের কত নাম দিয়েছো । যেমন গুড়ের পিঁপড়ে, ক্ষুদে পিঁপড়ে, সুরসুরি পিঁপড়ে, লাল পিঁপড়ে, কালো পিঁপড়ে, ডেয়ো পিঁপড়ে, কাঠ পিঁপড়ে, বিষ পিঁপড়ে,নালসো বা কুরকুটে পিঁপড়ে , রাক্ষুসে পিঁপড়ে ইত্যাদি ! আবার সাহিত্যের ভাষায় আমাদের জাতের বেশ সুন্দর একটা দিয়েছো "পিপীলিকা" তার জন্য তোমাদের অনেক ধন্যবাদ জানাই ! কিন্তু আমরা সবাই কিন্তু কামড়ুটে প্রকৃতির তা কিন্তু নয়! আমাদের মধ্যে বেশীর ভাগই নিরীহ এবং নিজেদের কাজকর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকি । আমাদের অনেকেই আবার লোকচক্ষুর আড়ালেই থাকতে ভালোবাসি । আমরা তোমাদের ঘরে লুকিয়ে থেকে মাঝে সাঝে পাত্রের ঢাকা খোলা পেলে একটু চিনি গুড় মিষ্টি-মাষ্টা খাই তাতে তোমাদের খুব রাগ হয় জানি ! তোমরা যে পূজোর প্রসাদে বাতাসা কদমা নকুলদানা ক্ষীর পায়েশ দাও তার একটু স্বাদ আমরাও গ্রহন করতে চাই তাতেও তোমাদের আপত্তি! তোমাদের কিন্তু আমরা সমীহ করেই চলি ! মানুষকে খারাপ ভাবতে আমাদের ভাল্লাগে না ! কারণ মানুষের মধ্যে বহু বিখ্যাত মানুষ আমাদের নিয়ে কাব্য গান কত কি লিখেছেন সেসব কি ভোলা যায়?
তোমাদের কাব্যে সাহিত্যে আমরা পিঁপড়েরা আছি:--
যাক গে, যার যা ভালো লাগে সে তাই খাবে আমাদের কিছু বলার নেই !
তবে হে মনুষ্যগণ, তোমরাও সবাই খারাপ নও, আমরা অন্তত তা ভাবি না !
ভুলি কি করে যে তোমাদের কেউ কেউ আমাদের কথা ভেবেছেন, আমাদের নিয়ে লিখেছেন। তোমাদের যিনি সবচেয়ে বড় কবি, সেই রবীন্দ্রনাথ কত ছোটবেলায় আমাদের না-খেতে পাওয়ার কষ্ট বুঝেছিলেন। তাই লিখে গেছেন—
"আমসত্ত্ব দুধে ফেলি
তাহাতে কদলী দলি
সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে..
হাপুস হাপুস শব্দ চারিদিক নিস্তব্ধ, পিঁপিড়া কাঁদিয়া যায় পাতে।"
তোমাদের আর এক কবি অমিয় চক্রবর্তীও আমাদের প্রতি খুব দরদি ছিলেন। তিনি লিখেছেন দরদভরা কবিতা—
"আহা পিঁপড়ে, ছোট পিঁপড়ে
ঘুরুক দেখুক থাকুক কেমন যেন চেনা লাগে ব্যস্ত মধুর চলা,
স্তব্ধ শুধু চলায় কথা বলা ৷
আলোয় গন্ধে ছুঁয়ে তারা
ঐ ভুবন ভরে রাখুক,
আহা পিঁপড়ে,ছোট্ট পিঁপড়ে
ধুলোর রেণু মাখুক।"
আবার মনে করিয়ে দিই নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের ‘কাজের লোক’ ছড়াটা তোমরা তো অনেকেই পড়েছো যেখানে মৌমাছি, পাখি আর আমাদের পিঁপড়েদের কাজকর্মের কথা বলা হয়েছে।
সেই ছোট খোকাটা বলছে—
" পিপীলিকা পিপীলিকা
দলবল ছাড়ি একা
কোথা যাও, যাও ভাই বলি।"
সেই কথা শুনে আমাদের এক জন উত্তরে বলছে—
" শীতের সঞ্চয় চাই
খাদ্য খুঁজিতেছি তাই,
ছয় পায়ে পিলপিল চলি।"
তোমাদের আর এক কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কী লিখেছেন, পড়েছো?
তিনি লিখেছেন—
"পিঁপড়ে ভাঁড়ার ঘরে কী করে?
এটা খায় ওটা খায় আর পিঁপড়েনিকে গান শোনায়।"
আর তোমাদের ঐ বিখ্যাত লোকগীতি গায়ক পূর্ণদাস বাউল আমাদেরকে তাঁর গানেও ঠাঁই দিয়েছেন --মনে করে দেখ --
"ঐ যেমন চিটে গুড়ে পিঁপড়ে পড়লে,
ঐ যেমন চিটে গুড়ে পিঁপড়ে পড়লে,
ও পিঁপড়ে লড়তে চড়তে পারে না!
গোলেমালে গোলেমালে পীরিত করো না!"
আমাদের পিঁপড়েদের নিয়ে প্রবাদ, ছড়া, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ কিছু কম লেখা হয়নি। গিরীন্দ্রশেখর বসু তো একটা আস্ত বই লিখে গেছেন আমাদের নিয়ে! বইটার নাম ‘লালকালো’ পড়ে দেখো । ঘোষেদের পুরনো ডোবার এক পারে কালোরা অন্য পারে লালদের বাস। দু’দলের লড়াই নিয়ে এক দারুণ মজার কাহিনি আছে বইটাতে।
তোমাদের গর্বের বাঙালি বিজ্ঞানী গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য আমাদের জীবনযাত্রা নিয়ে নিবিড় গবেষণা করেছেন। ‘বাংলার কীটপতঙ্গ’ বইটিতে! গোপালবাবু পদে পদে আমাদের শ্রম, নিষ্ঠা আর বুদ্ধির প্রশংসা করেছেন ওনাকে আমাদের তরফ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম!
আমাদের দৈহিক বর্ণনা:-
আমরা পিঁপড়েরা হলাম ছয় পদ বিশিষ্ট অমেরুদণ্ডী প্রাণী বা পতঙ্গ ! খেয়াল করে দেখবে আমাদের দেহ পরিস্কার ভাবে তিনটি ভাগে বিভক্ত! মাথা বুক পেট ! এইখানে আমাদের সাথে উইপোকাদের প্রভেদ ! উইপোকারা কিন্তু আমাদের মতো পিঁপড়ে নয় ! আমাদের দুটি পুঞ্জাক্ষি আছে তার মধ্যে আছে বহুসংখ্যক আলোক সংবেদী কোষ ! তা সত্বেও আমরা কিন্তু ভাল দেখতে পাই না! তবে আমাদের মাথার দুধারে দুটি এন্টেনা আমাদের যে কোনো জিনিসের গন্ধ শুঁকতে সাহায্য করে ! আমরা চলাফেরার সময় ফেরামেন নামক বেশ কয়েক প্রকার রাসায়নিক আমাদের চলার পথের উপর ছড়িয়ে দিই ফলে আমাদের বন্ধুরা সেই রাসায়নিকের গন্ধ নিয়ে আমাদের অনুসরণ করতে পারে এবং আমরা আমাদের গন্তব্যস্থল চিনতে পারি!
আমাদের কান নেই কিন্তু আমাদের হাঁটু এবং পায়ে আছে বিশেষ এক ধরণের ভাইব্রেসন বা কম্পন সংবেদী কোষকলা যার মাধ্যমে আশেপাশের পরিস্থিতি আমরা বুঝতে পারি অর্থাৎ তারাই কানের কাজটা করে দেয়। জানবে সমস্ত পোকামাকড়দের মধ্যে দেহের তুলনায় সবচেয়ে বড় মস্তিষ্কের অধিকারী আমরা। হেঁ হেঁ !
আর একটা কথা আমাদের তোমাদের মতো ফুসফুস নেই। তার বদলে আমাদের শরীরের চিটিন নামক দেহ আবরনীতে অনেক সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ছিদ্র থাকে যার সাথে যোগ থাকে খুব সুক্ষ বায়ুনালীর ! তাদের মাধ্যমে শরীরের ভিতর ও বাইরে অক্সিজেন চলাচল করে!
আর একটা কথা আমরা আমাদের শরীরের চেয়ে কুড়িগুন ওজন বইতে বা ঠেলে নিয়ে যেতে পারি কিন্তু ! পারবে তোমরা মানুষেরা ? সুতরাং হেলাফেলা করো না আমাদের পিঁপড়ে বলে !
আমরা স্ত্রী পুরুষ ও শ্রমিক তিন শ্রেনীর:-
আমাদের মধ্যে তিনটে শ্রেণী -স্ত্রী পুরুষ ও শ্রমিক !
আমাদের পুরুষ ও রানী পিঁপড়েদের পাখা থাকে তবে রানীদের ডিম পাড়ার সময় পাখনা ঝরে যায়! সাধারণত গরম কালে আমাদের পুরুষ পিঁপড়েরা রানী পিঁপড়ের সাথে উড়ন্ত অবস্থায় মিলিত হয় এবং দুঃখের বিষয় এই ঘটনার দুই একদিনের মধ্যেই পুরুষটি মারা যায়! এর পর রানী মৌমাছিদের পাখা ঝরে যায় এবং তাদের কাজ হল শুধু ডিম পাড়া !
পিঁপড়েদের সব ডিমগুলো নিষিক্ত হয় না ! নিষিক্ত ডিম থেকে শুধু স্ত্রী পিঁপড়ে হয় ! যাদের মধ্যে থেকে পরবর্তীকালে দুচারজন রানী পিঁপড়ে হবে ! আর অনিষিক্ত ডিম থেকে শুধু পুরুষ পিঁপড়ে জন্মায় ! আর অন্যদিকে প্রজনন ক্ষমতাহীন বা বন্ধা স্ত্রী পিঁপড়েরাই হয় শ্রমিক পিঁপড়ে!
আমাদের শ্রমিক পিঁপড়েরা আমাদের খাদ্য জোগাড় করা ঘরবাড়ি গড়া রানীদের পাহাড়া দেওয়া ইত্যাদি সব কাজই করে!
আমাদের বাসস্থান:--
আমাদের মধ্যে বড় আকারের শ্রমিকেরা সেনা পিঁপড়ে নামে পরিচিত। এদের সাধারণত বড় মাথা এবং বড় ম্যান্ডিবল থাকে।শত্রুর আক্রমণ বা ক্ষতি থেকে কলোনি রক্ষার দায়িত্ব এদের। আমাদের মধ্যে কোন কোন পিঁপড়ে মাটির নিচে বাসা বানায়; আবার গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকার অনেক প্রজাতি গাছে বাসা তৈরি করে।কেউ কেউ পাথর বা শিলার তলায়, গাছের ফোঁকরে, গুড়ির নিচে অথবা এ ধরনের স্থান বেছে নেয় বাসা তৈরির উদ্দেশ্যে। কুরকোট বা লাল পিঁপড়েরা গাছের পাতা মুড়ে বাসা বানায়!
জনসংখ্যা র কারণ :--
মনে রেখ আমাদের একটা রানী পিঁপড়ে প্রায় কুড়ি বছর বাঁচতে পারে আর শুধু ডিম পেড়ে যায়! কোনো কোনো জাতির রানী প্রায় তিরিশ বছর বাঁচে আর ডিম পেরে যায় সমানে ! পুরুষ পিঁপড়ে বাঁচে বড় জোর বছর খানেক ! সুতরাং আমরা কেন যে এত বিশাল সংখ্যাতে বিরাজমান তা তো বেশ বুঝতেই পারছো !
লাল কালো ক্ষুদে পিঁপড়ে:--
আমরা লাল এবং কালো দুই রঙের পিঁপড়েই তোমাদেরকে কামড়াই কিন্তু আমাদের লাল পিঁপড়েয় থাকা ফরমিক এসিডের জন্য যখন লাল পিঁপড়ে কামড়া তখন জ্বালা অনুভব করো , কিন্তু আমাদের কালো পিঁপড়েদের ফরমিক এসিড না থাকায় তারা কামড়ালে তোমরা অনুভব করতে পারোনা। তাই তোমরা ভাব আমরা কালো পিঁপড়েরা কামড়াই না ! তাই অনেকে আমাদের সুরসুরি পিঁপড়ে বলে !
আমাদের খাদ্য:--
তোমরা মানুষরা আমাদেরকে সর্বভুক পতঙ্গ বলে মনে করো । তবে তার অর্থ এই নয় যে, আমরা সব জাতের পিঁপড়া সব কিছুই খাই। চিনিযুক্ত খাবার, যেমন গুড় চিনি বাতাসা মধুমন্ডা মিঠাই ফল-ফুলের রস আমাদের বেশী পছন্দ ! তবে পচনশীল মৃত প্রাণী, উদ্ভিদভোজী কীটপতঙ্গের দেহ নিঃসৃত মিষ্টি রসও আমরা তৃপ্তি সহকারে খেয়ে থাকি !
আমাদের মধ্যে সাংঘাতিক জাতেরা:-
তবে আমাদের স্বীকার করতে একটু লজ্জা করছে যে আমাদের পিঁপড়ে কূলে একধরনের পিঁপড়ে আছে তারা ভয়ানক প্রকৃতির মাংসাশী ! তবে ওরা ঐ দক্ষিন আফ্রিকার ও আমাজনের জঙ্গলে থাকে ! ওদের কথা তোমাদের কাছেই শুনেছি !
বিষ পিঁপড়ে:-
আমাদের আর একটা শ্রেনী আছে ! লাল বা বাদামী রঙের এই পিঁপড়েদের তোমরা বিষ পিঁপড়ে বা কাঠ পিঁপড়ে বা আগুনে পিঁপড়ে বল ! এদের জন্য ও আমাদের অনেক বদনাম হয়েছে ! এরা সাধারণত শুকনো বাঁশ বা কাঠের মধ্যে বাসা বাঁধে !
তোমাদের মধ্যে আগুনে পিঁপড়া বা বিষ পিঁপড়ে কিম্বা কাঠ পিঁপড়ের কামড় যাঁরা খেয়েছো তাঁরাই জান সে কামড়ে ব্যথা কতটা তীব্র। তীব্র মাত্রার ফরমিক এসিড থাকায় ওদের কামড়ে এত যন্ত্রণা ! কয়েকদিন ভুগতে হয় এই যন্ত্রণা নিয়ে। পিঁপড়ার কামড়ে চুলকানো, ব্যথা, আক্রান্ত স্থান লাল হয়ে যায়! একটা কথা বলি শোনো ওরা যেখানে কামড়ায় না সেখানে একটু মধু বা চুন লাগিয়ে দেবে , দেখবে যন্ত্রণা কমে যাবে !
রাক্ষুসে পিঁপড়ে:--
এই ধরনীর বুকে সবচেয়ে আশ্চর্য জনক পতঙ্গ হল আমাদের এই রাক্ষুসে পিঁপড়ে ! আমাদের মধ্যে কার্পেন্টার এন্ট্, আরজেনটাইন এন্ট্ , আর্মি এন্ট্ একটু বিপজ্জনক প্রকৃতির বটে ! তবে সবচেয়ে ভয়ংকর হল দক্ষিন আফ্রিকার গভীর জঙ্গলের মাংসাশী পিঁপড়ে যাদের একমাত্র আহার্য মাংস ! অবিশ্বাস্য হলেও এ এক ভয়ঙ্কর সত্য ! দয়া করে ওদের কাজকর্মের জন্য আমাদের সব জাতের পিঁপড়েদের বদনাম করো না !
আমাদের মধ্যে এই জাতের পিঁপড়েরা যাযাবর জাতীয় প্রাণী। এক জায়গায় দীর্ঘদিন থাকতে চায় না। কোনো এক জায়গায় কিছুদিন থাকার পর খাদ্যাভাব দেখা দিলে লাখ লাখ পিঁপড়া মিছিল করে চলে অন্য কোথাও। মাইলের পর মাইল জায়গাজুড়ে তারা খাদ্যান্বেষণের অভিযান চালায়। তখন কোনো জন্তু-জানোয়ার বা মানুষ তাদের বাহিনীর সামনে পড়লে আর রেহাই নেই, মৃত্যু অবধারিত!
মানুষ বাঘ বা হাতি সবই তাদের কাছে সমান। কাউকেই পরোয়া করে না। সাঁড়াশির মতো নখ দিয়ে চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরে এমন আক্রমণ চালায় তখন শিকারের অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। তারপর শিকার করা মানুষ বা জানোয়ারের মাংস সবাইমিলে মহাআনন্দে খেয়ে নেবে সংক্ষিপ্ত সময়ে ! তখন মৃত শিকারের হাড় কটা ছাড়া কিছুই বাকি থাকে না ! আমাদের মাঝে এমন ভয়ঙ্কর প্রকৃতির পিঁপড়ার আক্রমণ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আজকের বিজ্ঞানের যুগের তোমাদের মতো বুদ্ধিমান মানুষও হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। কোনো বুদ্ধি বা কৌশলই তাদের কাছে খাটছে না। কামান, বন্দুক বা যে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র এদের বিরুদ্ধে অচল। আগুন জ্বেলে দিলে ওরা ঝাঁকে ঝাঁকে আগুনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আগুনকে নিভিয়ে দেয়। শিকার জলে ঝাঁপিয়ে পড়লেও রেহাই নেই। সাঁতার কেটে চলে যায় শিকারের কাছে। রাক্ষুসে পিঁপড়াগুলোকে দেখা মাত্র জঙ্গলের হাতি, গণ্ডার, জিরাফ, হায়েনা, এমন কি বাঘ বা সিংহ পর্যন্ত ভয়ে লেজ তুলে পাগলের মতো ছুটতে শুরু করে।
আমাদের সাধারণ পিঁপড়েদের মতামত :--
আমরা সাধারণ পিঁপড়েরা ঐ রকম আচার ব্যবহার পছন্দ করি না !
যাক ঐ রকম খারাপ জনগোষ্ঠী তো তোমাদের মানুষ জাতটার মধ্যেও আছে ! তোমাদের মধ্যেও বহু মানুষ তো নির্বিচারে গরু ভেড়া ছাগল হরিণ উট দুম্বা শুয়োর সাপ ব্যাঙ মাছ হাঙর পোকা মাকড় সবই খাও ! তোমাদের অনেকে তো আমাদের জাতভাই যারা জঙ্গলের গাছের পাতায় বাসা বেঁধে থাকে যাকে আদিবাসী মানুষেরা কুরকুটে বলে তাদের ডিমগুলোও খেয়ে নাও চাটনি আচার বানিয়ে !
আমাদের পিঁপড়েদের জনসংখ্যা;--
চমকে যেও না ! আমাদের এই পৃথিবীতে প্রায় ১২০০০ প্রজাতির পিঁপড়ের মোট সংখ্যা একলক্ষ হাজার কোটির কাছাকাছি !
আর অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত পৃথিবীতে তৎকালীন পিঁপড়ের মোট ওজন পৃথিবীতে তৎকালীন মানুষের মোট ওজনের থেকে বেশী ছিল ! বর্তমান পৃথিবীতে অবশ্য মোট ওজনের হিসাবে আমরা মানুষেরা পিঁপড়ে কে হারিয়ে দিয়েছি বিশ্বজনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ! সারা বিশ্বের সমস্ত পতঙ্গের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির পিঁপড়েদের মিলিত সংখ্যা মোট পতঙ্গ সংখ্যার প্রায় ৪০ ভাগ!
আর এই পিঁপড়েকে নিয়েই সবচেয়ে বেশী গবেষণা ও তথ্য সংগৃহীত হয়েছে ! পিঁপড়েকে নিয়ে যত বই লেখা হয়েছে আর কোনো প্রানীর ক্ষেত্রে তা হয়নি ! আমাদের বাংলার বিখ্যাত পতঙ্গ বিশারদ গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য পিঁপড়ে সহ বহু পতঙ্গ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন !
আমাদের নিয়ে গবেষণা:--
আমাদের নিয়ে দেশ-বিদেশে কত গবেষণা হয়েছে সেই সব গবেষণা থেকে এমন অনেক তথ্য পাওয়া গেছে, যা তোমরা অনেকেই জাননা !
*যেমন আমরা পৃথিবীর তেরো কোটি বছরের পুরনো বাসিন্দা।
*সারা বিশ্বে আমাদের মোট সদস্যসংখ্যা প্রায় দশ হাজার লক্ষকোটি !!
*আমরা প্রায় সাড়ে বারো হাজার প্রজাতিতে বিভক্ত।
*আমরা জলের নীচে চোদ্দো দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারি।
*আমরা সারা দিনে মাত্র কয়েক মিনিট ঘুমোই।
*আমরা কলোনি বানিয়ে অনেকে মিলেমিশে একসাথে থাকতে ভালবাসি থাকি। কলোনি ছাড়া একক ভাবে থাকতে পারি না।
জানি, তোমরা আমাদের গুণমান এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের প্রসঙ্গ তুলবে। সে যা হোক, আমরা ছোট বলে হেয় কোরো না। আমরা কিন্তু নানা ভাবে জীবজগতের উপকার করি। জীববৈচিত্র রক্ষায়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমাদেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে। ক্ষুদ্র হতে পারি কিন্তু তুচ্ছ নই। আমাদের কাছ থেকেও তোমাদের শেখার আছে অনেক কিছু। কি, ছোট মুখে বড় কথা বলে ফেললাম বলে মনে হচ্ছে না তো?
(চিত্র সংগৃহীত! কুরকুট পিঁপড়ে নিয়ে পরের পর্বে লিখবো !)
( লেখা সংগৃহীত--- লেখক--- সমীর ব্যানার্জি ) ।
No comments