ময়নার বাকচা পঞ্চায়েত এলাকায় ছ’মাসের পুরনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকা ১২৬জন দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করতে অভিযানে নামল পুলিস। পুলিসের ১০০জনের বিশেষ টিম এই অভিযান শুরু করেছে। রবিবার থেকে তিনটি সিফ্টে ২৪ঘণ্টা ব্যাপী এই অভিযান শুরু হ…

ময়নার বাকচা পঞ্চায়েত এলাকায় ছ’মাসের পুরনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকা ১২৬জন দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করতে অভিযানে নামল পুলিস। পুলিসের ১০০জনের বিশেষ টিম এই অভিযান শুরু করেছে। রবিবার থেকে তিনটি সিফ্টে ২৪ঘণ্টা ব্যাপী এই অভিযান শুরু হয়েছে। পাঁচজন ইন্সপেক্টর, ২০জন এসআইকে ওই টিমে রাখা হয়েছে। নন্দকুমারের সার্কেল ইনসপেক্টর অভিজিৎ বিশ্বাস, এনফোর্সমেন্ট শাখার ইনসপেক্টর(ডিইও-২) কৃষ্ণেন্দু প্রধান, (ডিইও-৩)সত্যজিৎ করঞ্জাই সহ তমলুক, পাঁশকুড়া, নন্দকুমার, চণ্ডীপুর, কোলাঘাট প্রভৃতি থানা এবং জেলা হেডকোয়ার্টার থেকে পুলিস অফিসার ও কর্মীদের বাকচায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বরুণা, চাঁদিবেনিয়া ও বাকচা স্কুলে পুলিস অফিসার এবং কর্মীরা ক্যাম্প করে আছেন। সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টো, বেলা ২টো থেকে রাত ১০টা এবং রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত তিনটি সিফ্টে এই অভিযান শুরু হয়েছে। পুলিস সুপার অমরনাথ কে বলেন, সম্প্রতি বাকচার চাঁদিবেনিয়া থেকে বোমা উদ্ধার হয়েছে। বাকচা এলাকাটি স্পর্শকাতর। তাই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করেছি।ময়না থানা এলাকায় মোট ২২৯জনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে। তারমধ্যে ছ’মাসের পুরনো ওয়ারেন্ট সংখ্যা ১২৪। গত ছ’মাসের মধ্যে কোর্ট আরও ১০৫জনের নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ময়নায় ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে শুধুমাত্র বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১২৬জনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। পরোয়ানা জারি থাকা দুষ্কৃতীদের বেশিরভাগই বিজেপির লোকজন। সম্প্রতি বরুণা ও চাঁদিবেনিয়া গ্রামে ঘরছাড়া লোকজন ঘরে ফেরায় রাজনৈতিক উত্তেজনা রয়েছে বলে গত ৯সেপ্টেম্বর জেলা পুলিসকে রিপোর্ট দিয়েছিল ময়না থানা। তারপরই রবিবার থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করল জেলা পুলিস। ২০১৮সালে পঞ্চায়েত ভোটের বোর্ড গঠনের সময় থেকেই মাঝেমধ্যে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাকচা। ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মোট ২৫টি বুথ রয়েছে। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান শুকলাল মণ্ডল সহ আটজন সদস্য আজও বাড়িছাড়া। তৃণমূলের সাংগঠনিক স্তরের একঝাঁক নেতা আড়াই-তিন বছর ঘরে ফিরতে পারছেন না। সংঘর্ষে দু’পক্ষের হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৯সালে ১৪অক্টোবর বরুণা গ্রামের তৃণমূল কর্মী বসুদেব মণ্ডল খুন হন। ওই খুনের ঘটনায় বিজেপির ১৯জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর হয়। মাত্র ছ’জন ধরা পড়ে। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, ওয়ারেন্ট ইস্যু হওয়া নেতা-কর্মীদের আট সপ্তাহ গ্রেপ্তার করা যাবে না বলে হাইকোর্টের নির্দেশিকা আছে।ধারাবাহিক রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিস আদালতে চার্জশিট পেশ করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না। কারণ, ওই এলাকা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। একাধিকবার অভিযানে গিয়ে পুলিসকে লক্ষ্য করে বোমাবাজি হয়েছে। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও বোমা ছোড়ায় পারদর্শী। সরু ঢালাই রাস্তার ভিতর ঢুকে যাওয়ার পর বেরনো মুশকিল। জায়গাটি পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং ও ভগবানপুর থানার সীমানা লাগোয়া। ফলে কেলেঘাই নদী টপকে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয়। ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা নিয়ে দুষ্কৃতীরা বাকচাকে গড় বানিয়ে ফেলেছে। বসুদেব মণ্ডল খুনের ঘটনার পরও বিপুল সংখ্যক বাহিনী নামিয়ে বাচকায় অভিযান চালিয়েছিল পুলিস। কিন্তু, বিশেষ ফল মেলেনি।তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত মালাকার বলেন, বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপির দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়ে আছে। পুলিস তাদের ধরতে পারছে না। ওদের ভয়ে আমাদের অনেক নেতা-কর্মী দুই-আড়াই বছর ঘরছাড়া। বিজেপির ময়না উত্তর মণ্ডল সভাপতি দেবদাস মাইতি বলেন, বাকচায় বিজেপি ছাড়া অন্য কেউ নেই। তাই পুলিস ওখানে গিয়ে শাসক দলকে সুবিধা করে দিতে পারবে না।
No comments