Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

যাদু গাছ,সজনে গাছ" --সমীর ব্যানার্জী

"
ছোটবেলায় দেশে গ্রামে  রান্নার প্রয়োজনের প্রায় সবরকম সবজি আমাদের বাড়ির চতুর্দিকের খোলামেলা জমিতে বাবার হাতে লাগানো বা চাষকরা জমি থেকেই পাওয়া যেত  ! শুধু তাই নয় অনেক সবজি ও ফল যেমন লাউ চালকুমড়োর পাতি লেবু,দেশী মর্তমান কলা , ক…

 




"


ছোটবেলায় দেশে গ্রামে  রান্নার প্রয়োজনের প্রায় সবরকম সবজি আমাদের বাড়ির চতুর্দিকের খোলামেলা জমিতে বাবার হাতে লাগানো বা চাষকরা জমি থেকেই পাওয়া যেত  ! শুধু তাই নয় অনেক সবজি ও ফল যেমন লাউ চালকুমড়োর পাতি লেবু,দেশী মর্তমান কলা , কাঁচা কলা , পেঁপে , সজনে ডাঁটা, ওল , এগুলি বেশী পরিমাণে হতো বলে বাজারে ফড়েদের কাছে বিক্রিও করা হতো !


 এর মধ্যে  সবচেয়ে বেশী মনে পড়ে যে গাছ দুটি  তা হলো সজনে ডাঁটা ও মর্তমান কলা ! সজনে গাছ তো বেড়ার ধারে ধারে গোটা দশেক ছিল আর কলাগাছের একটা ছোটোখাটো  বাগানই ছিলো ! বাবার গাছের হাত খুব ভাল ছিল বলে অনেককেই বলতে শুনেছি ! 

তখন জানতাম না  এত সাদামাটা সজনে গাছের এত সুন্দর একটা বৈজ্ঞানিক নাম আছে তা হল --মরিংগা অলিফেরা !

এর অশেষ  স্বাস্থ্যকর গুনাবলীর জন্য  ইংরেজিতে গাছটিকে মিরাকল ট্রি বা অলৌকিক গাছ নামেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। এর ফল বা ডাঁটাকে সাহেবরা "ড্রামস্টিক"ও বলে থাকেন , দেখতে ঢাক বা ড্রাম পেটানোর কাঠির মতোই বটে !


বর্ণনা:--


যাই হোক পৌষ-মাঘ মাসে  সজনের ফুল আসে, ছোটো ঝুরি ভরে সজনের ফুল কুড়োতাম ভাইবোনদের নিয়ে! তারপর তার কচিকচি ডাঁটা সেও এক উপাদেয় জিনিস, ভাতের মধ্যে  কাপড়ে বেঁধে সেদ্ধ করে তেল নুন মেখেও খেয়েছি !  আরও পরে চৈত্র বৈশাখে  পরিনত ডাঁটার সব রকম সবজি প্রচুর  পরিমানে খাওয়া হতো আমাদের ঘরে এক এক বেলা আট দশটা পাতের সংসারে ! মনে আছে মায়ের হাতের তৈরী  পাতের প্রথম তরকারি  সজনের ফুলের চচ্চড়ি  দিয়েই  প্রায় সব ভাত খেয়ে  ফেলতাম ! 


এখন তো শহরের বাজারে একশো গ্রাম সজনের ফুল কুড়ি  টাকায় কিনতে হয় আর খান তিন চার ডাঁটা কিনে আনি পনের কুড়ি টাকায় !  মনে মনে হাসি পায়!

কারণ মনে আছে  আমাদের ছোটো বেলায় একটা পূর্ণবয়স্ক  গাছের সব ডাঁটা বিক্রি হতো আট দশ টাকায় ! 

 মার হাতের রান্না  ভাল ছিল তবে আমার স্ত্রীর রান্নার হাতও খুব ভাল ! সজনের ডাঁটা দিয়ে শুক্তো বা ফুল চচ্চড়ি বানালে বেশী করে খেয়ে ফেলি বলে মাঝে মাঝে সহাস্য বকুনিও দেয় ! 

বলে -" তুমি তো দুবেলার সবজি একবেলাতেই শেষ করে দিচ্ছো !"

যাক  গে ওসব আভ্যন্তরীণ  বিষয় !


সজনে পাতাও যে শাক হিসেবে খাওয়া যায়, এটা সবাই জানি না। তেল ও রসুন দিয়ে রান্না সজনে শাক খেতে শুধু সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিকরও বটে ! 

পৌষ-মাঘ মাসে সজনে গাছে ফুল ফোটে অসাধারণ সে দৃশ্য! সাদা ফুলভারেই যেন অবনত গাছের শাখা প্রশাখা ! তারপর  ফুল থেকে এক মাসের মধ্যে সরু সরু সুতো বা ইঁদুরের লেজের  মতো ডাঁটা বের হয়  !  আমরা সজনে ডাঁটা  বললেও আসলে ওটা সজনে  গাছের ফল ! কুমড়ো, লাউ  বা কাটোয়ার ডাঁটার মতো  গাছের কান্ড বা  অংশ  নয়। এখন তো বাজারে নরম সজনে ডাঁটা কেজি প্রতি একশো কি  একশো কুড়ি  টাকায় বিক্রি হয়। চৈত্র-বৈশাখ মাসে একটু ছিবড়ে হওয়া  প্রমাণ আকারের ডাঁটা হয় সেই ডাঁটার দামও কম নয়।


চাষ:-

সজনে গাছের চাষও খুব সহজ। গাছের একটা ছোটো  ডাল মাটিতে বেড়ার ধারে  পুঁতে দিলেই হলো। এই গাছ বাড়েও খুব দ্রুত। দুই তিন বছরে ফুল দেয়। এর ফুল, পাতা, ফল সব কিছুই সুস্বাদু ! তবে শুঁয়োপোকারও  খুব পছন্দের পাতা এই সজনে পাতা ! 


গুনাগুন :-

পরীক্ষাগারে  গবেষণার মাধ্যমে  জানা গেছে  সজনা গাছের প্রতি গ্রাম পাতায় গাজরের চারগুন বেশি  ভিটামিন এ, দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কলার চেয়ে তিন গুণ বেশি পটাসিয়াম, কমলালেবুর চেয়ে সাতগুণ বেশি ভিটামিন, দইয়ের চেয়ে দুই গুণ বেশি প্রোটিন আছে।

প্রায়  চার হাজার বছর ধরে রন্ধন এবং নানা চিকিৎসায় সজনে গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে।  আয়ুর্বেদিক  শাস্ত্র  অনুযায়ী প্রায় তিনশো রকমের অসুখের চিকিৎসা করা সম্ভব এই গাছের নানা অংশ দিয়ে। আমাদের দেশে  বহু বছর ধরে বাড়ির আনাচে-কানাচে, বনে-জঙ্গলে, যত্নে অযত্নে  এই গাছের চাষ হয়ে থাকে !


পুষ্টির ভান্ডার :--

 সজনার শাক ও ডাঁটাতে প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি এতে আয়রনও আছে। আয়রনের দিক থেকে এটি পালং শাকের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি শক্তিশালী। সজনে ডাঁটা ও শাককে এন্টি-অক্সিডেন্টের খনি বলা যায়। 


 বিদেশে সজিনার বীজের থেকে  তেলও তৈরী হয় যা নাকি অন্য যেকোনো ভেজিটেবেল অয়েলের  এমনকি ওলিভার অয়েলের থেকেও বেশী দামী  এর গুণাগুণের জন্য । আমাদের দেশে সজনে গাছ ও তার ফল  নিয়ে  গবেষণা  ও  প্রয়োগের এখনও অনেক সুযোগ  আছে ! হেলায় জন্মায় আর বেড়ে ওঠে বলে সজনে মোটেই হেলাফেলা করার গাছ নয় ! 


(চিত্র সংগৃহীত)----( লেখা সংগৃহীত ) ।

No comments