Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

_শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে শ্রীরামকৃষ্ণ শিষ্য স্বামী ব্রহ্মানন্দজী মহারাজের একান্ত সেবক ও পরবর্তীকালে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সহ অধ্যক্ষ স্বামী নির্বাণানন্দজী কথায় শিক্ষার আদর্শ_

_শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে শ্রীরামকৃষ্ণ শিষ্য স্বামী ব্রহ্মানন্দজী মহারাজের একান্ত সেবক ও পরবর্তীকালে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সহ অধ্যক্ষ স্বামী নির্বাণানন্দজী কথায় শিক্ষার আদর্শ_
*স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন : "Education is…

 





_শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে শ্রীরামকৃষ্ণ শিষ্য স্বামী ব্রহ্মানন্দজী মহারাজের একান্ত সেবক ও পরবর্তীকালে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সহ অধ্যক্ষ স্বামী নির্বাণানন্দজী কথায় শিক্ষার আদর্শ_


*স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন : "Education is the manifestation of the perfection already in man."* - *মানুষের ভিতর পূর্ব থেকেই যে পূর্ণত্ব রয়েছে তার বিকাশসাধন করাই শিক্ষা।*


*'পুর্ণত্ব' বলতে বোঝায় - অভাব-অভিযোগ, দুঃখ-দৈন্য, রোগ-শোক, জরা-মৃত্যুর অতীত এক আনন্দস্বরূপ সত্তা।*


_এই সত্তা সকলের ভিতরেই রয়েছেন ; হিন্দুদের একমাত্র শাস্ত্র 'বেদ' এই মহান সত্য সুমধুর ও উদাত্ত স্বরে শুনিয়েছেন সকল বিশ্ববাসীকে।_


*নিজের ভিতরে সুপ্ত এই সত্তাকে সম্পূর্ণভাবে জানাই মনুষ্য জীবনের চরম উৎকর্ষ বা পূর্ণ বিকাশ।*


_মনুষ্যজীবনে এই চরম উৎকর্ষ লাভ সম্বন্ধে শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন : *"মানবজীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য ভগবান লাভ করা।"*_


_এই উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য প্রয়োজন সীমাহীন প্রচেষ্টা যার দ্বারা মানুষ দৃঢ়চিত্তে ও একাগ্র মনে নানাবিধ জ্ঞানার্জনে সক্ষম হয় এবং তার অন্তর্নিহিত আনন্দময় সত্তাকে প্রকট করে জীবনকে সার্থক করে তুলতে পারে।_


*সাধারনত কিশোর বয়সে মানুষের কোমল বৃত্তিগুলির নবোদ্গম হয়।*


*এই সময় ছেলেমেয়েদের মধ্যে আদর্শ শিক্ষার প্রবর্তন করতে পারলে বিনয়-নম্রতা, ত্যাগ-সংযম-পবিত্রতা, উদারতা, মাতাপিতা ও অপর গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা, নিয়মানুবর্তিতা এবং সর্বোপরি ভগবানে স্থির বিশ্বাস প্রভৃতি বিশেষ সৎ গুণাবলী ক্রমশ উৎকর্ষ লাভ করে এবং ভবিষ্যৎ জীবনের বুনিয়াদ দৃঢ় করে।*


_এইরূপ আদর্শ শিক্ষার ফলে শিক্ষার্থীগণের মধ্যে বিকশিত হয় পূর্ণ মানবত্ব।_


*সেই পরম সত্যকে লাভ করে শিক্ষার্থী নিজেও সার্থক হয় এবং অপরকেও পূর্ণতালাভে সাহায্য করে।*


_এইরূপে যথার্থ শিক্ষা প্রবর্তনের ফলে অতি প্রাচীনকালেই ভারতবাসী ব্যক্তিজীবনে অভ্যুদয়, সমাজজীবনে পুষ্টি ও রাষ্ট্রজীবনে কল্যাণ বিধান করে এক অপূর্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সৃষ্টি করেছিল।_


ফলে বর্তমান কালেও ভারতের আবালবৃদ্ধবণিতার মনেপ্রাণে আধ্যাত্মিকতার চিরপ্রস্রবণ স্বতই পরিলক্ষিত হয়।


এই প্রস্রবণ কখনো বেগবতী, আবার কখনো বা ক্ষীণগতি।


*প্রায় হাজার বছরের বিদেশী ও বিজাতির অত্যাচার, অনাচার ও উৎপীড়ণে জাতীয় জীবন-স্রোতের গতি মন্দীভূত হলেও কখনোই তাকে একেবারে রুদ্ধ করা সম্ভব হয়নি ; ভবিষ্যতেও তার সম্ভাবনা নেই।*


*বরং অতীতের প্রাণবন্ত প্রবল জীবনধারা প্রবলতর হয়ে তা ভবিষ্যতে জগতের সর্বত্র প্রবাহিত হবে।*


*স্বামীজি বলেছেন : "দক্ষিনেশ্বর থেকে যে প্রেম-ভক্তির জোয়ার উঠেছে, তা জগৎকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।"*


সচ্চিদানন্দস্বরূপ ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণরূপে যুগধর্ম প্রবর্তন করতে আবির্ভূত হয়েছেন।


তাঁর শ্রীপাদপদ্মে থেকেই উদ্ভূত হয়েছে প্রেম-ভক্তির এই জোয়ার।


*ভারতের শিক্ষার চূড়ান্ত আদর্শ পরাবিদ্যা আয়ত্ত করা।*


সভ্যতার প্রারম্ভ থেকে শিক্ষার এই মহান আদর্শ ভারতে সুপ্রচলিত।


*কিশোর বয়স‌ই বিদ্যার চর্চা ও চর্যার উপযুক্ত সময়।*


*কিন্তু গৃহস্থের সংসারে বিবিধ লোকের সংশ্রব এবং নানা বিপরীত চিন্তার সংঘর্ষে কিশোর প্রাণের স্বাভাবিক বৃত্তিগুলি সুন্দররূপে বিকশিত হতে বাধা পায়।*


*ছেলে মেয়েদের উপযুক্ত শিক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থা না হলে শিক্ষার অভাবে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রজীবন অধোগতি প্রাপ্ত হয়।*


*ভগবানের অশেষ করুণা ও কৃপাবলে ভারতের আর্য মনীষিগণ সুপ্রাচীন কাল থেকে গুরুগৃহে ছেলেমেয়েদের যথার্থ শিক্ষার ব্যবস্থা করেন।* 


এখানে স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে যে, গুরুগৃহে অবস্থানকালে শিক্ষার্থীদের পারমার্থিক এবং জাগতিক উভয় শিক্ষাই দেওয়া হতো কিনা? 


*ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে - প্রাচীন ভারতের সামগ্রিক শিক্ষা-ব্যবস্থায় মানুষকে তার যোগ্যতা ও প্রবণতা অনুযায়ী জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য যাবতীয় শিক্ষা দেওয়া হতো, কিন্তু সমস্ত শিক্ষাপ্রকল্পেরই মূল লক্ষ্য ছিল পারমার্থিক সত্য লাভ।* 


_বিভেদের প্রাচীর দিয়ে জাগতিক শিক্ষা থেকে পারমার্থিক শিক্ষাকে পৃথক করে রাখা হয়নি।_ 


এই সুপরিকল্পিত সামগ্রিক শিক্ষার সুব্যবস্থা ছিল গুরুগৃহে। 


*গুরুকুল প্রথার সূত্র ধরেই বর্তমানের আবাসিক বিদ্যাশ্রম।* 


*শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে পিতা-পুত্রের অপরিসীম স্নেহ ও পরম প্রীতির সম্পর্কের মধ্যেই আবাসিক বিদ্যাশ্রমের প্রাণশক্তি।* 


এই প্রাণশক্তির পুষ্টি সাধন করতে পারলে বিদ্যাশ্রমের জীবনধারা সাবলীল গতিতে প্রবাহিত হবে।


*শিক্ষার বিষয় সম্বন্ধে স্বামীজী নির্দেশ দিয়েছেন - পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যার সঙ্গে ভারতের নিজস্ব অধ্যাত্মবিজ্ঞানের সমম্বয় করে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।* 


_*ধর্মই শিক্ষার প্রাণশক্তি।*_ 


_এই প্রাণ শক্তির সাহায্যেই ছেলেমেয়েদের আত্মশক্তিকে জাগ্রত করতে হবে, পূর্ণতালাভের পথে সাহায্য করতে হবে।_ 


এই প্রচেষ্টার সাথে সাথেই আমাদের জাতীয় আদর্শ সম্বন্ধেও সচেতন থাকতে হবে।


_বিদ্যাশ্রমের শিক্ষার্থীগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপনান্তে স্বাভাবিকভাবেই সংসারাশ্রমে প্রবেশ করে।_


*এই নতুন পরিস্থিতিতে সুশিক্ষিত, সুসংযত, ভগবানবিশ্বাসী ও নবীণ নাগরিক সকলে এই সংসারার্ণবে প্রবল উত্তাল তরঙ্গের মধ্যে যাতে সুদক্ষ নাবিকের ন্যায় পাকা হাতে হাল ধরে, জীবনের লক্ষ্যে উত্তীর্ণ হতে পারে, তার জন্যই স্বামীজী বলেছেন : "ত্যাগ ও সেবাই ভারতের জাতীয় জীবনের আদর্শ।"*


*এই আদর্শ প্রত্যেক যুব-জীবনে বিধৃত করতে পারলেই আমাদের জাতীয় জীবনে সুদৃঢ় হতে পারবে - স্বমহিমায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।*


( নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের একাদশ বার্ষিক পুরষ্কার বিতরণী উৎসবের সভাপতি হিসাবে প্রদত্ত ভাষণ। )


পৃষ্ঠা - ২০-২২


উদ্বোধন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত 'দেবলোকের কথা' - ব‌ই থেকে সংগৃহীত। প্রথম সংস্করণ - জানুয়ারি ১৯৯৭, ষষ্ঠ পুনর্মুদ্রণ - আগষ্ট ১৯৯৯, মূল্য - পনেরো টাকা।

No comments